৩০ ডিসেম্বর সরকার হেরে যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ: কামাল

প্রকাশ | ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০ | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০৪

যাযাদি রিপোটর্
সোমবার প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ মানবাধিকার পযের্বক্ষক পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন Ñযাযাদি

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীষর্ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বতর্মান সরকারের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে আসছে। তাদের হাতে আর মাত্র ২০ দিন সময় আছে। এখনো সময় আছে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে, এর মধ্যে কিছু ভালো, প্রশংসনীয় কাজ করে যান, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নিশ্চিত করুন। তিনি বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বরের নিবার্চনে আপনারা তো ইনশাআল্লাহ হেরে যাচ্ছেন। এরপর জনগণ আপনাদের কীভাবে দেখবে সেই কথাটাও একটু ভাবুন। আপনাদের নেতাকমীের্দর জনগণকে মোবারকবাদ দেয়ার সুযোগ করে দিন। ৩১ তারিখ যাতে আমরাও আপনাদের মোবারকবাদ জানাতে পারি সেই সুযোগ করে দিন।’ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার পযের্বক্ষক পরিষদ’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ড. কামাল হোসেন এ সময় সরকার এবং নিবার্চন কমিশনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘৫ জানুয়ারির মতো ভোট এ দেশে আর হতে দেয়া হবে না বলেই আমরা এবারের নিবার্চনে অংশ নিচ্ছি। এই নিবার্চনে শেষ মুহূতর্ পযর্ন্ত আমরা মাঠে থাকব। ভোটে কারচুপির চেষ্টা হলে ১৮ কোটি মানুষকে নিয়ে রূখে দঁাড়াব’। মানুষ ভোট দিতে পারবে আশা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই শীষর্ নেতা বলেন, ‘মানুষ ভোট দিতে না পারলে স্বাধীনতা থাকবে না। আমরা সবাই ভোট দেব’। তিনি এ সময় সাধারণ ভোটারদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ‘রাস্তাঘাট, পাড়া-মহল্লায় নেমে যান। ভোট চাওয়া অপরাধ নয়। সবাই ঘর থেকে বের হয়ে পরিবতের্নর পক্ষে জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চান। বাধা দিলে রুখে দাড়ান।’ ড. কামাল হোসেন নিবার্চনের সময় মাঠে থাকবেন মন্তব্য করে বলেন, ‘আমি তো আছিই। কথা বলছি, জনমত গঠন করছি, সমথর্ন সৃষ্টি করছি। এই ৮০ বছর বয়সে এর চেয়ে আর কি করার আছে?’ এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, যারা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছে, লোপাট করে নিয়েছে, ব্যাংক খালি করে দিয়েছে- তাদের বিষয়ে এনবিআরের কোনো মাথাব্যথা নেই। এনবিআর তার আয়-ব্যায়ের হিসাব খতিয়ে দেখছে বলে দাবি করছে- এর জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা যা করতে পারে করুক।’ তিনি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বিচারবহিভূর্ত হত্যার পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ‘বিনা বিচারে হত্যাকাÐ ভয়াবহভাবে বেড়েছে। গত সাত বছরে পঁাচ গুণ হত্যাকাÐ বেড়েছে। ২০১১ সালে ছিল ৬০ জন, ২০১২ সালে ৫০ জন, ২০১৩ সালে ৪০ জন। আর ২০১৮ সালে তা বেড়ে ৩২১ জন হয়েছে। ডেইলি স্টারে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। এটা মহামারি। এটা মহারোগ। এটি কীভাবে হয়েছে? কীভাবে সম্ভব? শাসনব্যবস্থার রুগ্ণ অবস্থার কারণে এটি হয়েছে। দেশে গণতন্ত্রহীনতার কারণে এটি ঘটেছে। বিনা বিচারে মানুষ হত্যার জন্য সরকারের বিচার হবে।’ ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘এভাবে মানুষ বিচারহীনতায় মরতে পারে না। এটি বন্ধ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের সব উচ্চস্তরের ব্যক্তিদের নিয়ে তদন্ত করতে হবে। এটি বন্ধের পদক্ষেপ নিতে হবে। এর কারণগুলো বের করে প্রতিকার কীভাবে করা যায় তা করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার নিশ্চিত করা সরকার ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব-কতর্ব্য। ৪৭ বছর পরও অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এটা দেখে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারছি না।’ প্রবীণ এই আইনজীবী সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বিনা বিচারে হত্যাকাÐের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে আবেদন করছি। আপনারা সব ক্ষমতা রাখেন। এটি কেন হলো তা বের করুন। আপনারা না পারলে আমাদের বলুন, আমরা সহযোগিতা করতে এক পায়ে দঁাড়িয়ে আছি। যে কোনো সরকারের এক নম্বর এজেন্ডা হওয়া উচিত বিনা বিচারে হত্যা বন্ধ করা।’ সরকারকে উদ্দেশ করে ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুযোগ কাজে লাগান। আপনাদের তো আয়ু শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর ২০ দিন আছে। এই ২০ দিনের মধ্যে সময়কে কাজে লাগান। আপনারা যদি কাজ করার সুযোগ চান, আমাদের বলেন, আমরা সাহায্য করব। কিছু একটি করুন। আল্লাহর ওয়াস্তে এই সুযোগগুলো নেন। আর কয়েক দিন পর তো সাধারণ মানুষ হয়ে যাবেন। আপনাদের যেন ৩১ তারিখ মোবারকবাদ দিতে পারি সে সুযোগ দেন। কিছু ভালো কাজ করে না গেলে পরে আফসোস করবেন এই বলে যে সুযোগ পেয়েও ভালো কাজটি করলাম না।’ তিনি ৫৮টি নিউজ পোটার্ল বন্ধ করে দেয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘জনগণকে এ বিষয়ে সতকর্ হতে হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হলে ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। নাগরিক হিসেবে নীরব হয়ে গেলে চলবে না। নিজের বাড়ি দখল করে নেয়ার সময়ও চুপ থাকলে হবে না। প্রতিবাদ করতে হবে। ১৮ কোটি দেশের মালিক যদি এক হয়ে যাই, যদি এদের অধের্কও দেশের মালিকানা ভোগ করার জন্য পাড়ায়-মহল্লায় এক হয়ে যাই, তারা কিছুই করতে পারবে না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণকে প্রহরীর ভূমিকায় থাকতে হবে’। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নুরুল হুদা মিলু চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন- সাবেক সচিব মোফাজ্জল করিম, শেখ শহীদুল ইসলাম, ড. মো. শাহজাহান, ড. ফরিদউদ্দিন ফরিদ, অধ্যাপক ড. অমিত আজাদ, আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, প্রকৌশলী মমিনুল ইসলাম প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন তালুকদার মনিরুজ্জামান।