রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি

কামাল হোসেনের দুঃখ প্রকাশ

প্রকাশ | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জামায়াত নিয়ে প্রশ্ন করায় শুক্রবার সাংবাদিকের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীষর্ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। এ ঘটনার পর এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি। বিবৃতিতে ড. কামাল হোসেন বলেন, তিনি প্রতি বছরের মতো বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মিরপুরের স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলেন। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে তার অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধুও ছিলেন। ১৯৭২-৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর নিদের্শনায় স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রণীত আইনগুলোর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারা তার কাছে সব সময়ই বিশেষ আবেগ ও অনুভূতির বিষয়। ড. কামাল বলেন, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর স্মৃতিসৌধের বেদিতে দঁাড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘কত মেধাবী সন্তান হারিয়ে তবে স্বাধীনতা পেয়েছি।’ সে সময় হঠাৎ করেই তার কাছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতের অবস্থান নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। ড. কামাল বলেন, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সবিনয়ে জানান, বুদ্ধিজীবী দিবস গভীর অনুভূতির বিষয়। তিনি এই দিনে এখানে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না। সাংবাদিক আবারও একই প্রশ্ন করলে তিনি একই মনোভাব প্রকাশ করেন। ড. কামাল বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শুক্রবারের পরিস্থিতির বণর্না দিতে গিয়ে বলেন, ‘ওই মনোভাব প্রকাশ করার পর ‘তৃতীয়বার ভিড়ের মধ্য থেকে অনবরত দুই থেকে তিনবার ‘জামায়াত জামায়াত’ শব্দ শুনতে পাই। তখন আমার খুবই খারাপ লেগেছিল এবং আমি প্রশ্নকতাের্ক থামানোর চেষ্টা করেছিলাম। আমার বক্তব্য কোনোভাবে কাউকে আহত বা বিব্রত করে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’ ড. কামাল বলেন, ‘আমি সারা জীবন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে শামিল থেকেছি।’ তিনি বলেন, ‘আশা করি, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা তাদের জীবনের বিনিময়ে যে ধমির্নরপেক্ষ বাংলাদেশ নিমাের্ণর স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা আমরা সবাই মিলে গড়তে সক্ষম হব।’ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ড. কামাল যখন বের হচ্ছিলেন, তখন সাংবাদিকেরা তার কাছে বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রতিক্রিয়া জানতে চান। ড. কামাল বলেন, ‘শোষণমুক্ত সুন্দর সমাজের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে যারা কাজ করছে, লোভ-লালসা নিয়ে লুটপাট করছে, তাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করবই।’ এরপর ড. কামাল বের হতে যাচ্ছিলেন। এ সময় টেলিভিশনের একাধিক সাংবাদিক স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে দৃষ্টি আকষর্ণ করেন। জবাবে ড. কামাল বলেন, শহীদ মিনারে (স্মৃতিসৌধে) এসব বিষয়ে কোনো কথা তিনি বলবেন না। এরপরও সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করতে থাকেন। একজন বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। তারপরও তারা ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে নিবার্চন করছে। এ সময় রেগে গিয়ে ড. কামাল বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না। বেহুদা কথা বলো। কত পয়সা পেয়েছ এই প্রশ্নগুলো করতে? কার কাছ থেকে পয়সা পেয়েছ? তোমার নাম কী? জেনে রাখব তোমাকে। চিনে রাখব। পয়সা পেয়ে শহীদ মিনারকে অশ্রদ্ধা করো তোমরা। আশ্চযর্!’ এ পযাের্য় আরেকজন সাংবাদিক আবার প্রশ্ন করেন। তখন ড. কামাল ধমক দিয়ে বলেন, ‘শহীদদের কথা চিন্তা করো। হে হে হে হে করছ! শহীদদের কথা চিন্তা করো। চুপ করো। চুপ করো। খামোশ।’ রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চান কামাল হোসেন এদিকে নিবার্চনী প্রচার চলার মধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জোটের শীষের্নতা কামাল হোসেন ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর দেখা করতে চান জানিয়ে তার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে। বিএনপির প্যাডে লেখা বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার স্বাক্ষরিত চিঠিটি ১৩ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে পাঠানো হয় বলে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কমর্কতার্ সায়রুল কবির খান শনিবার জানিয়েছেন। চিঠিতে আলোচনার বিষয়বস্তু বলা হয়নি। তবে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের এই সময়ে বিরোধী নেতাকমীের্দর ওপর হামলা, মামলা ও হয়রানির বিষয়ে ইসিতে অভিযোগ করেও ফল না পাওয়ায় রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতিকার চাইবেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। চিঠির বিষয়ে বঙ্গভবনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। নিবার্চনের তফসিল ঘোষণার আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারা সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন, কিন্তু কোনো সাড়া পাননি। আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি প্রাথীর্ হয়ে বিএনপির বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইয়ে নামা কামাল হোসেন এবার বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে নিজের পুরনো দল আওয়ামী লীগের বিপক্ষে নিবার্চন করছেন। নিবার্চনের প্রচারে সমান সুযোগ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করে আসছেন গণফোরাম সভাপতি কামাল। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গ ধানের শীষ নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের নেতারাও নিবার্চন করায় তা নিয়ে কামালের সমালোচনায় মুখর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।