প্রভাব পড়বে জাতীয় নির্বাচনে

পদ্মা সেতুর ইস্যুতে রাজনীতিতে উত্তাপ

প্রকাশ | ৩০ জুন ২০২২, ০০:০০ | আপডেট: ৩০ জুন ২০২২, ১২:২৩

হাসান মোলস্না

উদ্বোধন হয়েছে জাতির আত্মবিশ্বাস ও গর্বের পদ্মা সেতুর। কিন্তু এ নিয়ে থেমে নেই রাজনীতি। সংসদের ভেতর-বাইরে সেতু নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ চলছেই। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও এই সেতু ইসু্যতে রাজনৈতিক দলগুলোতে ফায়দা নেওয়ার প্রতিযোগিতা থাকবে। আওয়ামী লীগের এ নিয়ে আছে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। অর্জনের বিষয়টিকে সামনে রেখে আগামী নির্বাচনে জনরায় নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা করবে ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে সেতুর বিরোধিতা না করলেও নির্মাণে অনিয়মের নানা অভিযোগ সামনে রেখে রাজনৈতিক ছক আঁকবে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বড় দুই রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও সাম্প্রতিক সময়ে তাদের বক্তব্যে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, আগামী নির্বাচনে পদ্মা সেতুকে আওয়ামী লীগে উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে সামনে আনবে। আর বিএনপি সামনে আনার চেষ্টা করবে দুর্নীতির প্রতীক হিসেবে। সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে বক্তব্য, বিবৃতির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই সেতু নির্মাণকে তাদের রাজনৈতিক সাফল্য হিসেবে তুলে ধরছে। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দেশি-বিদেশি চক্রান্তের মুখে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জে জয়লাভ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটা প্রতীক বলে তারা বিশ্বাস করেন। অন্যদিকে সংসদে দাঁড়িয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, পদ্মা সেতু এক গোল্ডেন সেতু, যার পরতে পরতে কেবল দুর্নীতি আর দুর্নীতি। বাংলাদেশ সোনার সেতু মামলা ও দুর্নীতির উদাহরণ হিসেবে থাকবে। গত ২৫ জুন উদ্বোধনের পরও বড় দুই রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিতর্ক ছিল চোখে পড়ার মতো। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় বিএনপি নেতারা খুশি হননি উলেস্নখ করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ডক্টর হাছান মাহমুদ বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনে অভিনন্দন জানাতে ব্যর্থ হওয়ার মাধ্যমে বিএনপি প্রমাণ করেছে পদ্মা সেতুর বিরুদ্ধে তারা ষড়যন্ত্র করেছিল। যারা একসময় সমালোচনা করেছিলেন, আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন এই পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে কখনো করা সম্ভব নয়, তাদের অনেকেও এখন প্রশংসা করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান অভিনন্দন জানিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বিএনপি অভিনন্দন জানাতে পারেনি। এটি করার মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেছেন, এই পদ্মা সেতু হওয়াতে সারাদেশের মানুষ উলস্নসিত, আনন্দিত হলেও বিএনপি নেতারা খুশি হননি। বিএনপি নেতারা এর জবাব দিয়েছেন বন্যার বিষয়টিকে সামনে এনে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উলস্নাহ আমান বলেন, কোটি কোটি টাকা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে ব্যয় করেছে সরকার। কিন্তু বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ায়নি। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের ভোটে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছে দলটি। এই সেতুকে কেন্দ্র করে আর্থসামজিক উন্নয়নের প্রত্যক্ষ সুবিধা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটের চিত্রে আসবে অস্বাভাবিক পরিবর্তন। যা প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সেতু তৈরিতে আওয়ামী লীগের অবদান, ষড়ন্ত্রের মোকাবিলা, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ইতিবাচক সব বিষয়ের প্রচারণা বিভিন্ন মাধ্যমে করা হবে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে সচেষ্ট হবে এমন বিবেচনায় নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। কাজ চলছে নির্বাচনের ইশহেতার প্রস্তুতেরও। নির্বাচনে জনরায় নিজেদের পক্ষে আনার অংশ হিসেবে গত ১৩ বছরে মেগা প্রকল্পগুলোর দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। এর মধ্যে পদ্মা সেতুর বিষয়টি বিএনপির কাছে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে। দলটির সিদ্ধান্ত হচ্ছে, জনগণের সামনে সরকারের প্রমাণিত ব্যর্থতা এবং অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য সামনে আনা। কীভাবে তারা উন্নয়ন করার নামে ভয়াবহ দুর্নীতি করেছে, সেটি তুলে ধরতে চায় তারা। এছাড়া যেসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে, সেগুলোর বেহাল অবস্থা জাতিকে জানানোর পরিকল্পনা আছে। পদ্মা সেতুর অনিয়মের দালিলিক প্রমাণের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের কাজও করছে দলটির এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সুবিধাজনক সময়ে সরকারের নানা দুর্নীতি, লুটপাট ও গুরুতর অনিয়মের বিষয়গুলো জাতির সমানে তুলে ধরা হবে। এ থেকে কীভাবে উত্তরণ সম্ভব, সেসব বিষয়ও তুলে ধরা হবে।