বাসে ডাকাতি-ধর্ষণ

গ্রেপ্তারদের অধিকাংশই সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ

প্রকাশ | ০৯ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

ম যাযাদি রিপোর্ট
টাঙ্গাইলের মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি এবং এক নারীকে 'দলবেঁধে ধর্ষণের' ঘটনায় যে ১০ জনকের্ যাব গ্রেপ্তার করেছে, তাদের অধিকাংশই সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ। তারা সবাই বিভিন্ন পরিবহণ এবং পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তাদের মধ্যে ৬ জনের বয়স ১৮ থেকে ২১ বছরের মধ্যে, তিনজনের বয়স ২২ থেকে ২৪ বছর। এছাড়া ৩২ বছর বয়সি একজনও এর মধ্যে রয়েছেন। সোমবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের্ যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'সেখানে একাধিক ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেছে। সেটা হয়তো আরও তদন্তে বের হবে এখানে কী হয়েছে।' গ্রেপ্তাররা হলেন- রতন হোসেন (২১), মো. আলাউদ্দিন (২৪), সোহাগ মন্ডল (২০), খন্দকার মো. হাসমত আলী দীপু (২৩), বাবু হোসেন জুলহাস (২১), মো. জীবন (২১), আব্দুল মান্নান (২২), নাঈম সরকার (১৯), রাসেল তালুকদার (৩২), এবং আসলাম তালুকদার রায়হান (১৮)। রোববার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ২০টি মোবাইল ফোন, দুটি রুপার চুড়ি, ১৪টি সিমকার্ড এবং ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি ক্ষুর উদ্ধার করার কথা জানিয়েছের্ যাব। ওই ঘটনায় টাঙ্গাইল জেলা পুলিশও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলেন- রাজা মিয়া, আব্দুল আউয়াল এবং নূর নবী। র্ যাবের সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার আল মঈন বলেন, এই ডাকাতির 'পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে' ছিলেন ২১ বছর বয়সি রতন হোসেন, যিনি বাসের হেলপার হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, 'ডাকাতির তিন দিন আগে রতন তার সহযোগী রাজা মিয়াকে এই পরিকল্পনা জানিয়ে ডাকাতির প্রস্তাব দেয়। এরপর মান্নান, জীবন, দীপু, আউয়াল ও নুরনবীকে পরিকল্পনার কথা জানায় রতন। তাদের মধ্যে মান্নান ঢাকার জিরানীবাজার এলাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তিনি পরে সোহাগ, আসলাম, রাসেল, নাঈম ও আলাউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে ডাকাতিতে যুক্ত হন।' রতনের নেতৃত্বে মোট ১৩ জন ডাকাতিতে অংশ নেয় জানিয়ের্ যাব কর্মকর্তা বলেন, 'ডাকাতির প্রাথমিক খরচ মেটানোর জন্য রতন পাঁচ হাজার টাকা লগ্নি করেন। চক্রের সদস্যদের ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে প্রত্যেকের কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, রতন ২ আগস্ট রাতে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা মোড়ের একটি দোকান থেকে চারটি চাকু, দুটি ধারালো কাঁচি এবং একটি ক্ষুর সংগ্রহ করে।' সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই রাতে সিরাজগঞ্জ রোড মোড় এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে থাকে ডাকাত দলের সদস্যরা। রাত আনুমানিক ১টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহণের বাসটি সিরাজগঞ্জ রোড মোড় এলাকায় পৌঁছালে ডাকাত রাজা বাসটিকে থামার সংকেত দেন। যাত্রীবেশে প্রথমে রতন, রাজা, মান্নান ও নুরনবী বাসে ওঠেন। পরে আরও দুই দফায় ডাকাতচক্রের অন্য সদস্যরা বাসে ওঠেন। ঢাকার বাইপাইলে যাওয়ার কথা বলে ওঠার আগে তারা দামদরও করে নেন। বাসে তখন ২৪ জন যাত্রী ছিলেন। বাসটি বঙ্গবন্ধু (যমুনা) সেতু পার হওয়ার পর ধূমপানের কথা বলে আউয়াল বাসের দরজার সামনে যান। তার ইশারায় রাজা, রতন, মান্নান ও নুরনবীও সামনের দিকে যান বলে জানানর্ যাব কর্মকর্তা মঈন। কমান্ডার আল মঈন বলেন 'তারা সামনে এসে চালক ও হেলপারকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন। সুপারভাইজরকেও ভয় দেখিয়ে তারা নিয়ন্ত্রণে নেয়। রতন চালকের কাছ থেকে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়। ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা বাসের পর্দা দিয়ে বাসের কর্মী ও যাত্রীদের হাত-পা বেঁধে, বাসের সিট কভার দিয়ে মুখে মুখোশ পরিয়ে দেয়। যাত্রীদের সঙ্গে থাকা অর্থ, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিস লুট করে এবং শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়।' আল মঈন বলেন, একপর্যায়ে রতন বাসের স্টিয়ারিংয়ের দায়িত্ব রাজা মিয়াকে দিয়ে নিজে লুটের নেতৃত্ব দেন। কিছুক্ষণ পর রতন আবার চালকের আসনে বসেন। মধুপুরের রক্তিপড়া এলাকায় লুটের মাল নিয়ে ডাকাতদের মধ্যে বাগ্‌বিতন্ডা তৈরি হয়। এ সময় রতন পেছনে তাকালে বাসটি রাস্তার পাশের বালুতে উঠে পড়ে। দুর্ঘটনার পর ডাকাত দলের সদস্যরা অন্য বাসে করে প্রথমে মধুপুর এলাকায় যায়। পরে সেখান থেকে অটোরিকশায় মধুপুরের কুড়ালিয়া এলাকায় রতনের এক আত্মীয়ের ফাঁকা বাড়িতে গিয়ে লুটের মাল ভাগবাটোয়ারা করে। র্ যাব বলছে, লুটের মাল নিয়ে রতন গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকায় চলে যান। মান্নান, আলাউদ্দিন ও বাবু আলাদাভাবে আশুলিয়ার জিরানীবাজার এলাকায় আত্মগোপন করেন। আসলাম, নাঈম ও রাসেল প্রথমে নিজেদের এলাকায় এবং পরে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ এলাকায় আত্মগোপন করেন। জীবন আত্মগোপন করেন কোনাবাড়ীতে। দীপু প্রথমে টাঙ্গাইলের পিরোজপুর গ্রামে এবং পরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় যান। সোহাগ প্রথমে জিরানীবাজার ও পরে জামালপুর জেলায় এবং পরে আবার জিরানীবাজারে গিয়ে আত্মগোপন করেন। ওইসব এলাকা থেকেই তাদের গ্রেপ্তার করের্ যাব।