আড়াইশ' ছাড়িয়েছে কাঁচা মরিচ

চালের বাজারে ফের অস্থিরতা!

প্রকাশ | ০৬ আগস্ট ২০২২, ০০:০০ | আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২২, ০৯:২০

ম রেজা মাহমুদ

কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না দেশের চালের বাজার। বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানিসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন তৎপরতার নূ্যনতম প্রভাব নেই জীবন ধারণের জন্য অতি প্রয়োজনীয় এই মৌলিক পণ্যটির বাজার দরে। এদিকে ডলারের উচ্চমূল্যে লাগামহীন আমদানিকৃত পণ্যের বাজার। এমন পরিস্থিতিতে চালের বাজারে ফের অস্থিরতার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে কোনো পণ্যের দাম না কমলে বাড়তির দিকে রয়েছে কাঁচা মরিচসহ ব্রয়লার মুরগি, ডিম, দেশি ও আমদানিকৃত রসুনসহ বেশ কিছু পণ্যে। টানা কয়েক সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় এ সপ্তাহে আড়াইশ' ছাড়িয়েছে কাঁচা মরিচের কেজি। সকালে কোনো কোনো বাজারে যা বিক্রি হয়েছে ২৮০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে বিদ্যমান চালের চড়া বাজারে আরেক দফা দাম বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন রাজধানীর চাল ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, ডলারের ক্রমাগত মূল্য বৃদ্ধিতে বাড়তি দামে চাল আমদানি করতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। ফলে বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়ছে না। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই মিলাররা ফের বাড়িয়েছে দেশীয় চালের দাম। গত কয়েক দিনে চিকন চালের ৫০ কেজির বস্তায় ২৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বোরো মৌসুমে লক্ষ্য অনুযায়ী ধান-চাল সংগ্রহ করতে পারেনি সরকার। মিলারদের জন্য চাল সংগ্রহে ভাটা পড়ে। পরবর্তী সময়ে বেসরকারিভাবে পর্যায়ক্রমে ১০ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানিকারকরা বরাদ্দ পাওয়ার অর্ধেকও আমদানি করেননি। সরকার নির্ধারিত সময়ে চাল আমদানি না হওয়ায় সময়ও বাড়িয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ ২১ আগস্ট পর্যন্ত চাল আমদানির এলসি খোলার সময় বাড়ায় মন্ত্রণালয়। বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমতি দিলেও ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এতেও পড়েছে ভাটা। এসব কারণে বাজারে চালের ঘাটতি তৈরির শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা। আর সরকারের এ দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে এরই মধ্যে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজির ছক কষছেন। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ- এমনটাই বলা হয়। অথচ হুট করে পাইকারি পর্যায়ে চালের দাম ২ থেকে ৪ টাকা বেড়ে গেছে। 'গরিবের চাল' বলে খ্যাত মোটা চালের দাম পাইকারি পর্যায়ে ২ টাকা বাড়িয়ে প্রতি কেজি স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪৯ টাকায়। আর একটু ভালো মানের অর্থাৎ মধ্যম মানের চাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫৫ টাকা পর্যন্ত। আড়তদাররা বলছেন, মোটা চালের সরবরাহ আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। যার কারণে মিলাররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। মিরপুর ১-এর চালের রহমান রাইস এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার আসাদুলস্নাহ বলেন, আমদানিকৃত চালের দাম বর্তমান বাজার দর থেকে প্রতি কেজিতে ২-৩ টাকা বাড়তি হওয়ায় মিলাররা দেশি চালের দাম ইতোমধ্যে বাড়িয়ে দিয়েছেন। এছাড়াও বৈরি আবহাওয়া ও খরায় দেশের আমনের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় ধান সংগ্রহও বাড়িয়েছেন মিল মালিকরা। ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে ধানের দাম। চলতি সপ্তাহেই এর প্রভাব পড়তে পারে খুচরা বাজারে। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে আগের দরে চাল বিক্রি হলেও পাইকারিতে প্রতি কেজি চিকন চালে ২-৩ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। কারওয়ান বাজারে পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, নাজিরশাইল কাটারি গত সপ্তাহে মিল থেকে প্রতি কেজি ৭৮-৮০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছে ৮৩ টাকা দরে। বাড়তি দামের ফলে চাহিদার তুলনায় কম চাল সংগ্রহ করেছেন বেশিরভাগ পাইকারি ব্যবসায়ী। আজকালের মধ্যে দাম না কমলে এ সপ্তাহের মধ্যেই খুচরা পর্যায়ে ফের বাড়তে পারে চালের দাম। এদিকে রাজধানীর খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, এমনিতেই চালের বাড়তি দামের কারণের বিক্রি কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বেশি দাম দিয়ে চাল কিনলে ক্রেতা পাওয়া যাবে না। এদিন বেশ কয়েকটি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে বেশিরভাগ দোকানি গত দুই দিন ধরে বাড়তি দামের কারণে চাল কেনা থেকে বিরত রয়েছেন। মজুত শেষ হয়ে গেলে বাড়তি দামেই চাল কিনতে ও বিক্রি করতে হবে বলেও জানান তারা। এদিকে, দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বমুখী সময়ে চালের দাম বাড়ায় বিপাকে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ পড়বে চরম সংকটে। এমনিতেই সংসার চালাতে অনেকে খরচের খাতা কাটছাঁট করছেন। এবার চালের দাম বাড়লে আরও বেশি সমস্যায় পড়বেন তারা। কাঁচা বাজারের চিত্র : চাল ছাড়াও ডলারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব অব্যাহত আছে আমদানিকৃত সব ধরনের ভোগ্যপণ্যে। সপ্তাহ ব্যবধানে বড় রসুনের কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা দরে। দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমেরও। এদিন ১০-১৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১৬০-১৬৫ টাকা দরে এবং ১০ টাকা বেড়ে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩০-১৩৫ টাকা দরে। এদিকে পাইকারি বাজারে গত দুই দিন ধরে পেঁয়াজ ও আলুর দাম কমতির দিকে থাকলেও খুচরা বাজারে তা আগের দরেই বিক্রি করতে দেখা গেছে। পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০-৩২ টাকার মধ্যে বিক্রি হলে খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে আগের ৪৫ টাকা দরে। অন্যদিকে আলুর কেজি পাইকারিতে ১২-১৪ টাকা দরে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকা দরে। তবে স্থিতিশীল রয়েছে মাছের বাজার। এদিন আকার ভেদে রুই মাছের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০০-৩৫০ টাকা। কাতল বিক্রি হয়েছে ২৭০-৩২০ টাকা। পাবদা ও শিং মাছের কেজি বিক্রি হয়েছ ৪০০ টাকা। বোয়াল ও আইর মাছের কেজি বিক্রি হয়েছে ৬০০-৬৫০ টাকা, হরিনা ও বাগদা চিংড়ি বিক্রি হয়েছে ৬৫০ টাকা এবং গলদা চিংড়ি বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকার ওপরে। এছাড়াও অপরিবর্তিত রয়েছে ইলিশের দাম।