মিশেল ব্যাশেলেটকে প্রধানমন্ত্রী

আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারও চাইতে পারিনি

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

ম যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেট সাক্ষাৎ করেন -ফোকাস বাংলা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক শাসনের বেড়াজাল থাকায় দীর্ঘ সময় জনগণের মানবাধিকার 'লঙ্ঘিত' হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, পঁচাত্তরের পর জাতির পিতার খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে 'প্রতিষ্ঠিত' করা হয়েছিল। বুধবার গণভবনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের কাছে আলোচনার বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১৯৭৫-এর পরে দীর্ঘ সময় দেশে সামরিক শাসন থাকায় মানুষের মৌলিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।' তিনি বলেন, 'নৃশংসতার সময় আমি ও আমার ছোট বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাই। ওরা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল বলে আমরা যখন দেশে ফিরে আসি তখন বিচারও চাইতে পারিনি।' বৈঠকে চিলির দুইবারের সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল ব্যাশেলেট জানান, তার দেশে যখন 'নিপীড়ক' সরকার ক্ষমতায় ছিল, সে সময় তার পরিবারকেও বিভিন্ন সময়ে একই রকম 'অমানবিক নির্যাতনের' মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ব্যাশেলে বলেন, 'আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে'। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ব্যাশেলে 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন' নিয়ে তারা বাংলাদেশের আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে এবং এ বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণও দেওয়া হয়েছে জানালে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি সেটি (জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের পর্যবেক্ষণ) পেয়েছেন। এ সময় ব্যাশেলেকে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের একটা পরিকল্পনা রয়েছে সন্ত্রাসবাদ আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদকে আমরা প্রশ্রয় দেব না।' বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিয়ে আলোচনায় শেখ হাসিনা বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের দক্ষিণ অঞ্চলটা খুব ঝুঁকিতে থাকে। আমরা সেখানে বনায়ন করছি।' বৈঠকে ব্যাশেলে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সেখানে শিক্ষার প্রসার ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'কক্সবাজারে এটা সম্ভব নয়, তবে ভাসানচরে এটা সম্ভব। এরই মধ্যে অনেকে (বাংলাদেশ আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা) সেখানে চলে গিয়েছেন। সেখানে সুযোগ তৈরি করা যাবে।' রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পর্কে মিয়ানমারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'তারা অস্বীকার করে না যে, রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিক। কিন্তু তাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে কোনো সাড়া দেয় না। কিন্তু তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে হবে।' জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনসহ এসডিজি বাস্তবায়ন (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য) এবং বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নে?ওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। আলোচনায় নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে জানান শেখ হাসিনা। বৈঠকে শেখ হাসিনা এবং ব্যাশেলে দু'জনই একমত হন যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় নানা ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সংকট তৈরি হয়েছে। আলোচনায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিষয়টি তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি জানান, দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েক দফায় প্রায় ২ লাখ পরিবার নতুন ঘর পেয়েছে। এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, '৬২ হাজার রিফিউজিকে আমরা ফেরত নিয়েছি। আর সেই সময় ১৮শ' অস্ত্রধারী তাদের অস্ত্র সমর্পণ করেছে।' দেশের উন্নয়নে কৃষিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা।' 'নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা তুলে ধরে বৈঠক শেখ হাসিনা বলেন, এর ফলে দক্ষিণ অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি হয়েছে ও সেই অঞ্চলের পণ্যগুলো বাজারজাত করার মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে।' সৌজন্য সাক্ষাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস এবং ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী জিন লুইস উপস্থিত ছিলেন।