জাতির বিজয় দিবস আজ

প্রকাশ | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
চারদিকে সরষে ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য। সেই ক্ষেতের মেঠো পথ ধরে হেটে যাচ্ছেন বিজয়ের লাল সবুজ পতাকা হাতে এক তরুণ। ছবিটি টাঙ্গাইল থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা
সব কটা জানালা খুলে দাও না, আমি গাইবো গাইবো বিজয়ের-ই গান/ওরা আসবে চুপি চুপি, যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ... চোখ থেকে মুছে ফেলো অশ্রæটুকু/এমন খুশির দিনে কঁাদতে নেই/হারানো স্মৃতির বেদনাতে, একাকার করে মন রাখতে নেই/ ওরা আসবে চুপি চুপি/ কেউ যেন ভুল করে গেওনাকো মন ভাঙ্গা গান ... আজ মহান বিজয় দিবস। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের নদী পেরিয়ে পরাধীনতার নাগপাশ মুক্ত হওয়ার দিন। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌযর্বীযর্ ও গৌরবময় বীরত্বের অবিস্মরণীয় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখÐের নাম জানান দেয়ার দিন। আজ লাল-সবুজের বিজয় পতাকা ওড়ানোর দিন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃতে দীঘর্ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে বিকালে রেসকোসর্ ময়দানে (বতর্মান সোহরাওয়াদীর্ উদ্যানে) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমপর্ণ করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। যে অস্ত্র দিয়ে ববর্র পাকিস্তানি বাহিনী দীঘর্ নয় মাস ত্রিশ লাখ বাঙালিকে হত্যা করে, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নেয়, একাত্তরের এই দিনে সেই অস্ত্র পায়ের কাছে নামিয়ে রেখে এক রাশ হতাশা এবং অপমানের গøানি নিয়ে লড়াকু বাঙালির কাছে নতজানু হয়ে পরাজয় স্বীকার করে। এবার বিজয়ের ৪৭তম বাষির্কী। একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কাযর্কর হয়েছে এবং হচ্ছে এই স্বস্তি নিয়ে আজ কৃতজ্ঞ জাতি সশ্রদ্ধ বেদনায় স্মরণ করছে দেশের পরাধীনতার গøানি মোচনে প্রাণ উৎসগর্ করা সূযর্ সন্তানদের। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে নামবে জনতার ঢল। শ্রদ্ধার সাথে তারা শহীদদের উদ্দেশে নিবেদন করবেন পুষ্পাঞ্জলি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সব প্রান্তের মানুষ আজ অংশ নেবে বিজয় দিবসে। বঙ্গবন্ধুর বজ্র নিনাদ ভাষণ আর মুক্তিযুদ্ধের সময়ের জাগরণী গানে মুখরিত হবে বাংলার আকাশ-বাতাস। মহান বিজয় দিবস ঊপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের নেতা রওশন এরশাদ দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিজয় দিবস সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে। রাতে গুরুত্বপূণর্ ভবন ও স্থাপনায় করা হবে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোতে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সংবাদপত্র বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে, বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার। তবে একাদশ সংসদ নিবার্চন থাকায় এবার বিজয় দিবসে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। যদিও বিজয় দিবসের অন্য সব কমর্সূচি যথারীতিই পালিত হবে। ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার থাকবে। ১৯৭১ সালের ৭ মাচর্ ঐতিহাসিক সোহরাওয়াদীর্ উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘যার যা কিছু আছে’ তা নিয়েই স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। পরে ২৫ মাচর্ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে বীর বিক্রমে ঝঁাপিয়ে পড়ে। এই মুক্তিযুদ্ধে পাশ্বর্বতীর্ দেশ ভারত, ভুটান, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সাহায্য-সহযোগিতা করে। অবশেষে বাঙালি দীঘর্ নয় মাস যুদ্ধ করে বুকের উষ্ণ রক্তে রাঙিয়ে রাত্রীর বৃন্ত থেকে ছিনিয়ে আনে ফুটন্ত সকাল। বিজয়ের এই ৪৭ বছরে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েছে জাতি। কখনো সামনে এগিয়েছে, আবার পিছিয়ে গেছে নানা রাজনৈতিক টানাপড়েনে। তবুও হতোদ্যম হয়নি জাতি। বিলম্বে হলেও শুরু হয়েছে ইতিহাসের দায়-মোচনের প্রচেষ্টা। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে; চলছে একাত্তরের মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এর মধ্যে অনেকের বিচারের রায় কাযর্কর হয়েছে। এ ছাড়াও হার না মানা বাঙালি অথৈর্নতিক-সামাজিক এবং ক্রীড়াতেও উড়াচ্ছে বিজয় নিশান। যথাযোগ্য মযার্দায় বিজয় দিবস পালন করার লক্ষ্যে কমর্সূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। ১৬ ডিসেম্বর থেকে মাসব্যাপী এ কমর্সূচি চলবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জোটের পক্ষ থেকে দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় ‘বিজয় মঞ্চ’ স্থাপন করে নানা কমর্সূচি পালন করার কমর্সূচি নেয়া হয়েছে। এই বিজয় মঞ্চে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক আলোচনা সভা, বিজয় র‌্যালি, আলোকচিত্র, ডকুমেন্টারি, চলচ্চিত্র প্রদশর্ন, মুক্তিযুদ্ধের গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিলবোডর্, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারসহ বণার্ঢ্য কমর্সূচি পালন করা হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিজয় মঞ্চের সকল কমর্সূচি সফল করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কমর্সূচি ঘোষণা করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জানান, ১৬ ডিসেম্বর প্রথম প্রহরে বিজয় দিবস উপলক্ষে নয়াপল্টনের বিএনপি কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলা ৩টায় কাযার্লয়ের সামনে থেকে বণার্ঢ্য বিজয় র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ ডিসেম্বর ভোরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ফুল দেবেন তারা। এরপর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুলের মালা দান ও ফাতেহা পাঠ করা হবে। বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কাযার্লয়, নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কাযার্লয় এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কাযার্লয় আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। পাশাপাশি দেশব্যাপী দলীয় কাযার্লয়গুলোতেও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া বিজয় দিবস উপলক্ষে সকাল ১০টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ের সামনে থেকে বণার্ঢ্য বিজয় র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে।