জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে বাজারে প্যানিক বায়িং

প্রকাশ | ০৭ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
শুক্রবার রাতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার পর ঘণ্টা না পেরুতেই ঢাকাসহ সারাদেশে শুরু হয়েছে প্যানিক বায়িং। গাড়িতে পেট্রোল-অকটেন ভরতে পাম্পগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন যানবাহন চালক ও মালিকরা। এছাড়াও জেনারেটরের ডিজেল সংগ্রহে ছুটে আসেন বাড়ি ও কারখানার মালিকসহ ছোট-বড় ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা। সকালে জ্বালানি তেলের এমন রেকর্ড দামে প্যানিক ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজারে। খুচরা ও পাইকারি উভয় বাজারে স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ৩ গুণ ক্রেতার চাপ বাড়ে। বিশেষ করে পাইকারি বাজার ছিল ক্রেতায় ঠাসা। অধিকাংশ বিক্রেতা প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি পণ্য সংগ্রহ করেছেন। যেখানে দুপুরের দিকেও পাইকারি বাজারের মোকামে পণ্যের স্তূপ দেখা যায় সেখানে সকাল ১০টার মধ্যেই বিক্রি হয়েছে প্রায় সব পণ্য। তবে এদিন পণ্য খালাস করলেও মোকাম বন্ধ রেখেছেন অনেকেই। স্বাভাবিকভাবেই চাহিদা বৃদ্ধির পাইকারি বাজারে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আদাসহ বেড়েছে সবধরনের পণ্যের দাম। ব্যবসায়ীরা জানান, ডিজেলের নতুন দামের হিসাবে রোববার থেকে পরিবহণ ব্যয় বাড়তে পারে ৪২ শতাংশ পর্যন্ত। এতে উত্তরাঞ্চলসহ রাজশাহী, কুষ্টিয়া, নওগাঁর মতো দূূরত্বের জেলা থেকে আসা প্রতি মণ পণ্যের দাম বাড়বে ১০ টাকার মতো। ফলে আগের দরে পণ্যে পেতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে পণ্য পরিবহণে ৫ টনের ট্রাকে ব্যয় বাড়তে পারে ৬-৭ হাজার টাকা। ফলে চাল, ডাল, তেল ও পেঁয়াজের প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় খরচ বাড়তে পারে ২০ টাকা পর্যন্ত। সব মিলিয়ে চলতি সপ্তাহে রাজধানীসহ সারাদেশের ভোগ্যপণ্যের বাজারে চরম অস্তিরতার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা। এদিকে শনিবার খুচরা বাজারেও প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পণ্য কিনতে দেখা গেছে রাজধানীবাসীকে। মিরপুর-১, শ্যামলী, কল্যাণপুর, আগারগাঁও, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন বাজারে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ছিল ক্রেতার চাপ। চাল, ডাল, পেঁয়াজসহ বাড়তি মুদি পণ্য কিনেছেন অধিকাংশ ক্রেতা। কল্যাণপুর নতুন বাজারের মুদি দোকানদারদের তথ্য মতে, গতকাল প্রায় প্রত্যেকটি দোকানে ৩ গুণের বেশি পণ্য বিক্রি হয়েছে। সাধারণ ক্রেতা ও খুচরা ব্যবসায়ীদের এই প্যানিক বায়িংয়ের ফলে পেঁয়াজ, রসুন, আলুসহ অধিকাংশ মুদিপণ্যের কেজিতে বেড়েছে ২-৩ টাকা পর্যন্ত। খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমেরও। প্রতি ডজন ডিমে প্রায় ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১৪৫ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও বাজারভেদে বেড়েছে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম। এর আগে শুক্রবার রাত ১০টার পর হঠাৎ এক নির্বাহী ঘোষণায় বাড়ানো হয় পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম। প্রতি লিটার অকটেনে ৪৬, পেট্রোলে ৪৪, ডিজেল ও কেরোসিনে ৩৪ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছে। এই দাম কার্যকর হয়েছে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে। ফলে দেশজুড়ে তৈরি হয় অস্থিতিশীল অবস্থা। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এমন দাম বৃদ্ধির কারণে ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ মানুষদের মধ্যে। এছাড়াও বিশ্ববাজারে যখন তেলের দাম নিম্নমুখী তখন কেন দেশের বাজারে দাম বাড়ানো হলো এমন প্রশ্ন করছেন সবাই। অর্থনীতিবিদ ও বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী চলমান বৈরী অর্থনৈতিক অবস্থায় ভোগ্যপণ্যের দাম সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে জ্বালানি ও আমদানি পণ্যে শুল্কসহ বিভিন্ন ছাড় হচ্ছে তখন দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের রেকর্ড দাম বৃদ্ধি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। ডলার বাজারে বিদ্যমান অস্থিরতা ও বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্য আমদানিনির্ভর হওয়ায় ভোক্তা ব্যয় ইতিমধ্যে বেড়েছে কয়েকগুণ। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানির দাম ৫০ শতাংশ বৃদ্ধিকে আগুনে ঘি ঢালার মতো হয়েছে বলে মনে করছেন সাধারণ ক্রেতারা।