বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্মপাশায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে ছয় মাসেই ফাটল!

নির্মাণ কাজের ঠিকাদার ইউএনও'র বড় ভাই হ নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর তৈরির অভিযোগ
ম মিঠু মিয়া, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ)
  ১৮ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ৫০টি ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে ছয় মাসের মধ্যেই। সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলায় উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়নের নওয়াপাড়া ও কালিশাকান্দা ও পাইকুরাটি ইউনিয়নের সুনই মজিবনগরসহ অন্যান্য গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফাটল দেখা দেওয়া এই ঘরগুলোর মধ্যে ১০টি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ঘরগুলোর মেঝে, বিট, দেয়াল ও রান্নাঘরে ফাটল ধরেছে। দু'টি ঘরের বিটও ধসে গেছে। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ঘরগুলোর বাসিন্দারা অন্য জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের (আশ্রয়ণ প্রকল্প-২) আওতায় গৃহহীন ও ভূমিহীন অসহায় পরিবারের জন্য গত অর্থবছরে ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলায় মধ্যনগর, জয়শ্রী, চামরদানী, ইউনিয়নে ১২০ সেমিপাকা ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়। প্রতিটি ঘর তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। প্রথম পর্যায়ে নির্মিত ঘরগুলো চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়। সেমিপাকা দুই কক্ষবিশিষ্ট এসব ঘরে একটি রান্নাঘর ও টয়লেট রয়েছে।

উপকারভোগীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর দেওয়ায় আমরা খুশি। কিন্তু ঘরে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছেন ঠিকাদাররা। বৃষ্টি শুরু হলেই ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়ে। কাঠ নষ্ট হয়ে গেছে। অধিকাংশ ঘরের মেঝে ও পিলার ফেটে গেছে। এসব ঘর বেশি দিন টিকবে না।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলাম ও কলেজ মিয়া জানান, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর পেয়ে অনেক খুশি হয়েছি। তার জন্য দোয়া করি। কিন্তু আমাদের ঘরগুলো নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আমাদের ঘরের সামনের তিনটা পিলার ফেটে গেছে। কখন যে ভেঙে পড়ে, চিন্তায় আছি। খুব আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি আমরা।

জানা গেছে, প্রকল্পের নির্মাণকাজের দায়িত্বে আছেন ইউএনও বড় ভাই টুটুল মিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ঘরগুলো নির্মিত হচ্ছে। এ দিকে উপজেলা নির্মাণ শ্রমিকের সভাপতি আব্দুল সিদ্দিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার এলাকার শ্রমিকদের হাতে কাজ না থাকায় তারা খেয়ে না খেয়ে আছেন। তাদের পেটের ভাত মেরে বর্তমান ইউএনও স্যার তার নিজ জেলার শ্রমিক এনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমি ও গৃহহীনদের ঘর নির্মাণকাজে ইট, বালু, সিমেন্ট, দরজা, জানালা, টিন কাঠসহ যাবতীয় মালামাল উপজেলা প্রশাসনের তদারকিতে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে ফাটল দেখা দিয়েছে। এসব অনিয়ম যেন দেখার কেউ নেই।

এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে ঠিকাদার মো. টুটুল মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি শুধু মিস্ত্রি দিয়ে কাজ করি। ইট, বালু, সিমেন্ট, দরজা, জানালা, টিন, কাঠসহ যাবতীয় মালামাল সরবরাহ করে উপজেলা প্রশাসন। এর মধ্যে কোনো সামগ্রী যদি নিম্নমানের হয়ে থাকে তার দায়দায়িত্ব আমার নয়। তিনি ইউএনও স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলে ফোন কেটে দেন।

নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রজেশ চন্দ্র দাস বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কারণে হয়তো বিভিন্ন ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঘর নির্মাণে কোনো প্রকার অনিয়ম হয়নি উলেস্নখ করে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক মো. মুনতাসির হাসান বলেন, দ্রম্নত ফাটল ধরা ঘরগুলো মেরামত করে বসবাসের উপযোগী করে তোলা হবে।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঘরে জোড়াতালি দেওয়া যাবে না। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্মপাশা ও মধ্যনগরের ভূমিহীনদের জন্য প্রায় ৫০০ ঘর দিয়েছেন। প্রকল্পের নির্মাণকাজ অব্যাহত রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে