বিশ্বকাপ জিতে ইউরোর কষ্ট ভুলতে চায় ফ্রান্স

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
মঙ্গলবার সেন্ট পিটাসর্বাগের্ বেলজিয়ামকে হারিয়ে উচ্ছ¡াসে মেতেছে ফ্রান্স শিবির। এখন তারা দ্বিতীয়বার বিশ্বজয়ের স্বপ্নে বিভোর Ñফাইল ছবি
পঁাচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল যে বেলজিয়াম, সেই বেলজিয়ামের জয়রথ থামিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স। তবে এতেই তৃপ্ত নয় ১৯৯৮ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। বিগত দুই দশকের ব্যথর্তা ভুলে আবারও সোনার ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরতে চায় তারা। এই চাওয়াটা পূণর্ করে দুই বছর আগে ঘরের মাঠে ইউরো চ্যাম্পিয়ন হতে না পারার কষ্টটা দূর করতে চায় দিদিয়ের দেশমের দল। ঘরের মাঠে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে ফ্রান্স ছিল পরিষ্কার ফেভারিট। ফেভারিটের মতো খেলেই দলটি উঠেছিল ফাইনালে। কিন্তু ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পতুর্গালের কাছে অতিরিক্ত সময়ে গোল হজম করে শিরোপা হাতছাড়া করে দেশমের শিষ্যরা। দুই বছর আগের ওই কষ্টটা এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের। বেলজিয়ামকে হারিয়ে মঙ্গলবার বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার পর দলীয় কোচ দেশম জানিয়ে দিলেন, এবার বিশ্বকাপ জিতেই কষ্টটা ভুলতে চান তারা। আর একটি ম্যাচ জিততে পারলেই দ্বিতীয়বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবে ফ্রান্স। আগামী রোববার মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে সেই ম্যাচটি। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড নাকি ক্রোয়েশিয়া। গত রাতে দ্বিতীয় সেমিফাইনালের পরই নিশ্চিত হয়ে গেছে সেটা। তবে প্রতিপক্ষ যে-ই হোক, ফ্রান্সের লক্ষ্য একটাইÑ বিশ্বকাপ জেতা। এবার আর ফাইনালে হারতে চায় না ফরাসিরা, দেশম পরিষ্কারই জানিয়ে দিলেন সেটা। ‘হ্যাঁ, আমরা আরেকটা ফাইনালে উঠেছি। তবে দুই বছর আগে কি হয়েছিল সেটা আমার মনে আছে। আমরা এটা (রাশিয়া বিশ্বকাপ) জয়ের জন্য নামব, যেহেতু আমরা ইউরোর ফাইনালের হার এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি।’ সেন্ট পিটাসর্বাগের্ বেলজিয়ামের বিপক্ষে মঙ্গলবার ফ্রান্সের জয়ের নায়ক এমবাপে-গ্রিজম্যানদের মতো তারকা নন, দলটির রক্ষণভাগের খেলোয়াড় স্যামুয়েল উমতিতি। ৫১ মিনিটে গ্রিজম্যানের নেয়া কনাের্র উড়ে আসা বলে দারুণ হেডে গোল করেন এই ডিফেন্ডার। ওই গোলেই লেখা হয় ম্যাচের ভাগ্য। দলকে ফাইনালে তুলে দেয়া গোলের পর ম্যাচ শেষে সেই উমতিতও জানালেন, ইউরোর শিরোপা যে খুয়ানোর যন্ত্রণা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি, সেটা এবার তাড়াতে চান, ‘ইউরোর ফাইনালে আমরা জয় পাইনি। এবার আশা করব ভিন্ন কিছু হবে। আমরা সবাই মিলে ফ্রান্সেই বিশ্বকাপ ফিরিয়ে আনতে চাইব।’ কোচ দিদিয়ের দেশম আর সতীথর্ উমতিতির সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন ফ্রান্সের অধিনায়ক, গোলরক্ষক হুগো লরিসও। দুদার্ন্ত কয়েকটি সেভ করে বেলজিয়ামের হৃদয় ভেঙে দেয়া এই গোলরক্ষক বলেছেন, ‘দুই বছর আগে যেটা হয়েছিল সেটা মেনে নেয়া খুবই কঠিন ছিল এবং আমরা সেটা আবারও হতে দিতে চাই না। সম্ভাব্য সেরাভাবে আমরা এই আসর শেষ করতে চাই। আর মাত্র একটা ধাপ, যদিও এটি ভীষণ গুরুত্বপূণর্। দল হিসেবে আমরা খুবই ভালো একটা ম্যাচ খেললাম সব বিভাগেই আমরা লড়াকু ছিলাম।’ তৃতীয়বার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স। তাতে পরপর ফুটবলের দুটো বড় আসরের ফাইনালে খেলা হচ্ছে দলটির। তাতে আনন্দিত দলটির বড় তারকা আতোয়ান গ্রিজম্যান। তিনি জানিয়েছেন, বিশ্বকাপ জিতেই স্বপ্নযাত্রার সমাপ্তি ঘটাতে চান, ‘আমি আমার সতীথের্দর পারফরম্যান্সে খুশি। আমরা তাদের প্রতিহত করেছি এবং সেট পিস থেকে একটা গোল করেছি। আমরা যে আনন্দ দিতে পারি তা দেখাটা দারুণ ব্যাপার। টুনাের্মন্টটা শুরুর সময়ে এ রকম গোলের লক্ষ্য আমি ঠিক করেছিলাম। এবার ফাইনালে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে শিরোপাটা জিততে চাই।’ আজেির্ন্টনার বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচে দারুণভাবে গতির ঝড় তুলেছিলেন কিলিয়ান এমবাপে। বেলজিয়ামের বিপক্ষে সেমিফাইনালেও গতির ঝলক দেখিয়েছেন এই তরুণ ফরোয়াডর্। দলের জন্য ছয়টি গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেন তিনি। তা থেকে অবশ্য গোল আসেনি। সেটা নিয়ে এখন আর আক্ষেপ নেই তার। অন্যদিকে নিজের প্রথম বিশ্বকাপেই দল ফাইনালে লড়বে, বিষয়টা স্বপ্নের মতোই লাগছে এমবাপের কাছে, ‘এটা অবিশ্বাস্য। এটা স্বপ্নেরও স্বপ্ন, ভবিষ্যতের স্বপ্ন, সবকিছুই। আমার বলার ভাষা নেই। এমনকি আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। আমি খুব বড় স্বপ্নবাজ, আমিও কি এমনটা কল্পনা করতে পেরেছিলাম? এখনও আর একটি ম্যাচ বাকি আছে। কিন্তু আমরা যা কিছু করেছি তার জন্য আমরা গবির্ত।’ রাশিয়া বিশ্বকাপে এই সোনালি প্রজন্ম যা করেছে, তা নিয়ে ফরাসিরা গবর্ করতেই পারে। তবে বিশ্বকাপ জিততে না পারলে, আক্ষেপের সুরটাই বাজবে বেশি। তাতে ইউরোর হারের যন্ত্রণা তো দূর হবেই না, সঙ্গে যোগ হবে আরও একবার বিশ্বকাপের ফাইনালে পরাজিত হওয়ার যন্ত্রণা। দেশম এবং তার শিষ্যরা এবার কিছুতেই সে যন্ত্রণার শিকার হতে চান না।