খাদ্য চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে বিশ্ব

বৈরী আবহাওয়ায় চালের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা

প্রকাশ | ০৬ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

ম যাযাদি ডেস্ক
ভারতসহ এশিয়ার শীর্ষ চাল উৎপাদনকারী দেশগুলো আশঙ্কা করছে, এ বছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে চালের উৎপাদন কমে যেতে পারে। আর এ পরিস্থিতি খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের মূল্য বেড়ে আকাশচুম্বী। তবে এ সময় বিশ্ববাজারে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের গম আসতে শুরু করায় কিছুটা স্বস্তির আভাস মিললেও নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে ভারতে। দেশটিতে ধানের আবাদ কমায় চালের বাজারে নতুন সংকট তৈরির ঝুঁকি তৈরি করেছে, সম্প্রতি বস্নুমবার্গের এক প্রতিবেদনে আশঙ্কাজনক এই তথ্য উঠে এসেছে। এমনিতে করোনা মহামারির কারণে সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অন্য খাদ্যশস্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি পৌঁছে গেছে রেকর্ডের খুব কাছাকাছি। তবে গত দুই বছর বাম্পার ফলন এবং রপ্তানিকারকদের বিশাল মজুদের কারণে চালের বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে মোট উৎপাদিত চালের ৯০ শতাংশই আসে এশিয়ার দেশগুলো থেকে। কিন্তু এসব দেশে এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা। এতে নতুন করে খাদ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে বিশ্ব। এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ব্যাংকের কৃষি অর্থনীতিবিদ ফিন জিবেল মনে করেন, প্রধান রপ্তানিকারক দেশগুলোয় উৎপাদন কমার সঙ্গে চালের দাম ঊর্ধ্বমুর্খ হওয়ার বিষয়টি সরাসরি যুক্ত। তার মতে, উন্নয়নশীল বিশ্বে অনেক দেশেই খাবারের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। চালের দাম বাড়লে সেটা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলবে। এদিকে, উৎপাদনের শঙ্কার মধ্যেই ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের মূল্য বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, ওডেশাস ও ছত্তিশগরে গত দুই সপ্তাহের চেয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মূল্য বেড়েছে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। এ অবস্থায় দেশটি রপ্তানি মূল্যও বাড়াতে পারে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় চালের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্পঞ্জ এন্টারপ্রাইজেজ প্রাইভেটের পরিচালক মুকেশ জাইন। তিনি বলেন, 'আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ রপ্তানি মূল্য বেড়ে ৪০০ ডলার হতে পারে। বর্তমানে ফ্রি অন বোর্ড ভিত্তিতে রপ্তানি মূল্য ৩৬৫ ডলার।' এতে আমদানিকারক বাংলাদেশ, চীন, নেপাল এবং মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশ সংকটের মুখোমুখি হতে পারে। প্রসঙ্গত, ভারতের বেশ কিছু অঞ্চলে বৃষ্টি না হওয়ায় চলতি মৌসুমে ধান চাষের পরিমাণ কমেছে ১৩ শতাংশ। এতে তিন বছরে সর্বনিম্ন উৎপাদন হতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশ। ভারতের মোট চাল উৎপাদনের এক-চতুর্থাংশ আসে এই দুটি রাজ্য থেকে। ভারতের চালের উৎপাদন হুমকিতে থাকার বিষয়টি এমন একসময় সামনে এলো যখন দেশটিতে খাদ্যের মূল্যের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে ব্যাপকভাবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের বন্যা এবং ভিয়েতনামের ধান-চালের মানের অবনতির ফলেও সার্বিকভাবে উৎপাদন কমার আশঙ্কা রয়েছে। জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফএও) অর্থনীতিবিদ শার্লি মুস্তাফা বলেন, এ বছরের শুরুতে সামগ্রিকভাবে খাদ্যপণ্যের দাম রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছে গেলেও চাল এখনো সহজলভ্য রয়েছে। তার মতে, আমরা এখন ভারত, চীন ও বাংলাদেশসহ কয়েকটি প্রধান ধান উৎপাদনকারী দেশে আবহাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অবস্থার উন্নতি না হলে উৎপাদন কমে যেতে পারে। উলেস্নখ্য, ইউক্রেন সংকটের কারণে বিশ্বজুড়ে যখন গম নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে, তখন এশিয়ার উৎপাদনের ওপর ভর করে চালের বাজার ছিল স্থিতিশীল, যা বিশ্বের অনেক দেশকেই খাদ্যসংকট থেকে রক্ষা করে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে চালের উৎপাদন কমে আসা নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করাবে বিশ্বকে।