তৃতীয় দিনেও হামলা-মামলা ভাঙচুর

প্রকাশ | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
পাবনার সঁাথিয়ায় বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ কমীের্দর হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ঐক্যফ্রন্টের প্রাথীর্ আবু সাইয়িদের গাড়ি Ñযাযাদি
প্রচারের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, মামলা, ভাঙচুর, গ্রেপ্তার ও বাধার ঘটনায় প্রচÐ চাপে পড়েছেন বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট নেতাকমীর্রা। গতকাল সকালে পাবনার সঁাথিয়ায় ঐক্যফ্রন্টের প্রাথীর্ আবু সাইয়িদের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। ঝালকাঠিতে বিএনপি প্রাথীর্ জীবা আমিন খান ও নারায়ণগঞ্জে বিএনপি প্রাথীর্ নজরুল ইসলাম আজাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। নেত্রকোনায় ঐক্যফ্রন্টের প্রাথীর্ ড. মো. রফিকুল ইসলাম হিলালীর বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। পাবনা প্রতিনিধি জানান, পাবনার সঁাথিয়ায় ঐক্যফ্রন্টের প্রাথীর্ আবু সাইয়িদের গাড়ি বহরে আওয়ামী লীগ কমীের্দর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সঁাথিয়া বাজারে ওই হামলা হয় বলে থানায় অভিযোগ করেছেন আবু সাইয়িদ। আওয়ামী লীগ ছেড়ে গণফোরামে যোগ দেয়া পাবনা-১ আসনের প্রাথীর্ আবু সাইয়িদ ওই হামলার জন্য আওয়ামী লীগ প্রাথীর্ শামসুল হক টুকুর লোকজনকে দায়ী করেছেন। তবে সঁাথিয়া থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আবু সাইয়িদ নিজে থানায় এসে হামলার অভিযোগ করে গেছেন। কারা ওই হামলা চালিয়েছে সে বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত নয়। আবু সাইয়িদ বলেন, ‘আমি নিবার্চনী প্রচারে সঁাথিয়া বাজারে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলার সময় শামসুল হক টুকুর লোকজন আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। পরে আমি দ্রæত সেখান থেকে সঁাথিয়া থানায় গিয়ে আশ্রয় নিই।’ এ ঘটনায় তিনি নিজেসহ দলের অন্তত ১০ নেতাকমীর্ আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন সাইয়িদ। তিনি বলেন, আমাদের একজন মোটরসাইকেল চালককে খুঁজে পাচ্ছি না। তিনটি মোটরসাইকেল তারা নিয়ে গেছে। এমন সন্ত্রাসী কমর্কাÐের মধ্যে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নিবার্চন সম্ভব নয় মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের এ সাবেক নেতা বলেন, আমার এলাকায় গণজোয়ার দেখে টুকুর লোকজনের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাই তারা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী হামলা করেছে। নিবার্চন কমিশনে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করবেন বলেও জানান তিনি। বিএনপির প্রাথীর্ জীবা আমিনার গাড়ি ভাঙচুর ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, ঝালকাঠি-২ (সদর-নলছিটি) আসনে বিএনপির প্রাথীর্ জীবা আমিনা খানের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার সকালে বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের কলেজ মোড় সংলগ্ন চেহেরা মঞ্জিলের সামনে ও জেলা প্রশাসক কাযার্লয়ের সামনে পৃথকভাবে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠি বিএনপির অস্থায়ী নিবার্চনী অফিসে বেলা ১১টার দিকে নিবার্চনী প্রস্তুতি সভা আহŸান করে জেলা বিএনপি। সকাল সোয়া ১০টার দিকে জীবা আমিনা খান নবগ্রাম নিজ বাড়ি থেকে চেহেরা মঞ্জিলে আসেন। সামনে গাড়ি পাকির্ং করে ভেতরে তারা বৈঠকে বসেন। এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেলে একদল যুবক এসে অতকির্তভাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে গাড়ির গøাস ভাঙচুর করে। পরে জেলা রিটানির্ং অফিসারের কাছে ভাঙচুরের অভিযোগ দিয়ে ফেরার সময় পুনরায় হামলা চালানো হয়। এতে গাজী খায়রুজ্জামান শিপু, গাজী খালেদুজ্জামান টিটু, গাজী এনামুল হকসহ পঁাচজন আহত হয়েছেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর অভিযোগ করে বলেন, পূবর্পরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগের কয়েকজন এসে অতকির্ত হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায়। পরে আমরা জেলা প্রশাসকের কাযার্লয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক দেলোয়ার হোসেন মাতুব্বরের কাছে ভাঙচুরের বিষয়ে অভিযোগ দিয়ে ফেরার সময় যুবলীগের বেশকিছু নেতাকমীর্ পুনরায় হামলা করে। দুই দফা হামলায় একটি প্যারাডো গাড়ি, একটি হাইয়েস গাড়ি ও একটি নোহা গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে পঁাচজন নেতাকমীর্ আহত হয়েছেন। না’গঞ্জে বিএনপি প্রাথীর্ আজাদের গাড়িবহরে হামলা নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রাথীর্ কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তজাির্তকবিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে রোডের পুরিন্দা এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ হামলায় নজরুল ইসলাম আজাদের তিনজন কমীর্ আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- রুহুল আমিন, মোশারফ ও কাদির। এ সময় তাদের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদশীর্রা জানান, নজরুল ইসলাম আজাদ গাড়িবহর নিয়ে প্রচারণায় যাওয়ার পথে ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে রোডের পুরিন্দা এলাকায় রাস্তায় ড্রাম ফেলে গতিরোধ করে হামলা চালানো হয়। এ হামলার নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রাথীর্ নজরুল ইসলাম বাবুর সমথির্ত সাতগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অদুদ মাহমুদ ও তার বড় ভাই আব্দুল কাদির। তাদের সঙ্গে ৫০-৬০ নেতাকমীর্ হামলায় অংশ নেন। এর আগে বুধবার আড়াইহাজারের নারন্দি, ইলমন্দি ও থানা আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে তিন দফায় নজরুল ইসলাম আজাদের গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছিল। এ হামলায় বিএনপির ১০ নেতাকমীর্ আহত হন। কেন্দুয়ায় ঐক্যফ্রন্ট প্রাথীর্র বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনের নিবার্চনী প্রচার প্রচারণাকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রাথীর্র বাড়িতে হামলা, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় আত্মরক্ষাথের্ ২৫ রাউন্ড ফঁাকা গুলিবষের্ণর ঘটনা ঘটে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রাথীর্ ড. মো. রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন, বুধবার রাত সাড়ে ৮দিকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকমীর্রা জয় বাংলা ¯েøাগান দিয়ে তার বাড়িতে অতকির্ত হামলা চালায়। এ সময় বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এবং নিবার্চনী প্রচার-প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত দুইটি প্রাইভেটকার, বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ও একটি অটোরিকশা হামলাকারীরা ভাঙচুর করে। এ সময় আত্মরক্ষাথের্ আমি আমার লাইসেন্সকৃত শটগান দিয়ে ১৩ রাউন্ড এবং রিভলবার থেকে ১২ রাউন্ড ফঁাকা গুলিবষর্ণ করতে বাধ্য হই। হামলায় তিন নেতাকমীর্ আহত হন। এ আসনের মহাজোট প্রাথীর্ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, আটপাড়ায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাকমীের্দর ওপর বুধবার সন্ধ্যায় বোমা হামলার প্রতিবাদে কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকমীর্রা একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিলটি হিলালীর বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপির নেতাকমীর্রা তাদের লক্ষ্য করে উস্কানিমূলক আচরণ করায় নেতাকমীর্রা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে এ ঘটনা ঘটে। নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, খবর পাওয়ার পরপরই আমি ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ সবর্দা সতকর্ অবস্থানে রয়েছে। এ ঘটনায় ৯ জন বিএনপির নেতাকমীের্ক আটক করা হয়েছে। খাগড়াছড়িতে গাড়িতে হামলা খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ি সদরের হরিণাথপাড়া এলাকায় বিএনপির প্রাথীর্ শহীদুল ইসলাম ভূইয়ার নিবার্চনী প্রচারণার গাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় হামলা চালিয়ে ৫ নেতাকমীের্ক মারধর, জিপগাড়ির কাচ ও মাইক ভাঙচুর করা হয়। খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক আবু তালেব বলেন, ‘বিএনপি প্রাথীর্র প্রচারণায় হামলার ঘটনাটি রিটানির্ং অফিসারকে জানানো হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগ প্রাথীর্র বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হলেও নিবার্চন কমিশন কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’ আওয়ামী লীগের নিবার্চনী প্রচারণা কমিটির আহ্বায়ক রণ বিক্রম ত্রিপুরা বলেন, ‘বিএনপির প্রচারণা কাজে কারা বাধা দিয়েছে, সেটি পুলিশ তদন্ত করে বের করুক। আওয়ামী লীগ হামলার সঙ্গে জড়িত নয়।’ সহকারী রিটানির্ং অফিসার মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ এলে তদন্তপূবর্ক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক আবু তালেব জানান, হামলায় জেলা ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক সুভাগ্য ত্রিপুরা, প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোহাগ, সদস্য মো. জালাল হোসেন ও মো. হৃদয় আহত হয়েছেন।