ওয়ানডে সিরিজ

জিম্বাবুয়ের কাছে মান খোয়ালো বাংলাদেশ

প্রকাশ | ০৬ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

ম ক্রীড়া প্রতিবেদক
'ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে বিপজ্জনক দল'- জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে প্রতিপক্ষ নিয়ে এভাবেই বলেছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। জিম্বাবুয়েও কথাটা সত্য প্রমাণ করেছে। সে জন্য ঘরের মাঠে বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে জিম্বাবুইয়ানরা। গত বছর ঘরের মাঠে বাংলাদেশের কাছে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রতিটিতে হারলেও এবার আর একই ভুল করেনি স্বাগতিকরা। সিকান্দার রাজার রাজত্বে ৯ বছর পর বাংলাদেশকে ওয়ানডে ফরম্যাটে হারাল জিম্বাবুয়ে। হারারেতে শুক্রবার বাংলাদেশ জিতলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা ২০ জয়ের আনন্দে ভাসত। তবে ইনোসেন্ট কাইয়া এবং সিকান্দার রাজা ১৯-এ থামাল বাংলাদেশকে। ৩০৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়েছিল জিম্বাবুয়ে। ৬২ রানে হারিয়েছিল ৩ উইকেট। পরে ইনোসেন্ট কাইয়া ও সিকান্দার রাজা শতাধিক রানের জুটিতে পাল্টা লড়াই শানিয়ে জিম্বাবুয়েকে ১০ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। বাংলাদেশ হেরে যায় ৫ উইকেটে। ইনোসেন্ট কায়া ১১টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে ১১০ রানে সাজ ঘরে ফেরেন। অপর ব্যাটসম্যান সিকান্দার রাজা অপরাজিত ১৩৫ রান করেন। ম্যাচসেরাও নির্বাচিত হয়েছেন সিকান্দার রাজা। চার ব্যাটারের হাফ সেঞ্চুরিতে ৫০ ওভারে ২ উইকেটে ৩০৩ রান করেছে সফরকারী বাংলাদেশ। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ৮৮ বলে ৬২ ও লিটন দাস ৮৯ বলে ৮১ রান করেন। আহত অবসর হয়ে মাঠ ছাড়েন লিটন। এরপর এনামুল হক ৬২ বলে ৭৩ এবং মুশফিকুর রহিম ৪৯ বলে অপরাজিত ৫২ রান করেন। ১২ বলে অপরাজিত ২০ রান করেন মাহমুদউলস্নাহ। বল হাতে জিম্বাবুয়ের ভিক্টোর নিয়াউচি-সিকান্দার রাজা ১টি করে উইকেট নেন। এই নিয়ে চতুর্থবার জিম্বাবুয়ের মাঠে ওয়ানডেতে ৩০০ রানের গন্ডি পার করল লাল-সবুজের দল। শুক্রবারের সংগ্রহটি স্বাগতিকের বিপক্ষে তাদের মাটিতে তৃতীয় সর্বাধিক দলীয় রান বাংলাদেশের। ২০০৯ সালে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয়টিতে বুলাওয়েতে প্রথমবার এই কীর্তি গড়ে বাংলাদেশ। করেছিল ৮ উইকেটে ৩২০ রান। জিম্বাবুয়েতে এখন অবধি সেটাই টাইগারদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ম্যাচটি তারা জিতেছিল ৪৯ রানে। একই সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে জিম্বাবুয়ের দেওয়া ৩১৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করে টাইগাররা ৪ উইকেটে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলেছিল। গত বছর হারারেতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৩০২ রান করেছিল বাংলাদেশ, পেয়েছিল ৫ উইকেটের জয়। এ দিন তামিম-লিটনের ওপেনিং জুটিতে বড় সংগ্রহের দিকে ছুটতে থাকে সফরকারীরা। চিরাচরিত ছন্দেই নিজেদের মেলে ধরে। তামিম এবং লিটন গড়ে ফেলেন ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি। ছুঁয়েছেন দারুণ এক রেকর্ড। বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিংয়ে সবচেয়ে বেশি চারবার শতরানের জুটির রেকর্ড এতদিন ছিল কেবল তামিম ও সৌম্য সরকারের দখলে। সেটি ধরে ফেলেছেন তামিম ও লিটন। তাদের পাশেও এখন উদ্বোধনীতে চারটি শতরান জুটির রেকর্ড। আরেকটি রেকর্ড থেকে অবশ্য তারা দুই ধাপ দূরে। ওয়ানডেতে এখন অবধি যেকোনো উইকেটে টাইগারদের হয়ে সবচেয়ে বেশি শতরানের জুটি গড়েছেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। দুই সিনিয়র ছয়বার গড়েছেন এমন কীর্তি। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে এ দিন ওয়ানডেতে ৮ হাজার রানের ক্লাবে ঢুকে পড়েছেন তামিম। প্রয়োজন ছিল ৫৭ রান। টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক এ দিন ক্যারিয়ারের ৫৪তম ফিফটি তুলেছেন। পথে ছুঁয়েছেন কীর্তিটি। ২০০৭-২২ সালের মাঝে খেলে মাইলফলক ছুঁলেন তারকা ওপেনার। ক্যারিয়ারে ২২৯ ম্যাচে ২২৭ ইনিংসে ৮,০০৫ রান এখন তামিমের। পেয়েছেন ১৪টি শতক ও ৫৪টি অর্ধশতক। মাইলফলক ছুঁতে তামিম খেলেছেন ৮৭৭টি চারের মার, আছে ১০০টি ছক্কা। ১১৯ রানের ওপেনিং জুটির পর আউট হন তামিম। ৮৮ বলে ৮ চারে ৬২ রানে সিকান্দার রাজার বলে কাইয়ার হাতে ধরা পড়েন। দ্বিতীয় উইকেটে দীর্ঘদিন পর ওয়ানডেতে সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে ৫২ রানের জুটি গড়েন লিটন। সেঞ্চুরির কাছাকাছি এসে তিনি দুর্ভাগ্যের শিকার হন। পায়ে টান লাগায় স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয়েছে ওপেনিং তারকাকে। ৮৯ বলে ৯ চার ও এক ছক্কায় ৮১ রানে থেকে লিটন গেছেন সাজঘরে। পরে আর নামতে পারেননি। সিকান্দার রাজার করা ৩৪তম ওভারের প্রথম বলে এক রান নিতে পারলেও খোঁড়াতে থাকেন লিটন। পায়ে ব্যথা অনুভব করে শুয়ে পড়েন টাইগার তারকা। ফিজিও এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে স্ট্রেচারে মাঠ ছাড়তে হয়। তামিম যখন সাবলীল ব্যাটিংয়ে রানের গতি বাড়ানোর কাজ করছিলেন, ধীরস্থির থেকে আরেক প্রান্ত সামলেছেন লিটন। ৬২ রান করে তামিম আউট হলে খোলস ছাড়তে থাকেন। ফিফটি তুলে নেওয়ার পর আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাট করে সেঞ্চুরির আশাই জাগিয়েছিলেন। কোমরের পেশিতে টান লাগায় লিটনের আগে মাঠ ছেড়েছেন জিম্বাবুয়ের লেগব্রেক বোলার রায়ান বার্ল। শেষ টি২০তে নাসুম আহমেদের এক ওভারে ৩৪ রান নেওয়া স্বাগতিক তারকা ২১তম ওভারে মাঠ ছাড়েন। লিটনের ড্রেসিংরুমে ফেরার পর মুশফিককে নিয়ে ঝড়ো ব্যাটিং করতে থাকেন বিজয়। ৪৭ বলে তুলে নেন ফিফটি। হজের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ছুটিতে থাকা মুশফিকও ছন্দ ধরে রেখে মারমুখী ব্যাটিং করে যান। ৪৪তম ওভারের চতুর্থ বলে রিচার্ড এনগারাভার বলে ক্যাচ তুলে দিলেও ওয়েসলি মাধেভেরে তা ফেললে ৭১ রানে জীবন পান বিজয়। এরপরও বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। ৬২ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৭৩ রান করে নিয়াউচির বলে মুসাকান্দার তালুবন্দি হন। মুশফিককে নিয়ে দ্রম্নত রান তোলায় মনোযোগী হন মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ। ক্রিজে এসে প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি হাঁকান। মুশফিক ৪৯ বলে ৫ চারে ৫২ ও রিয়াদ ১২ বলে ৩ চারে ২০ রানে অপরাজিত থাকেন। শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৯০ রান। জিম্বাবুয়ের পক্ষে একটি করে উইকেট পান সিকান্দার রাজা ও নিয়াউচি। সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩০৩/২ (তামিম ৬২, লিটন আহত অবসর ৮১, এনামুল ৭৩, মুশফিক ৫২*, মাহমুদউলস্নাহ ২০*; এনগারাভা ০/৬১, নিয়াউচি ১/৭০, মাসাকাদজা ০/৩১, জঙগুয়ে ০/৫৬, বার্ল ০/৮, শুম্বা ০/২৭, রাজা ১/৪৮, মাধেভেরে ০/৫)। জিম্বাবুয়ে: ৪৮.২ ওভারে ৩০৭/৫ (চাকাভা ২, মুসাকান্দা ৪, কায়া ১১০, মাধেভেরে ১৯, সিকান্দার রাজা ১৩৫*; জঙগুয়ে ২৪, মিলটন শাম্বা ১*' মুস্তাফিজু রহমান ১/৫৭, শরীফুল ইসলাম ১/৫৭, মোসাদ্দেক হোসেন ১/৬৭, তাসকিন ০/৫২, মেহেদী মিরাজ ১/৫৯, মাহমুদউলস্নাহ ০/১২)। ফল: জিম্বাবুয়ে ৫ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা: সিকান্দার রাজা।