লিটন-মুশফিকের জোড়া সেঞ্চুরির রেকর্ডময় দিন

প্রকাশ | ২৪ মে ২০২২, ০০:০০

ম ক্রীড়া প্রতিবেদক
দিনের শুরুটা বাংলাদেশের জন্য দুঃস্বপ্ন দিয়েই হয়েছিল রীতিমতো। স্কোরবোর্ডে ২৪ রান তুলতেই ৫ উইকেট নেই। বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে ছিল খাদের কিনারে, চোখরাঙানি দিচ্ছিল লজ্জার সব রেকর্ড। তবে শেষমেশ সে লজ্জার মুখে বাংলাদেশকে পড়তে হয়নি মুশফিকুর রহিম আর লিটন দাসের কল্যাণে। দু'জন মিলে ভেঙেছেন ৬৩ বছরের পুরনো রেকর্ড, অপরাজিত আছেন এখনো। তাতেই লজ্জার চোখরাঙানি এড়িয়ে বাংলাদেশ ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনটা শেষ করল দারুণভাবে। দিন শেষে ড্রেসিংরুমের চিত্র দেখে বোঝার উপায় নেই সকালে সেখানে 'শশ্মান' তৈরি হয়েছিল। সাকিব আল হাসান যখন মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ছিলেন, তখন মলিন মুখে অনেকেই রেকর্ড বই ঘাঁটাঘাঁটি করছিলেন। টেস্ট সর্বনিম্ন রানের রেকর্ডটা কত? নিদেনপক্ষে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন রান তো দেখতেই হয়। দিন শেষে রেকর্ড বই ঠিকই উলটপালট হয়েছে, তবে তার সবকিছুই গেছে পাল্টে। মুখের চওড়া হাসিতে সর্বোচ্চ জুটি কিংবা রানের রেকর্ড খুঁজেছেন তারা। সোমবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ঢাকা টেস্টে প্রথম দিন শেষে ৫ উইকেটে বাংলাদেশের রান ২৭৭। মুশফিকের রান অপরাজিত ১১৫, লিটনের ১৩৫। প্রথমবার ষষ্ঠ উইকেটে দুইশ রান ছোঁয়া এই জুটি করেছে ২৫৩ রান। তিন ব্যাটসম্যান তামিম, জয় ও সাকিব ফেরেন রানের খাতা খোলার আগে। মুমিনুল, শান্ত দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। বাংলাদেশের নায়ক এদিন লিটন কুমার দাস ও মুশফিকুর রহিম। দুইজনের পরিচয়ই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার হিসেবে। মুশফিকের কাছ থেকেই জাতীয় দলের গস্নাভসের দায়িত্বটা পেয়েছেন লিটন। এদিন এ দুই ব্যাটার গড়লেন অনন্য এক ইতিহাস। দেশের হয়ে ষষ্ঠ উইকেটে গড়লেন রেকর্ড জুটি। সকালে টস জিতেছিল বাংলাদেশই। ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে স্বাভাবিকভাবে আগে ব্যাট করাকেই পছন্দ করেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। কিন্তু সেই উইকেটে লঙ্কান দুই পেসারের দাপটে কোণঠাসা টাইগাররা। দুই পেসার কাসুন রাজিথা ও আসিথা ফার্নান্ডোর সিম মুভমেন্টেই শেষ তামিম-মুমিনুল-সাকিবদের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটাররা। পারেননি জয়-শান্তর মতো তরুণরাও। তবে টাইগারদের আশার পালে হঠাৎ হাওয়া লাগান মুশফিক ও লিটন। বাংলাদেশের ইনিংস মেরামতের কাজে নামেন। কিন্তু ইতিহাস তাদের বিপক্ষে। এমন বাজে শুরুর পর দলটি যে এর আগে ষষ্ঠ উইকেটে ২০ রানও করতে পারেনি। কিছুদিন আগে ডারবান টেস্টে ১৬ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর নাজমুল হোসেন শান্ত ও ইয়াসির আলি চৌধুরির ১০ রান। এর আগে ২০১৮ সালে অ?্যান্টিগা টেস্টে ১৮ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর নুরুল হাসান সোহানের সঙ্গে লিটনের জুটিতে এসেছিল ১৬ রান। মুশফিক ও লিটন দায়িত্ব নিয়েই খেলতে থাকেন। বাজে বল কিংবা নিজের জোনে বল না পেলে মারতে যাননি কোনো বাউন্ডারি। এক-দুই রানে রাখেন সচল রাখেন রানের চাকা। তবে জুটি শতক তোলার একটু পরপরই সুযোগ দিয়েছিলেন লিটন। আসিথা ফার্নান্ডোর বলে হুক করতে গিয়ে শর্ট লেগে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। ক্যাচ ধরতে গিয়ে বলের ফ্লাইট মিস করে সে সুযোগ হাতছাড়া করেন কুশল মেন্ডিস। এই মেন্ডিসই প্রথম সেশনের ঠিক আগে বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। শেষ ওভারে যখন পেসার রাজিথা বল করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন হঠাৎ বুক ধরে বসে পড়েন। অস্বস্তি বোধ করায় মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে এমন কিছু ঘটনায় শেষ হয়ে গেছে অনেকের ক্যারিয়ার। তবে আশার খবর প্রাথমিক চিকিৎসার পরই ফিরে এসেছেন। মেন্ডিস ফিরে আসায় লঙ্কানরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেও মাঠে তাদের অস্বস্তি বাড়াতে থাকেন লিটন ও মুশফিক। দুইজনই ফিফটি ছুঁলেন। এরপর জুটির শতক। পার হয় দ্বিশতকও। একই সঙ্গে দুই জনের সেঞ্চুরি। অস্বস্তি ক্রমেই বাড়তে থাকে লঙ্কান শিবিরে। শেষ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন ২৫৪ রানের জুটিতে দিন শেষ করেন এ দুই ব্যাটার। মুশফিক ১১৫ ও লিটন ১৩৫ রানে অপরাজিত রয়েছেন। দারুণ এ জুটিতে রেকর্ড বই থেকে সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের নাম সরিয়ে দেন লিটন। এর আগে এই মুশফিককে নিয়ে ২০০৭ সালে এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোতে ৭৮ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পর ১৯১ রানের জুটি গড়েছিলেন আশরাফুল। এতো দিন এটাই ছিল ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। দিনের শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় বলেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। কাসুন রাজিথার ভেতরে ঢোকা বল আলসে ভঙিতে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান মাহমুদুল হাসান জয়। পরের ওভারে বিদায় নেন তামিম ইকবালও। ফার্নান্ডোর আউটসুইং ডেলিভারি ফ্লিক করতে গিয়ে আউটসাইড এজড হয়ে তামিম ক্যাচ দেন পয়েন্টে। রানখরায় থাকা বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হকও হতাশ করেছেন। আসিথার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ব্যক্তিগত ৯ রানে। আর রাজিথার ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড হন নাজমুল হোসেন শান্ত। সাকিব আরেকটি ভেতরে ঢোকা বলে হয়ে যান এলবিডবিস্নউ। ফলে ২৪ রানে ৫ উইকেট ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় টাইগারদের ব্যাটিং লাইনআপ। সংক্ষিপ্ত স্কোর : বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৮৫ ওভারে ২৭৭/৫ (জয় ০, তামিম ০, শান্ত ৮, মুমিনুল ৯, মুশফিক ১১৫*, সাকিব ০, লিটন ১৩৫*; রাজিথা ৩/৪৩, আসিথা ২/৮০, জয়াবিক্রমা ০/৮১, রমেশ ০/৪১, ধনাঞ্জয়া ০/১৫, করুনারত্নে ০/৮)।