বিএনপি আন্দোলন করুক, যেন গ্রেপ্তার করা না হয় :প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বিএনপির চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমাদের বিরোধীরা একটা সুযোগ পাচ্ছে। তারা আন্দোলন করছে। সেটা করুক আমি তো চাচ্ছি। আমি নির্দেশ দিয়েছি, তারা আন্দোলন করছে, করতে দাও। খবরদার কাউকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয়।' রোববার আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিরোধী দলের আন্দোলনের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, 'আন্দোলন করে তারা কতটুকু সফল হবে, সেটা জানি না। কিন্তু যেটা করছে তাতে দেশের জন্য আরও ক্ষতি হবে। আমরা সেটা সামাল দিতে পারব, সেই বিশ্বাস আমার আছে।' বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমা মাত্রই বাংলাদেশে সমন্বয় করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'যখনই বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমবে আমরা সঙ্গে সঙ্গে এডজাস্ট (সমন্বয়) করব। সেটাও আমার নির্দেশ রয়ে গেছে। সেটা আমরা করে দিচ্ছি।' বিদু্যতের ব্যবহার সীমিত করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আর হয়তো কিছুকাল আমাদের কষ্ট করতে হবে। আমাদের বিশেষ করে কয়লাভিত্তিক বিদু্যৎকেন্দ্রগুলো সেগুলো যখন এসে যাবে তখন আমাদের বিদু্যতের সমস্যাটা অনেকটা দূর হবে।' আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে যেসব ওয়াদা করেছিল সেগুলো সম্পন্ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'যদি এই করোনা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আর এই স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশন না হতো তাহলে আমাদের দেশ কখনই সমস্যায় পড়ত না। আমরা এগিয়ে যেতে পারতাম।' এর কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, যে বিষয়গুলোয় বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর সেখানে সমস্যাটা দেখা দিচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে তিনি সবাইকে যার যতটুকু জমি আছে তা ফসল উৎপাদনসহ কৃষিভিত্তিক কার্যক্রমে লাগাতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'যার যেখানে যতটুকু জমি আছে সবাই একটু চাষ করেন। সেখানে খাবার উৎপাদন করেন। হাঁস, মুরগি, কবুতর, কোয়েল, গরু, ছাগল, ভেড়া যে যা পারেন পারেন যেখানে জায়গা আছে। আর পুকুরে মাছ, যত জলাভূমি আছে সেখানে মাছের চাষ। আমাদের খাবারটা যেন আমরা দেশের মধ্যে করতে পারি। আমাদের যেন বাইরের দিকে না তাকিয়ে থাকতে হয়। সেই ব্যবস্থাটাই এখন আমাদের নিতে হবে।' করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা সামলে নিয়ে বাংলাদেশ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। রাশিয়াকে 'শায়েস্তা' করতে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রতিটি মহাদেশের মানুষকেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'সব জিনিসের ওপর এর একটা প্রভাব পড়েছে।' নিষেধাজ্ঞা দিয়ে লাভটা কী হলো- সেই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, 'লাভ আমেরিকা ও রাশিয়ার। কারণ রুবলের দামও বাড়ছে আর ওদিকে ডলারের দাম বাড়ছে। সারা বিশ্বব্যাপী রুবল আর ডলার স্ট্রং হয়ে গেছে। আর মরছে সব দেশেরই মানুষ, সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত যারা তাদের জন্য চরম দুর্ভোগ। শুধু বাংলাদেশে না, ইউরোপ, আমেরিকা, ইংল্যান্ড সব জায়গায় এই অবস্থাটা সৃষ্টি হয়ে গেছে।' যুদ্ধের ক্ষতিকর প্রভাবে সারা বিশ্বের মানুষই ভুক্তভোগী জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে এটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। সেই কষ্ট লাঘবের জন্য আরও কী কী করা যায় তার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা মানুষের কষ্টটা বুঝি না তা না।' পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দেশের কিছু 'অতিমুনাফা লোভী' মানুষ জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'আমাদের কিছু লোক তো থাকে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে খামোখা জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয়। এই ছুঁতা ধরে। সেটাও হচ্ছে কিছু কিছু। এত দাম তো বাড়ার কথা না প্রত্যেক জিনিসের, কিন্তু দাম বাড়াচ্ছে।' সভায় বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকেসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করার কথাও তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'আমার শুধু একটাই প্রশ্ন আমার বাবা, মা, ভাইরা কী অপরাধটা করেছিল? কেন এভাবে হত্যা করা হলো?' যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুর নেওয়া নানা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তাকে হত্যার পর যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে সরকারে এসেছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা জাতির পিতার খুনিদের রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছিল, পুরস্কৃত করেছিল এবং দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছিল। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত করতে অসহায় মানুষকে ঘর করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।