শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
মাঙ্কিপক্স সতর্কতা

বিজ্ঞপ্তিতেই দায়মুক্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর!

শুধু স্ক্রিনিং ও স্ক্যান করে মাঙ্কিপক্স নির্ণয় করা সম্ভব না এটির কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি নেই
লাইজুল ইসলাম
  ২৬ মে ২০২২, ০০:০০
আপডেট  : ২৬ মে ২০২২, ০৯:১৯

ধীরে ধীরে মাঙ্কিপক্স বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়াচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে মাঙ্কিপক্স ধরা পড়ে ৭ মে। এরপর গত কয়েকদিনে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইসরাইলেও ছড়িয়েছে এই রোগটি। বাংলাদেশে যাতে কোনোভাবেই এটি আসতে না পারে সেজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশের আন্তর্জাতিক আগমনের এয়ারপোর্ট ও স্থল বন্দরগুলোতে সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সবাইকে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি স্ক্রিনিং জোরদার করার কথাও বলা হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকার সিভিল সার্জনদেরও সতর্কাবস্তায় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা সিডিসির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা দেওয়ার মাধ্যমেই শেষ হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা সিডিসির কার্যক্রম। রোগটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ভীতি সঞ্চার হয়েছে তা নিয়ে শাখাটি কোনো ধরনের কার্যক্রম হাতে নেয়নি। উল্টো অধিদপ্তরের এই শাখাটির পরিচালক গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন। তিনি কারও সঙ্গেই এ বিষয়ে কথা বলতে চাইছেন না। এমনকি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও মাঙ্কিপক্স নিয়ে লুকোচুরি খেলছে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এয়ারপোর্ট বা বিভিন্ন বন্দরগুলোতে তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ এখনো হয়নি। শুধু মুখে মুখে বলা আছে তাপমাত্রা বেশি হলে তাকে হাসপাতালে পাঠাতে হবে। কিন্তু তাপমাত্রা অনেক সময় এমনিতেই বেশি থাকে, তাহলে কি তাকেও হাসপাতালে পাঠাতে হবে এমন প্রশ্নের উত্তর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কিছু জানাতে পারেনি। শুধু স্ক্রিনিং ও স্ক্যানার দিয়েই মাঙ্কিপক্স ঠেকাতে কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিডিসির আওতায় থাকায় এয়ারপোর্ট স্বাস্থ্য বিভাগ। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ক্রিনিং ও স্ক্যানার দিয়ে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত করা সম্ভব না। সূত্র বলছে, যেসব দেশে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়েছে সেসব দেশ থেকে বাংলাদেশে আসতে হলে হেলথ ডিক্লেরেশন দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশের আন্তর্জাতিক কোনো ফ্লাইটে এই ডিক্লেরেশন ব্যবস্থা চালু করা হয়নি। আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে এটা শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে সুত্রটি। এ বিষয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) একটি বৈঠক হবে বলে জানা গেছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ডা. মাহমুদা ফেরদৌসি যায়যায়দিনকে বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা সতর্ক রয়েছে। প্রত্যেকটি যাত্রীর শরীরের ট্যাম্পারেচার মাপা হচ্ছে। স্ক্রিনিং ও স্ক্যানিং করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি মেশিন চালু রাখা হচ্ছে। কোনো ব্যক্তিকে সন্দেহ হলে আমরা আলাদাভাবে জিজ্ঞাসা করছি। স্ক্রিনিং করছি। কিন্তু এই স্ক্রিনিং বা স্ক্যান করে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দিহান তিনি। বিমান বন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা কাউকে শনাক্ত করতে পারিনি। তবে সংক্রমিত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। তাদের স্ক্রিনিং ও স্ক্যানিং করা হচ্ছে। এটা ছাড়া এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো প্রযুক্তি নেই। আক্রান্ত হওয়ার পরপরই রোগীর শরীর গরম থাকে না। এমন লোকগুলো দেশে ঢুকতেও পারে জানিয়ে তিনি বলেন, 'এতে আমাদের কেনো পুরো বিশ্বের কারোরই কিছু করার নেই। তাই হেল্‌থ ডিক্লেরেশন খুবই জরুরি।' ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, মাঙ্কিপক্স হলে হাতে ও মুখে এর দাগ দেখা যাবে। এটা বেশি এক্সপোজ হয় হাতে, মুখে। আগে থেকে এই রোগ সম্পর্কে বোঝা সম্ভব না। কোনো ব্যক্তি আক্রান্তের দুই সপ্তাহ পর বুঝতে পারে সে আক্রান্ত। কারণ প্রথম সপ্তাহে কোনো ধরনের সিমট্রম থাকে না। দ্বিতীয় সপ্তাহে শরীর গরম হয়। এই রোগ শনাক্তের জন্য পিসিআর টেস্ট করা যেতে পারে। করোনার মতোই সোয়াপ নিয়ে টেস্ট করলে রোগটি ধরা পড়ে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এয়ারপোর্ট বা স্থলবন্দরগুলোতে যে স্ক্রিনিং ও স্ক্যানিং চলছে তাতে কোনো রোগী শনাক্ত করা সম্ভব না। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তি প্রথম সপ্তাহে নিজে বুঝতে পারেন না তিনি আক্রান্ত। শরীরে কোনো ধরনের সিমট্রমও থাকে না। তাই স্ক্রিনিং থাকা সত্ত্বেও দেশে মাঙ্কিপক্স ঢুকতে পারে। এই রোগে সর্বোচ্চ মৃতু্য হতে পারে ১০ শতাংশ। যেহেতু এর সক্ষমতা কম তাই মৃতু্যর হারও সারা বিশ্বেই কম। বিরল এই বসন্ত রোগ মাঙ্কিপক্সের ভাইরাসের মিউটেশন ক্ষমতা কম হওয়ায় এটি ততটা প্রাণঘাতী নয়। ১৯৮০ সালের দিকে বাংলাদেশের যারা গুটি বসন্তের টিকা নিয়েছেন তাদের ৮০ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত নাও হতে পারেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আলমগীর হোসেন বলেন, দেশে ১৯৮০ সালের পরে গুটি বসন্তের টিকা আর কেউ নেয়নি। যাদের বয়স এখন ৪০ বা ৪২ তারা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু এই বয়সের বেশি যারা তারা কিন্তু টিকা নিয়েছিলেন। তাদের আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ কম। এই রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। রোগটির চিকিৎসায় একটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ও টিকা আমেরিকায় বহুদিন আগেই অনুমোদন পায়। কিন্তু রোগী না থাকায় এই ওষুধ উৎপাদন করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, আফ্রিকাতে এত অল্প মানুষের এই রোগটি হয়েছে যে আমেরিকায় এই ওষুধ আর উৎপাদন করা হয়নি। যদি রোগীর সংখ্যা আরও বাড়ে তাহলে হয়তো ভ্যাকসিন বের হবে। অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধও বাজারে স্বাভাবিকভাবে পাওয়া যাবে। এই রোগটি সমকামীদের মধ্যে বেশি ছড়ায়। তবে কেন এত বেশি ছড়ায় তা এখনো গবেষণা করা হয়নি। রোগটির কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনো পাওয়া যায়নি। তবে সিম্পটম দেখে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে