হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ৬ বছর

ফুলেল শ্রদ্ধায় নিহতদের স্মরণ

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২২, ০০:০০

ম যাযাদি রিপোর্ট
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ছয় বছর পূর্তিতে নিহতদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত -যাযাদি
রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ছয় বছর পূর্তিতে নিহতদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত,র্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটিলিয়নের র্(যাব) মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুলস্নাহ আল মামুন ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামসহ সর্বস্তরের মানুষ। শুক্রবার দুপুরে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মরণে গুলশান-১ এর পুরান থানা ভবনের সামনে স্থাপিত 'দীপ্ত শপথ' ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা। এ সময় সবাই এক মিনিট নীরবতা পালন করে নিহতদের স্মরণ করেন। তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। সকাল সাড়ে ৭টায় প্রথম শ্রদ্ধা জানান জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। এরপর ইতালির রাষ্ট্রদূত ইনরিকো নুনজিয়াতা, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস এবং ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেন, বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ দমনে যে ভূমিকা দেখিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। হলি আর্টিজানে হামলার পর যেভাবে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিবার। ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, এটা খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে আমরা খুবই ব্যথিত। বাংলাদেশের পুলিশসহ সাধারণ মানুষ এতে মারা গেছেন। আমাদের মনে রাখা উচিত ঘটনাগুলো কেন ঘটেছে। আমাদের উচিত যৌথভাবে এসব মোকাবিলা করা, যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, ছয় বছর আগের এই ঘটনায় আমাদের সাতজন নাগরিক মারা গেছেন, তারা সবাই জাইকার ঢাকা মেট্রো লাইন-১ প্রজেক্টে কাজ করতেন। তারা রিসার্সের কাজ করছিলেন। আমরা তাদের কখনও ভুলব না, ওইদিন কী ঘটেছিল তা আমরা কখনও ভুলব না। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষের্ যাব মহাপরিচালক বলেন, হলি আর্টিজানে হামলার পর কয়েকটি হামলাকারী জঙ্গিরা অনলাইনে অসৎ উদ্দেশ্যে লাইভ অনুষ্ঠান করছিল। অনুষ্ঠান বন্ধ করার পাশাপাশি লাইভ অনুষ্ঠানের অন্যান্য কলাকুশীলদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। হামলার ১২ ঘণ্টার মধ্যে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অভিযান চালানোর পরিবেশ সৃষ্টি করের্ যাব। তিনি আরও বলেন, হলি আর্টিজানে হামলার পর জঙ্গিবাদ দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় দেশে একের পর এক জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। সিলেটে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানকালের্ যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ নিহত হন। ডিএমপি কমিশনার বলেন, হলি আর্টিজানে হামলার পর দেশে জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়। একের পর এক অভিযানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় জঙ্গিদের আস্তানা। ভেঙ্গে পড়ে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সকল বাহিনী সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। জঙ্গিবাদ দমনে গঠিত পুলিশের বিশেষ বিভাগ এন্টি টেররিজম ইউনিট, ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ ও সাইবার বিভাগ সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। এসব কাজে নানাভাবে সহায়তা করছে জেলা পুলিশও। ডিএমপি কমিশনার বলেন, দেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হারকাতুল জিহাদ ও জেএমবির মাধ্যমে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছিল। ইরাকে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের তৎপরতা বাড়লে দেশেও এর প্রভাব পড়ে। ওই সময় দেশীয় জঙ্গিরা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হলি আর্টিজানে হামলা চালায়। দেশে আইএসের তৎপরতা আছে বলে নানা প্রপাগান্ডা চালানো হয়। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকেই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথা চাঁড়া দিয়ে ওঠেছে বলে অভিযোগ করা হয়। জঙ্গিবাদ দমন করতে মার্কিন সরকার সব ধরনের অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে সহায়তা করেছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার, খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জায়গাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিবাদ ব্যাপকভাবে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। ওই সময় চালানো জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানে জঙ্গিদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ভেঙ্গে পড়ে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক। তিনি আরও বলেন, সময়মতো জঙ্গিবাদ দমন করা সম্ভব হয়েছে বলেই, পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, বঙ্গবঙ্গু টানেলসহ দেশে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। কারণে হলি আর্টিজানের পর বাংলাদেশে থাকা বিদেশি ছাড়াও বিদেশিদের মধ্যে মারাত্মক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারায় বিদেশিরা আবার বাংলাদেশে এসে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছেন নিশ্চিন্তে। জঙ্গিবাদ দমন করতে না পারলে স্বাভাবিক কারণেই বিদেশিরা বাংলাদেশে আসতেন না। মেগা প্রকল্পগুলোও বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়ত। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত গুলশান থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিনের স্ত্রী রেমকিন শ্রদ্ধা জ্ঞাপন শেষে বলেন, পুলিশের চেষ্টায় দেশে জঙ্গি তৎপরতা এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। সালাউদ্দিনের পরিবার জঙ্গিমুক্ত দেশ চায়। তিনি আরও বলেন, 'মৃতু্যবার্ষিকী বলেই যে আমরা তাকে স্মরণ করছি তা না, যে দিন থেকে তিনি আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছেন, সে দিন থেকে একই রকমভাবে তাকে (সালাউদ্দিন) মিস করি। একদিন, এক ঘণ্টা কিংবা এক সেকেন্ডের জন্যও তাকে আমরা ভুলতে পারি না।' গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, ভবনটিতে এর মালিক বসবাস করছেন। তারা চান না এখানে বিশৃঙ্খলা হোক। তবু কেউ আসলেও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবেন।