২০ দলীয় জোটে মনোনয়নবঞ্চিত যারা

প্রকাশ | ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল নিদর্লীয় সরকারের অধীনে নিবার্চনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা চারদলীয় জোটের কলেবর বাড়িয়ে ১৮ দলীয় জোট গঠন করা হয়। পরে আরও দুটি দল যোগ দিলে জোটের নাম হয় ২০ দলীয় জোট। সম্প্রতি এই জোটে যোগ দেয় আরও তিনটি দল। ফলে জোটে দলের সংখ্যা এখন ২৩টি। জোটের নেত্রী খালেদা জিয়া বতর্মানে কারাগারে। এদিকে গত ১৩ অক্টোবর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফ্রন্টের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি। অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটেরও সবচেয়ে বড় দল বিএনপি। একদিকে ঐক্যফ্রন্টের চারদল অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটের ২২ দল। দুই জোটে দলের সংখ্যা ২৬টি। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয়ার পরই শুরু হয় আসন ভাগাভাগি, যা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন ৯ ডিসেম্বর পযর্ন্ত চলে। যেহেতু দুটি জোটেরই বড় দল বিএনপি সেহেতু আসন ভাগাভাগিতে সবচেয়ে বেশি চাপ ছিল তাদের ওপর। একদিকে নিজ দলের শত শত প্রাথীর্র চাপ অন্যদিকে ২৬টি দলের আবদার রক্ষা নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় বিএনপি নেতাদের। এরই মধ্যে আসন ভাগাভাগি শেষ করেছে বিএনপি। তবে শেষ পযর্ন্ত ৬ বছর ধরে জোটে থাকা সব দলের ভাগ্যে আসন মেলেনি। জোটে থাকা (বিএনপি বাদে) ২২টি দলের মধ্যে ১০টি দল আসন পেলেও বঞ্চিত হয়েছে ১২টি দল। বঞ্চিত সেই দলগুলো হলোÑ দেশের সবচেয়ে পুরনো দল মুসলিম লীগ, যার নেতৃত্বে আছেন এএইচএম কামরুজ্জামান খান। আসন পাননি একসময়ের তুখোড় নেতা প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পাটির্ (জাগপা)। সম্প্রতি এই দলের সভাপতি শফিউল আলম প্রধান ও পরে তার স্ত্রী রেহানা প্রধানের মৃত্যুর পর দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন তাদের মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান। পঞ্চগড়-২ আসনটি তাসমিয়া প্রধানকে দেয়ার কথা থাকলেও চূড়ান্ত মনোনয়নে তার নাম নেই। আসন পায়নি ইসলামী ঐক্যজোট। চারদলীয় জোট যখন গঠিত হয় তখন প্রয়াত আল্লামা আজিজুল হকের নেতৃত্বের পরে ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের নেতৃত্বে ছিলেন মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী। পরে নেজামী ও তার সঙ্গীরা ২০ দলীয় জোট ছেড়ে চলে যান। ভগ্নাংশ নিয়ে নেতৃত্বে আসেন সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব। তিনি মনোনয়ন চাইলেও পাননি। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পাটির্ (এনডিপি) এবার জোটের কাছে কোনো আসন পায়নি। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন খন্দকার গোলাম মোতুর্জা। কিছুদিন আগে তারা ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যোগ দেন যুক্তফ্রন্টে। কিন্তু ভগ্নাংশ থেকে যায় ২০ দলের সঙ্গে। যারা থেকে যান তারাও এবার কোনো আসন পাননি। আসন বঞ্চিত অপর দল ইসলামিক পাটির্র নেতৃত্বে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল মোবিন। তার মৃত্যুর পর অন্যরা এই দলের নেতৃত্বে আছেন। বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ ভাসানী, ডেমোক্রেটিক লীগ, পিপলস লীগ, সাম্যবাদী দল, ইসলামিক পাটির্, জাতীয় দল ও বাংলাদেশ মাইনরিটি পাটির্ও আসন পায়নি। ২০ দলীয় শরিকদের মধ্যে যেসব দল আসন পেয়েছে সেগুলো হলো- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ২২টি, এলডিপি ৫, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ৪, জাতীয় পাটির্ (জাফর) ২, খেলাফত মজলিস ২, বিজেপি ১, এনপিপি ১, বাংলাদেশ কল্যাণ পাটির্ ১, লেবার পাটির্ ১, পিপলস পাটির্ অব বাংলাদেশ ১। এর পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ১৯টি আসন দেয়া হয়। এর মধ্যে গণফোরাম ৭, জেএসডি ৪, নাগরিক ঐক্য ৪ ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে চারটি আসন দেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে জাগপা সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান বলেন, তারা ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে আছেন। তবে তাদের দলের নিবন্ধন টিকিয়ে রাখার জন্য তাকে নিবার্চন করতেই হবে। সে জন্য পঞ্চগড়-২ আসনে উন্মুক্ত হিসেবে তিনি হুক্কা মাকার্য় নিবার্চন করবেন। তিনি বলেন, পঞ্চগড়-২ আসনটি তাকে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূতের্ বিএনপি মহাসচিব জানিয়েছেন তার পক্ষে আসনটি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ডেমোক্রেটিক লীগের মহাসচিব সাইফুদ্দিন মনি বলেন, ৮২ থেকে ৯০ পযর্ন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলন করেছি। সে সময় ৬ বার জেল খেটেছেন। ২০১২ সালে ১৮ দলীয় জোট গঠনের শুরু থেকে জোটে ছিলেন। দুবার জেলে গিয়েছেন। কিন্তু তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তিনি যে আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন (ময়মনসিংহ-৮) সেখানে গণফোরামের এইচএম খালেকুজ্জামানকে মনোয়ন দেয়া হয়েছে। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে নিবার্চন করে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছিলেন। তিনি বলেন, তাদের বঞ্চিত করা হলেও তারা ২০ দলীয় জোটে আছেন এবং থাকবেন। বাংলাদেশ ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএন শাওন সাদেকী বলেন, তিনি সিলেট-৬ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু জোট থেকে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় গেলে সুবিধা দেয়া হবে। সেজন্য তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। তারা জোটে আছেন, জোটের জন্য কাজ করবেন। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পাটির্র চেয়ারম্যান আলহাজ কারী আবু তাহের বলেন, তিনি পঁাচটি আসন চেয়েছিলেন। তারা তাকে চঁাদপুর-৪ আসনটি দিতে চেয়েছিল। সেজন্য তিনি নেননি। আসন না দিলেও তারা জোটে আছেন।