বিশ্বকবির ৮১তম মহাপ্রয়াণ দিবস আজ

প্রকাশ | ০৬ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

ম যাযাদি রিপোর্ট
আজ ২২ শ্রাবণ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮১তম মহাপ্রয়াণ দিবস। কবিগুরু নেই, তাই বলে থামেনি তাঁর সৃষ্টির চর্চা। বাঙালি ও বাংলা সাহিত্য যতদিন পৃথিবীতে থাকবে, কবিগুরুর সৃষ্টিও ততদিন থাকবে। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। রবীন্দ্রনাথের মহাপ্রয়াণ দিবসে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাকে স্মরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। যে ক'জন কবি বাংলা সাহিত্যিকে বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁদের অন্যতম। তাঁর হাত ধরেই এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার আসে। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, নাট্যকার, ছোটগল্পকার, গীতিকার, সুরকার, সাহিত্যিক ও অভিনেতা। বাংলা সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই, যেখানে কবিগুরু তার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেননি। বাংলা ১২৬৮ সনের ২৫ বৈশাখ (ইংরেজি ১৮৬১ সালের ৭ মে) কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্ম নেন এই ক্ষণজন্মা কবি ও দার্শনিক। তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। ঠাকুর পরিবারটির পূর্বপুরুষ পূর্ববঙ্গ থেকে ব্যবসা সূত্রে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের চেষ্টায় বংশের জমিদারি ও ধনসম্পদ বৃদ্ধি পায়। ইংরেজি শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে লালিত এবং আত্মপ্রতিষ্ঠিত দ্বারকানাথ ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি জনহিতকর বহু কাজ করে সাফল্য অর্জন করেন। উনিশ শতকের বাঙালির নবজাগরণ এবং ধর্ম ও সমাজ-সংস্কার আন্দোলনে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের ভূমিকা ছিল বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য। আধুনিক যুগের অন্যতম সমাজ-সংস্কারক এবং একেশ্বরবাদের প্রবক্তা রামমোহন রায় ছিলেন দ্বারকানাথের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। রামমোহন রায়ের আদর্শ দ্বারকানাথ, তাঁর পুত্র দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং দৌহিত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপর এক অভাবনীয় প্রভাব বিস্তার করেছিল। শৈশবে বাড়িতেই কবিগুরুর লেখাপড়ায় হাতেখড়ি হয়। পরে ভর্তি হন কলকাতা নর্মাল স্কুলে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে পড়াশোনা করতে বিলাত (বর্তমানে ইংল্যান্ড) যান। সেখানকার ব্রাইটন পাবলিক স্কুল ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই তাঁর প্রথম কবিতার বই 'বনফুল' প্রকাশিত হয়। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ মানসী, সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী। বিখ্যাত নাটক ডাকঘর, বিসর্জন, রক্তকরবী, অচলায়তন। বিখ্যাত উপন্যাস গোরা, নৌকাডুবি, শেষের কবিতা, চোখের বালি। কবিগুরুর রচিত গানের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য কবিগুরু সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এশীয়দের মধ্যে তিনিই প্রথম সাহিত্যে নোবেল পান। তিনি ভারতের বোলপুরে 'শান্তিনিকেতন' প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তিনি 'নাইট' উপাধি ত্যাগ করে গভীর দেশপ্রেমের পরিচয় দেন। গভীর জ্ঞান আর প্রজ্ঞার অধিকারী কবিগুরুর মহাপ্রয়াণ ঘটে বাংলা ১৩৪৮ সনের ২২ শ্রাবণ (ইংরেজি ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ আগস্ট)।