দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের দন্ডপ্রাপ্ত পুরান ঢাকার সংসদ সদস্য হাজী সেলিম কারাগারে এক রাত কাটিয়ে পরদিন সকালেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া ক্ষমতাসীন দলের এই আইনপ্রণেতাকে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়া হয়
বলে জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ জানান। বর্তমানে হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের একজন চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি আছেন আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উপদেষ্টামন্ডলীর এই সদস্য।
কী ধরনের শারীরিক সমস্যা নিয়ে হাজী সেলিম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন জানতে চাইলে জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, 'উনার তো বহুবিধ সমস্যা, আর আদালতই চিকিৎসার বিষয়ে জেলকোড অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলছে।'
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম খান বলেন, হাজী সেলিম কার্ডিওলজি বিভাগের একজন চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি হয়েছেন, তিনি কেবিনে আছেন।
হাজী সেলিমের আইনজীবী প্রাণ নাথ সোমবার দুপুরের দিকে বলেন, 'হাজী সেলিম গতকাল (রোববার) আত্মসমর্পণের পর থেকে অসুস্থবোধ করছিলেন। বিকালে কারাগারে তাকে নিয়ে যাওয়ার পরও তিনি অসুস্থবোধ করছিলেন। তাকে সুচিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা কারা কর্তৃপক্ষকে দেখানো হয়। তাই আজ (সোমবার) সকালে তাকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।'
কারাগারের জেলার মাহাবুবুল ইসলাম জানান, 'সংসদ সদস্য হাজী সেলিম কারাগারের প্রথম শ্রেণির একজন বন্দী (ডিভিশনপ্রাপ্ত আসামি)। গতকাল (রোববার) রাতে তিনি কারাগারের খাবার খেয়েছেন। খাবারের তালিকায় ছিল ভাত, মাছ ও মাংস।'
এর আগে রোববার দুপুরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ঢাকার ৭ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেছিলেন হাজী সেলিম। বিচারক শহীদুল ইসলাম তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়।
রোববার শুনানির সময় হাজী সেলিমের আইনজীবীরা তার জন্য কারাগারে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা ও উন্নতমানের চিকিৎসার আবেদন করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, ছয় বছর আগে হাজী সেলিমের হৃদ?যন্ত্রে অস্ত্রোপচারের সময় তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। তার পর থেকে তিনি বাক্?প্রতিবন্ধী। তার কথা পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় না।
শুনানি শেষে হাজী সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক।
দুদকের এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর, সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জরুরি অবস্থার মধ্যে।
২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল বিশেষ আদালত হাজী সেলিমকে দুই ধারায় মোট ১৩ বছরের কারাদন্ড দেয়। পাশাপাশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে সহযোগিতার অভিযোগে হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমকে দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় তিন বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়।
হাজী সেলিম এবং তার স্ত্রী ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি উচ্চ আদালত তাদের সাজা বাতিল করে রায় দেয়। দুদক তখন সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে।
ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল হয়ে যায়। সেইসঙ্গে হাজী সেলিমের আপিল পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।
সেই শুনানি শেষে গত বছরের ৯ মার্চ হাই কোর্ট বেঞ্চ একটি ধারায় হাজী সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল রাখে এবং অন্য ধারায় ৩ বছরের সাজা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়। সেইসঙ্গে তাকে এক মাসের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
আর আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ায় বিচারিক আদালতের রায়ে দন্ডিত হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমের আপিলটি বাতিল করা হয়।
Copyright JaiJaiDin ©2022
Design and developed by Orangebd