অভিযোগ বাক্স ফের চালুর নির্দেশনা

শিক্ষা খাতে হয়রানি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ

প্রকাশ | ০৫ জুলাই ২০২২, ০০:০০

ম যাযাদি রিপোর্ট
নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষা খাতের সব দপ্তর-অধিদপ্তর-সংস্থায় অভিযোগ বাক্স স্থাপন এবং সেটি নিয়মিত খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ ব্যাপারে একটি পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এ নিয়ে শিক্ষা সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীকের সভাপতিত্বে সব দপ্তর-সংস্থা-অধিদপ্তর প্রধানদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন। এ বৈঠকে ওই নির্দেশ দেওয়া হয়। দুদক শিক্ষা সেক্টরে দুর্নীতি-অনিয়মের জন্য যে দপ্তর ও সংস্থাগুলোকে চিহ্নিত করেছে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান হচ্ছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষক বদলি ও পদায়ন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শূন্য পদে এমপিওভুক্তিকরণ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি স্কুল-কলেজের অনুমোদন-পাঠদান-স্বীকৃতি প্রদানসহ আনুষঙ্গিক কর্মকান্ড। সেই সঙ্গে শিক্ষার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও প্রকল্পের গাড়ি বরাদ্দ ও এর ব্যবহার, কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ, প্রশিক্ষণের নামে অর্থ ব্যয়। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা, নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, নোট-গাইড এবং কোচিং বাণিজ্য। শিক্ষা খাতের দুর্নীতির অন্যতম প্রধান উৎস বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতি হয়। জাল সনদে এমপিওভুক্তি, বোর্ড পরীক্ষার ফরম পূরণে কোচিং ফি আদায়, ভবন সংস্কার, শিক্ষাসামগ্রী কেনাকাটা, উন্নয়নসহ বিভিন্ন মনগড়া খাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হয়। নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বোর্ড পরীক্ষায় সুযোগ দেওয়ার বিনিময়েও আদায় করা হয় অর্থ। একইভাবে ভর্তির সময় নানা খাতে অর্থ আদায় এবং আদায়কৃত অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। দুদক দুর্নীতির জায়গাগুলো শুধু চিহ্নিত করেই দায় শেষ করেনি। এ খাতগুলোর দুর্নীতির ধরনও বলে দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের পূর্তকাজ এবং নির্মাণকাজ ইইডিতে দুর্নীতির উৎস হিসেবে চিহ্নিত দিক হচ্ছে-অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রাক্কলন, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি, যেমন- টেন্ডারের তথ্য ফাঁস, সমঝোতার নামে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে সাপোর্টিং বা এজেন্ট ঠিকাদার নিয়োগ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, টেন্ডারের শর্তানুসারে কাজ বুঝে না নেওয়া, মেরামত বা সংস্কার কাজের নামে ভুয়া বিল-ভাউচার করে অর্থ আত্মসাৎ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্তৃক বেনামে বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে ঠিকাদারি কাজ পরিচালনা করা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) দুর্নীতি অনিয়ম সম্পর্কে দুদক বলেছে, এনসিটিবিতে দুর্নীতির মূল জায়গা পাঠ্যবই ও কাগজ কেনার দরপত্র প্রক্রিয়া এবং বিভিন্ন কাজের কমিটি গঠনে কর্মকর্তাদের কেউ কেউ স্বনামে ও বেনামে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের মালিক বনে গেছেন। নতুন পাঠ্যবই যখন প্রবর্তন করা হয়, তখন এক শ্রেণির কর্মকর্তা বা কর্মচারী তা আগেভাগেই প্রকাশকদের কাছে সরবরাহ করেন- যাতে তারা মূল বই শিক্ষার্থীর হাতে যাওয়ার আগে বাজারে গাইড ছেড়ে দিতে পারেন। প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে দুদক বলেছে, শিক্ষা বোর্ড, বিজি প্রেস, ট্রেজারি এবং পরীক্ষা কেন্দ্র প্রশ্ন ফাঁসের প্রধানতম উৎস। এসব প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে কোচিং সেন্টার, প্রতারক শিক্ষক ও অপরাধী চক্র যুক্ত থাকতে পারে। দুদক ওই খাতগুলোর অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে এবং এসব সমস্যার প্রতিকারে ৩৯টি সুপারিশ এবং পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। দুদকের পর্যবেক্ষণ নিয়ে গত ২৬ মে শিক্ষা সচিবের সঙ্গে সংস্থা বিভাগীয় প্রধানদের বৈঠক হয়। এ বৈঠকে বিভাগীয় সংস্থাপ্রধানদের সেবা প্রার্থীদের হয়রানি ও দুর্নীতি প্রতিরোধে অভিযোগ বাক্সগুলো আবার চালু এবং নিয়মিত খুলে প্রতিকারের নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা যায়যায়দিনকে বলেন, দুদকের প্রতিটি অভিযোগ ও পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ ও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।