আগাম ঈদযাত্রা শুরু

এবারের ঈদযাত্রায় নৌ-সড়ক ও রেল, কোনো পথেই বড় ধরনের ভোগান্তির আশঙ্কা নেই। বরং স্বপ্নের পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২এবারের ঈদযাত্রায় নৌ-সড়ক ও রেল, কোনো পথেই বড় ধরনের ভোগান্তির আশঙ্কা নেই। বরং স্বপ্নের পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ অনেকটা স্বল্প সময়েই নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছে যাবেন১ জেলার মানুষ অনেকটা স্বল্প সময়েই নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছে যাবেন

প্রকাশ | ০৫ জুলাই ২০২২, ০০:০০

ম যাযাদি রিপোর্ট
ঈদ আসতে এখনো পাঁচ দিন বাকি, ছুটিও শুরু হয়নি। তবে ভোগান্তি এড়াতে আগভাগেই ছুটছে মানুষ শেকড়ের টানে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার যেসব মানুষের কর্মস্থল থেকে ছুটি নেওয়ার কোনো ঝক্কি-ঝামেলা নেই, তারা কিছুটা আগভাগেই গ্রামের পথে পা বাড়িয়েছেন। আবার কেউ কেউ কিছুটা বাড়তি সময় প্রিয়জনের সান্নিধ্যে কাটাতে কর্মস্থল থেকে দুই-তিন দিনের ছুটি নিয়েই ঈদযাত্রায় শামিল হয়েছেন। পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের ঈদযাত্রায় নৌ-সড়ক ও রেল, কোনো পথেই বড় ধরনের ভোগান্তির আশঙ্কা নেই। বরং স্বপ্নের পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ অনেকটা স্বল্প সময়েই নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছে যাবেন। দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের একটি বড় অংশ সড়কপথে বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা করায় নৌপথের ভিড়ও অনেকটাই কম হবে। ফলে এই পথেও ঝক্কি-ঝামেলা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি কমবে। এবারের ঈদযাত্রায় রেলপথে সিডিউল বিড়ম্বনার আশঙ্কা কম বলে দাবি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে ভোগান্তি এড়াতে আগভাগেই ঘরমুখো হওয়া মানুষরা এ নিয়ে বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের আশঙ্কা, উচ্চ লাফে করোনা বাড়লেও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সামান্যও বাড়েনি। তাই ঈদের ছুটি শুরুর পর লাখো মানুষের ঢলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্য সচেতনভাবে বাড়ি ফেরা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। এ ছাড়া সড়কপথে হাজার হাজার যানবাহন একযোগে পালস্না দিয়ে রাস্তায় নামায় সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি ভয়াবহ যানজট সৃষ্টিরও আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-আরিচা রুটে যানজট বাড়বে বলে ভয় পাচ্ছেন তারা। পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে স্বল্প সময় পৌঁছানোর পালস্নায় বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনে ব্যাপক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। ঢাকা থেকে সন্তানদের নিয়ে খুলনার পথে রওনা দিয়েছেন গৃহবধূ নুসরাত শামীমা। সোহাগ পরিবহণ বাসের এই যাত্রী বলেন, 'ঈদের ছুটির সময় যাত্রীদের চাপ বেশি থাকে। যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। তাই সন্তানদের নিয়ে আগেই বাড়ি যাচ্ছি।' \হঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর তার চিকিৎসক স্বামী ও চাকরিজীবী ছোট ভাই বাড়ি যাবেন বলে জানান তিনি। যশোরগামী হানিফ পরিবহণের যাত্রী আব্দুস সাত্তার জানান, তিনি ঢাকা থেকে ছেলের বউ আর নাতিদের নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। রেডিমেড গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ছেলে ঈদের দিন ভোরে গ্রামে রওনা দেবে। বেনাপোলগামী যাত্রী সোহানা পারভীন জানান, তিনি স্বামীর সঙ্গে মালিবাগে থাকেন। তাদের বনানীতে ছোট একটি বুটিক শপ রয়েছে। ঈদের আগে এই কয়েক দিন ক্রেতার ভিড় থাকবে। তাই তিনি ঈদযাত্রার ভোগান্তি এড়াতে তিন সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে বাড়িমুখো হয়েছেন। ঈদের দিন তার স্বামী গ্রামে যাবেন। ঢাকার একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা মেহজাবিন সুলতানা জানান, খুলনার দাকোপে গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা আর ছোট দুই ভাই আছে। স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ায় তিনি আগভাগেই বাড়ি যাচ্ছেন। যানজটের আশঙ্কায় ভোরের গাড়ির টিকিট কেটেছেন। কিন্তু শহর থেকে গাড়ি বের হতেই প্রায় দেড় ঘণ্টা কেটে গেছে। এদিকে ঈদযাত্রার দুর্ভোগ এড়াতে আগভাগেই গ্রামমুখো হয়েও তেমন লাভ হয়নি সিলেটের বাসিন্দাদের। কেননা, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রতিদিনই থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এতে দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে মহাসড়কের রূপগঞ্জ অংশ পাড়ি দিতে হচ্ছে গণপরিবহণের যাত্রীদের। সিলেটগামী যাত্রী প্রকৌশলী শাহ আলম জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় যাত্রা শুরুর পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কয়েক জায়গায় যানজটের ভোগান্তিতে পড়েছেন। এর মধ্যে আধুরিয়া এলাকা থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে প্রায় ঘণ্টা-দেড়েক সময় নষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে উত্তরবঙ্গের ঘরে ফেরা মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে সিরাজগঞ্জের নবনির্মিত নলকা সেতুর ঢাকামুখী লেনটি খুলে দেওয়া হয়েছে। সোমবার সকালে জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় লেনটি। এর ফলে উত্তরের ২২ জেলার পুরনো নলকা সেতুর ঢাকাগামী যাত্রায় যে ভোগান্তি হতো, তা কেটে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জাহিদুর রহমান জানান, মহাসড়কের ছোট ছোট গর্ত এবং ভাঙা জায়গাগুলো মেরামত করা হচ্ছে। পাশাপাশি হাটিকুমরুল গোল চত্বর এলাকায় কিছু নতুন গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, যা আগামীকালের মধ্যে মেরামত সম্পন্ন হবে। এর সঙ্গে হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে সংস্কারের কোনো চাহিদা করা হলে সেটাও করে দেওয়া হচ্ছে। ঈদ-পরবর্তী যাত্রা পর্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সেগুলো করে দেওয়া হবে। হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লুৎফর রহমান বলেন, নলকা নবনির্মিত সেতুর ঢাকাগামী লেনটিও খুলে দেওয়ায় ঈদুল ফিতরের মতো এবারও হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকাসহ হাইওয়ে থানার আওতাভুক্ত রাস্তায় কোনো যানজট হবে না বলে আমরা মনে করছি। এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথের যাত্রায় এবার কোনো ধরনের ভোগান্তি নেই বললেই চলে। সাধারণত ঈদের সপ্তাহখানেক আগে থেকেই সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল লোকে লোকারণ্য হলেও এবারের দৃশ্য একেবারেই ভিন্ন। সোমবার সন্ধ্যার পর ঢাকা সদরঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশে একে একে ছেড়ে গেছে অন্তত ৬০টি লঞ্চ। স্বাভাবিকভাবে দুপুর থেকেই লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীর আনাগোনা শুরু হতে থাকে। কিন্তু সোমবার দেখা গেছে, বিকাল গড়িয়ে গেলেও ঘাটে যাত্রী আগের চেয়ে কম। লঞ্চ মালিকরা জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি পথের যাত্রীদের অনেকেই সড়কপথে গন্তব্যে যাবে। তাই এই নৌপথের লঞ্চে যাত্রী তুলনামূলক কম। তবে ভোলা, চাঁদপুর, লালমোহন, বসিরহাট, কালাইয়া ও রাঙ্গাবালীগামী যাত্রীর চাপ রয়েছে। পটুয়াখালীগামী যাত্রী নূরে আলম জানান, প্রতিবছর ঈদের ৭-৮ দিন আগে থেকেই লঞ্চে ভিড় বাড়তে থাকে। যা ঈদের ২-১ দিন আগে ভয়ংকর রূপ নেয়। অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে নৌ-দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। অথচ এবার একেবারেই উল্টো চিত্র। প্রতিবছর ঈদের আগে কেবিনের টিকিট 'সোনার হরিণ' হয়ে উঠলেও এবার তা কেনার যাত্রী নেই। ঈদের দুই-এক দিন আগেও যাত্রীর সংখ্যা খুব বেশি বাড়বে না বলে মনে করেন তিনি। লঞ্চ মালিক সমিতি সূত্র বলছে, ঢাকা থেকে প্রতিদিন ৪২টি নৌরুটে লঞ্চ চলাচল করে। স্বাভাবিক সময় গড়ে প্রতিদিন ৭৫-৮০টি লঞ্চে যাত্রী পরিবহণ করা হয়। এতে প্রতিদিন গড়ে ৩০-৩৫ হাজার যাত্রী পরিবহণ করা হয়ে থাকে। যদিও বর্তমানে এই সংখ্যা কমে এসেছে পাঁচ থেকে সাত হাজারে। গত ঈদে এমন সময় গড়ে প্রতিদিন ১২০টি লঞ্চ চলাচল করেছে। এতে অন্তত দেড় লাখ যাত্রী প্রতিদিন ঢাকার সদরঘাট ছাড়ে। তবে এবার যাত্রীর সংখ্যা সে তুলনায় অর্ধেকেরও অনেক কম। এদিকে ঈদের ছুটি শুরুর পর রেলপথের যাত্রায় ভোগান্তি বাড়ার আশঙ্কায় যারা আগভাগেই ঘরমুখো হয়েছেন, তাদেরও অনেকটা হতাশ হতে হয়েছে। সোমবার রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি বগিতেই গাদাগাদি করা ভিড়। আসনবিহীন যাত্রীদের চাপে সিটে বসা যাত্রীরা অনেকটা 'চিড়ে চ্যাপ্টা' হয়ে যাচ্ছেন। ট্রেনের পাদানিতেও বিপুলসংখ্যক যাত্রী দাঁড়িয়ে আছে। বগি বিকল হওয়া ও সিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। সোমবার রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন থেকে পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস যান্ত্রিক ত্রম্নটির কারণে একটি বগি রেখেই স্টেশন ছেড়েছে। এ সময় একতা এক্সপ্রেসের 'ট' নম্বর বগির জন্য ১০৫ জন যাত্রী টিকিট কেটেছিলেন। তাদের অধিকাংশই এ ঘটনায় ট্রেনটি মিস করেছেন। স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ট্রেনটি স্টেশন ছাড়ে। ট্রেনটি ছাড়ার সময় ছিল সকাল ১০টা ১০ মিনিট। ট্রেনটির 'ট' নম্বর বগিতে আগে থেকেই ত্রম্নটি ছিল, তাই সেটিকে বাতিল করা হয় এবং মূল ট্রেনের শেষে রাখা হয়। ফলে অনেক যাত্রী বগি বাতিলের তথ্য না জেনে সেখানে উঠে বসেন। কর্তৃপক্ষ বলছে, বগি বাতিলের বিষয়টি সকাল ৯টার সময় সবাইকে জানানো হয়েছে। আগে যারা বিষয়টি জেনেছেন, তারা অনেকে অন্য বগিতে উঠেছেন। তবে বগিতে থাকা প্রায় ১০০ যাত্রী বিষয়টি জানতেন না বলে অভিযোগ করেছেন। একতা এক্সপ্রেসের 'ট' বগির যাত্রী শহিদ উলস্ন্যাহ জানান, 'আমাদের স্টেশনে পৌঁছতে কিছুটা দেরি হয়। যার ফলে আমরা এসে দেখি, ৭ নম্বর পস্ন্যাটফর্মে ট্রেনটি দাঁড়িয়ে আছে। পরে আমাদের আসন নিশ্চিত করে ট্রেনে বসি। হঠাৎ জানতে পারি, আমাদের বগি রেখেই একতা এক্সপ্রেস ট্রেন চলে গেছে। এ সময় বগিতে ১০০ যাত্রী ছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানতাম না।' কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, সকাল ৯টায় জানানো হয়েছিল যাত্রীদের। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আমাদের কাছে অতিরিক্ত বগি ছিল না।