বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
ওয়ানডে সিরিজ

বড় জয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়াল তামিমরা

ম ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ১১ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

তিন ম্যাচের সিরিজ আগেই হাতছাড়া হয়ে গেছে। শেষ ওয়ানডেটি বাংলাদেশের জন্য ছিল কেবলই মান রক্ষার, হোয়াইটওয়াশ লজ্জা এড়ানোর। এমন এক ম্যাচে এসে অবশেষে জ্বলে উঠল টাইগাররা। আগের দুই ম্যাচের বাস্তবতা মাথায় নিলে পুঁজি ছিল না জুৎসই। ম্যাচের মাঝপথে দুশ্চিন্তাই ভর করছিল বেশি। তবে এবার জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংকে আর দাঁড়াতে দেননি বাংলাদেশের বোলাররা।

নিজেরা ভালো বল করেছেন, প্রতিপক্ষের ভুলগুলোও কাজে লাগিয়েছেন। সিরিজ হারলেও তাই হোয়াইটওয়াশের বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে পেরেছে বাংলাদেশ। বুধবার হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে বাংলাদেশের ২৫৬ রানের জবাবে ১৫১ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। জিম্বাবুয়ে ম্যাচ হেরেছে ১০৫ রানের বিশাল ব্যবধানে। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটি ছিল বাংলাদেশের ৪০০তম ওয়ানডে। মাইলফলকের ম্যাচটিতে অবশেষে এলো জয়।

জিম্বাবুয়ের ১৫১ রান করাটাও বেশ বিস্ময়কর। কারণ ৮৩ রানেই তারা হারিয়ে বসেছিল ৯ উইকেট। এরপর রিচার্ড এনগারাভা আর ভিক্টর নিয়াউচি মিলে গড়েন ইনিংস সর্বোচ্চ ৬৮ রানের জুটি। শেষ উইকেটে জিম্বাবুয়ের ইতিহাসে এটিই সর্বোচ্চ রান। দলের সর্বোচ্চ ৩৪ রান আসে এনগারাভার ব্যাটে, নিয়াউচি করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ রান। তাদের বিনোদনের পর এই ম্যাচ হারলেও প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ আগেই জিতে নিয়েছে জিম্বাবুয়ে।

এমনিতেই নামেভারে অনেক পিছিয়ে জিম্বাবুয়ে।

এই সিরিজে তারা পায়নি তাদের সেরা পাঁচ ক্রিকেটারকে। শেষ ম্যাচে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক রেজিস চাকাভাও খেলতে পারেননি। খর্ব শক্তি নিয়ে প্রথম দুই ম্যাচ জিতে চমকে দেয়। শক্তি আরও কমে যাওয়া শেষটায় হারাল খেই। সান্ত্বনার জয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে হিরো এনামুল হক বিজয় ও আফিফ হোসেন। এই দুজন মিলেই করেন অর্ধেকের বেশি রান। ওপেন করতে নামা বিজয় ৭১ বলে করেন ৭৬। ৮১ বলে ৮৫ রানে অপরাজিত থাকেন আফিফ। ১৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বল হাতে দলের সেরা মুস্তাফিজ।

২৫৭ রান তাড়ায় নেমে হাসান মাহমুদের প্রথম ওভারেই ফিরে যান টাকুদওয়ানশে কাইটানো। মেহেদী হাসান মিরাজের পরের ওভারে পাগলাটে শট খেলে উইকেট ছুড়ে দেন টাডিওয়ানশে মারুমানি। ৭ রানে ২ উইকেট হারানো অবস্থা থেকে জুটি গড়ে প্রতিরোধ করতে পারেননি ওয়েসলি মাধভেরে। অভিষিক্ত পেসার ইবাদত হোসেনের বাড়তি লাফানো বলে পয়েন্ট ধরা দেন তিনি। ঠিক পরের বলেই সবচেয়ে বড় উইকেট পেয়ে যায় বাংলাদেশ। দারুণ ইয়র্কারের আগের দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা সিকান্দার রাজাকে বোল্ড করে দেন এবাদত।

১৮ রানে ৪ উইকেট পড়ে যায় স্বাগতিকদের। এই ১৮ রানের মধ্যে ১৪ রানই আসে অতিরিক্ত খাতা থেকে। প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান দলের চাপে ছিলেন ভরসা। বল হাতে নিয়েই তাইজুল ইসলাম ফেরান তাকে। জোরালো এলবিডবিস্নউর আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। টনি মুনিয়োঙ্গাও পরে শিকার তাইজুলের। তাইজুলের স্পিনে বেরিয়ে এসে ওড়াতে গিয়ে স্টাম্পিং হয়ে ফেরেন ১৮ বলে ১৩ রান করা তরুণ। লুক জঙ্‌গুই থিতু হয়েই থামান দৌড়। মোস্তাফিজুরের বলে অহেতুক উড়িয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১৫ রান করে।

মুস্তাফিজের স্স্নোয়ারে ফিরে যান ক্লাইভ মানদান্ডে ও ব্রেড ইভান্সও। তবে শেষ উইকেট জুটিতে খেলা লম্বা করে দেনএনগারাভা ও নিয়াউচি। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে তারা বিনোদন জোগান দর্শকদের। গড়েন ইনিংস সর্বোচ্চ ৬৮ রানের জুটি। এই দুজনের ব্যাটে হারের ব্যবধান অনেক কমিয়ে ফেলে জিম্বাবুয়ে। তাদের ব্যাটিং বুঝিয়ে দেয় উইকেট ব্যাট করার জন্য বেশ ভালো। ব্যাটসম্যানদের কেউ এই বোধটা রাখলে খেলার ফল হতো ভিন্ন।

এর আগে টস হেরে খেলতে নেমে তামিম ছিলেন জড়সড়। ধুঁকতে ধুঁকতে থিতু হওয়ার পথে থাকা বাংলাদেশ অধিনায়ক রান আউটে কাটা পড়েন বিজয়ের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে। ক্রিজে এসে প্রথম বলেই ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিমও কোনো রান না করেই ব্রেড ইভান্সের বলে আউট হন ক্যাচ দিয়ে। ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ক্রিজে আসা মাহমুদউলস্নাহ থিতু হতে আগের দিনের মতোই নেন অনেক বেশি সময়। এক পাশে বিজয় ছিলেন সড়গড়। তার সাবলীল ব্যাটেই চালু থাকে রানের চাকা। একের পর এক ডটবলে চাপ বাড়ান মাহমুদউলস্নাহ।

বিজয় সেই চাপ সামলে একা হাতে টানছিলেন দলকে। ৪৮ বলে ফিফটি তুলে গতি আরও বাড়ান তিনি। বড় বড় ছক্কায় যেভাবে এগোচ্ছিলেন, সেঞ্চুরিটা মনে হচ্ছিল তার পাওনা। কিন্তু লুক জঙ্‌গুইর অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে থামেন ৭১ বলে ৭৬ করে। ৬ চারের সঙ্গে ৪ ছক্কা মেরেছেন এই ডানহাতি। চতুর্থ উইকেটে মাহমুদউলস্নাহর সঙ্গে এতে ভাঙে তার ৭৭ রানের জুটি। ৯০ বলের জুটিতে ৪৭ বলে ৫২ করেন বিজয়। মাহমুদউলস্নাহ স্রেফ ১৯ রান করতে লাগান ৪৩ বল। এতে বোঝাই যাচ্ছে দলকে কতটা পেছনে টেনেছেন তিনি।

এরপর আফিফের সঙ্গেও আরেক জুটি হয়েছিল মাহমুদউলস্নাহর। যথারীতি সেখানেও তিনি মন্থর। শেষতক ক্রিজে তার যন্ত্রণাময় উপস্থিতি থামান এনগারাভার বল স্টাম্পে টেনে এনে। ৬৯ বলে তিনি ফেরেন ৩৯ করে। যত চাপের পরিস্থিতিই হোক, অনভিজ্ঞ বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে তার এমন অ্যাপ্রোচ আসলে ব্যাখ্যাহীন। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে যাওয়ায় আড়ালে পড়ে যাবে তার খেলার ধরন। মাহমুদউলস্নাহর বিদায় দেখে দমে না দিয়ে নিজের কাজ করে যেতে থাকেন আফিফ। টেল এন্ডারদের নিয়ে তিনি যোগ করেন বাকি রান। ৫৮ বলে ফিফটি করার পর আরও হাত খুলে মারতে থাকেন তিনি। মিরাজও সঙ্গ দিতে না পারলে শেষ তিন ব্যাটসম্যানকে নিয়ে আরও ৩৬ রান যোগ করেন তিনি। বাঁহাতি এই তরুণ ৬ চারের সঙ্গে মারেন ২ ছক্কা। তার এই ইনিংস না হলে বাংলাদেশ ডুবতে পারত দুইশোর নিচে। দল আড়াইশ ছাড়ালেও শঙ্কা তাই থেকে গিয়েছিল। প্রথম দুই ম্যাচে যে ৩০৩ ও ২৯০ রান করেও পারা যায়নি। এদিন বোলিং, ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশকে পাওয়া গেল আরও ধারালো একাদশে এসে দারুণ ভূমিকা রাখলেন ইবাদত, বিশ্রাম নিয়ে মুস্তাফিজকেও পাওয়া গেল সতেজ।

তবে স্বাগতিক জিম্বাবুয়েও ব্যাট করেছে বেশ পরিকল্পনাহীন। উইকেট ভালো থাকলেও ইনিংস টেনে না গিয়ে উইকেট ছুড়ে দিয়েছেন তাদের বেশ কজন। বিশেষ করে রাজা এদিন প্রথম বলেই আউট হয়ে যাওয়ায় তালগোল পাকিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। ম্যাচসেরা হয়েছেন বাংলাদেশের আফিফ হোসেন ধ্রম্নব এবং সিরিজসেরা হন জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজ।

আর এই ম্যাচ দিয়েই শেষ হলো বাংলাদেশের এবারের জিম্বাবুয়ে সফর। টি২০ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারের পর ওয়ানডে সিরিজেও ২-১ ব্যবধানে হারল তারা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

বাংলাদেশ :৫০ ওভারে ২৫৬/৯ (তামিম ১৯, এনামুল ৭৬, শান্ত ০, মুশফিক ০, মাহমুদউলস্নাহ ৩৯, আফিফ ৮৫*, মিরাজ ১৪, তাইজুল ৫, হাসান ০, মুস্তাফিজ ০, ইবাদত ০*, এনগারাভা ১/৫১, নিয়াউচি ০/২৪, ইভান্স ২/৫৩, রাজা ১/৪২, কাইয়া ০/১৬, মাধেভেরে ০/২৭)

জিম্বাবুয়ে: ৩২.২ ওভারে ১৫১ (কাইটানো ০, মারুমানি ১, কাইয়া ১০, মাধেভেরে ১, রাজা ০, মাডান্ডে ২৪, মুনিয়োঙ্গা ১৩, জঙ্‌গুয়ে ১৩, ইভান্স ২, এনগারাভা ৩৪*, নিয়াউচি ২৬; হাসান মাহমুদ ১/৩৮, মিরাজ ১/১৬, ইবাদত ২/৩৮, তাইজুল ২/৩৪, মুস্তাফিজ ৪/১৭)

ফল: বাংলাদেশ ১০৫ রানে জয়ী

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জয়ী জিম্বাবুয়ে

ম্যাচসেরা : আফিফ হোসেন

সিরিজসেরা : সিকান্দার রাজা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে