দ্বিতীয় সেমিফাইনাল

ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া যুদ্ধ আজ

২৮ বছর পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড। সেখানে আজ তাদের সামনে বাধা ক্রোয়েশিয়া, যে দলটি সেমিতে উঠেছে ২০ বছর পর। ক্রোয়াটদের সামনে এখন ইতিহাস গড়ার হাতছানি

প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হ্যারি কেন (বামে) ও ক্রোয়েশিয়ার লুকা মদ্রিচ। লুঝনিকিতে আজ মধ্যরাতে লড়াইটা তাদেরও Ñফাইল ছবি
ঘুচে গেছে ২৮ বছরের অপেক্ষা, ইংল্যান্ড এবার অপেক্ষায় ৫২ বছরের আক্ষেপ ঘুচাতে। ১৯৯০ সালের পর এবারই প্রথম বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে তারা। সেখানে আজ তাদের সামনে বাধা ক্রোয়েশিয়া, যে দলটি সেমিতে উঠেছে ২০ বছর পর। ক্রোয়াটদের সামনে এখন ইতিহাস গড়ার হাতছানি। হ্যারি কেনের ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলেই লুকা মদ্রিচ-ইভান রাকিতিচদের দল প্রথমবার পাবে ফাইনালের স্বাদ। উল্টোটা হলে? ৫২ বছর পর আবারও ফাইনাল খেলবে ইংল্যান্ড। সেই ১৯৬৬ সালে প্রথম এবং এখন পযর্ন্ত শেষবারের মতো ফাইনাল খেলেছিল ইংল্যান্ড। সেবার বিশ্বকাপও জিতেছিল তারা। এর পরের আসরগুলো ইংলিশদের মুঠোমুঠো হতাশাই উপহার দিয়ে গেছে কেবল। লিনেকার-রবসন-বুচারদের সোনালি প্রজন্মও ব্যথর্। জেরাডর্-ল্যাম্পাডর্-বেকহাম-ওয়েনদের প্রজন্ম তো আশার প্রদীপই জ্বালাতে পারেনি। অথচ ইংল্যান্ড প্রতিটি বিশ্বকাপেই খেলতে গেছে দারুণ সব খেলোয়াড় নিয়ে, নিয়ম করে প্রতিটি আসরেই দলটির পাশে থেকেছে ‘অন্যতম ফেভারিট’ তকমা। লিনেকারদের প্রজন্ম ছিল দুভার্গা। ১৯৮৬ সালে দারুণ খেলেও কোয়াটার্র ফাইনালে আজেির্ন্টনার কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল তারা। ববি রবসনের শিষ্যরা ইতালিতে অনুষ্ঠিত পরের বিশ্বকাপে তো হয়ে উঠেছিল হট ফেভারিট, কিন্তু সেমিফাইনালে পঞ্চিম জামাির্ন বাধা হয়ে দাঁড়াল। টাইব্রেকারে হেরে লিনেকারদের বিদায়। এরপর আর কখনো কোয়াটার্র ফাইনালই পার হতে পারেনি ইংল্যান্ড। রাশিয়ায় গিয়ে পারল এবার। অথচ শুরুতে এবার তাদের সেভাবে কেউ গণনাতেই ধরেনি! স্বপ্নবাজ ইংলিশ মিডিয়াও এবার উড়ায়নি প্রত্যাশার ফানুস। সমথর্করাও বড় স্বপ্ন দেখেনি। বিষয়টা গ্যারেথ সাউথগেটের শিষ্যদের হয়েছে ‘শাপেবর’। কথাটা দলপতি হ্যারি কেন থেকে শুরু করে অনেকেই একাধিকবার বলেছেন। জানিয়েছেন, প্রত্যাশার চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ায় দলটি নিজেদের সামথের্্যর প্রমাণ রাখতে পেরেছে। কোচ সাউথগেট দলটাকে করেছেন একাট্টা। খেলোয়াড়দের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ প্রগাঢ়, সম্পকের্র বন্ধনটাও দৃঢ়। এই ইংল্যান্ড হয়ে উঠেছে একটা পরিবার। সুখী পরিবার। ক্লাব ফুটবলের বৈরিতা ভুলে ইংল্যান্ডের পতাকাতলে একাট্টা হয়েছেন কেন-স্টারলিং-হ্যান্ডারসন-লিনগাডর্রা। মাঠে তাই এতটা দুবার্র দেখাচ্ছে এই ইংল্যান্ডকে। তারকা-খ্যাতিতে এগিয়ে থাকার পরও বেকহাম-জেরাডর্-ল্যাম্পাডর্রা এই একটা জায়গাটাতেই পিছিয়ে ছিলেন। ড্রেসিংরুম থেকে ক্লাবের বৈরিতা দূর করতে পারেননি তারা। মাঠেও তাই একটা দল হয়ে খেলা হয়নি তাদের, মেলেনি প্রত্যাশিত সাফল্যও। তাই ১৯৬৬ সালে ববি চালর্টন-জিওফ হাস্টের্দর বিশ্বজয়ের পুনরাবৃত্তিও ঘটেনি। এবার ঘটবে? দলপতি কেন তো খুবই আশাবাদী। ইতোমধ্য ছয় গোল করে গোল্ডেন বুট জেতার দৌড়ে সবার আগে থাকা এই স্ট্রাইকার জানিয়ে দিলেন, বিশ্বকাপ জিতেই ফিরতে চান ঘরে, ‘দলের কেউই (খালি হাতে) বাড়ি ফিরে যেতে চায় না। সবাই চায় কাজ সমাপ্ত করতে এবং সেটার জন্য আমরা মুখিয়ে আছি।’ স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে চাইলে আজ মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে বিজয়কেতন উড়াতে হবে কেনদের। নয়তো আরও একবার পুড়তে হবে হতাশার অনলে। লুঝনিকি স্টেডিয়াম, ফুটবল বিশ্বের প্রাণকেন্দ্র এখন রাশিয়ার এই মাঠ। এই মাঠেই আগামী ১৫ জুলাই বিশ্বকাপ জয়ের উচ্ছ¡াসে মাতবে একটি দল। ইংল্যান্ডকে হতাশার অনলে পুড়িয়ে সেই ‘একটি দল’ হওয়ার সিঁড়ির শেষ ধাপে পেঁৗছাতে চায় ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯৮ সালে ডেভর সুকাররা যেটা পারেননি, মদ্রিচ-রাকিতিচরা সেটাই করে দেখাতে চান। কোচ জালাতকো দালিচের অধীনে একঝাঁক প্রতিভাবান খেলোয়াড়ে গড়া দলটি নিজেদের সামথের্্যর প্রমাণ রেখেই উঠেছে শেষ চারে। এখন বিশ্বজয়ের আশা তারা করতেই পারে। আজকের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া নিজেদের ফেভারিট দাবি করলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। চলতি আসরে খেলা প্রতিটি ম্যাচেই বিজয়কেতন উড়িয়েছে দলটি। গ্রæপপবের্ যে তিনটি দল শতভাগ জয়ের রেকডর্ নিয়ে শেষ ষোলোয় নাম তুলেছিল ক্রোয়েশিয়া তাদের একটি। আজেির্ন্টনার মতো দলকে পেছনে ফেলে ‘ডি’ গ্রæপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। ইংল্যান্ড? দারুণ শুরুর পর বেলজিয়ামের কাছে ‘জি’ গ্রæপের শেষ ম্যাচটি হেরে হয়েছে রানাসর্আপ। অবশ্য ওই হারটা নাকি ছিল ইংলিশ কোচ সাউথগেটের একটা কৌশল। কোয়াটার্র ফাইনালে কঠিন প্রতিপক্ষ এড়াতেই নাকি দলকে জয়ের জন্য খেলাননি তিনি। অথার্ৎ অপেক্ষাকৃত সহজ অধের্ পড়তে ইচ্ছাকৃতভাবেই গ্রæপে দ্বিতীয় হয়েছে ইংল্যান্ড! তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে সাউথগেটের এই কৌশল দারুণ কাজেই দিয়েছে। অবশ্য শেষ ষোলোয় কলম্বিয়া বাধা টপকাতে কম বেগ পেতে হয়নি ইংল্যান্ডকে। টাইব্রেকারে জিতেছিল তারা, এর আগে বিশ্বকাপে টাইব্রেকার মানেই ছিল ইংল্যান্ডের হার। ক্রোয়েশিয়া শেষ দুটো ধাপ পেরিয়েছে টাইব্রেকারে জিতেই। শেষ ষোলোয় তারা টাইব্রেকারে জিতেছে ডেনমাকের্র বিপক্ষে, কোয়াটার্র ফাইনালে স্বাগতিক রাশিয়ার বিপক্ষে। দুই ইউরোপিয়ান দলের লড়াইয়ে আজও তেমন কিছু অপেক্ষা করছে কিনা, কে জানে! গোলরক্ষক ড্যানিয়েল সুবাসিচ যেভাবে টাইব্রেকারে নায়ক হয়ে উঠেছেন, আজও ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ালে ক্রোয়েশিয়া সম্ভবত খুব অখুশি হবে না! জুজু কাটিয়ে ফেলা ইংল্যান্ডও তো গোলমুখে পেয়ে গেছে আস্থা, জডার্ন পিকফোডর্। টাইব্রেকার হলে তো কথাই নেই, এর আগে দুই দল যদি আক্রমণাত্মক ধাঁচে খেলে; দুই গোলরক্ষক সুবাসিচ আর পিকফোডের্র মধ্যে জমাট এক লড়াই হবে। এমন ম্যাচে ব্যক্তিগত দ্বৈরথ থাকবে দুই দলের অধিনায়ক মদ্রিচ আর কেনের মাঝেও। তবে ব্যক্তিগত দ্বৈরথ নিয়ে ভাবনা নেই তাদের কারোরই। দুজনের কাছে দলের সাফল্যই বড় কথা। কেন সেটা আগেই বলে দিয়েছেন। মদ্রিচও বলে দিলেন। সঙ্গে এও বললেন, ‘১৯৯৮ সালের সাফল্যকে ছাপিয়ে যেতে চাই।’ অথার্ৎ, সুকারদের মতো তৃতীয় স্থান নিধার্রণী ম্যাচে লড়তে নারাজ মাদ্রিচ-রাকিতিচরা। তাদের লক্ষ্য, এই লুঝনিকিতেই আগামী সপ্তাহে শিরোপার লড়াইয়ে থাকা। অভিন্ন লক্ষ্য কেনের ইংল্যান্ডেরও। এখন দেখার অপেক্ষা, কাদের লক্ষ্য পূরণ হয়।