ইউএনএফপিএর গবেষণা প্রতিবেদন

ঝুঁকিতে কিশোরী স্বাস্থ্য বাল্যবিবাহ কমাতে হবে

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য পরিস্থিতি কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যের ওপর নিভর্রশীল। তাই পুরো দেশকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী দেখতে হলে বাল্যবিবাহ কমাতে হবে। ইতোমধ্যে বিয়ে হওয়া কিশোরীরা যেন বিলম্বে গভর্ধারণ করে, সেই উদ্যোগ নিতে হবে। শহরের কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। দেশের জনসংখ্যার ২১ দশমিক ৪ শতাংশ কিশোর-কিশোরী। সংখ্যায় এরা ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৮০ হাজার। এর অধের্ক কিশোরী। অল্প বয়সে বিয়ে, গভর্ধারণ ও সন্তান জন্মদানের কারণে কিশোরীদের একটা অংশ বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে। বাংলাদেশে ১০-১৯ বছর বয়সী মানুষ অথার্ৎ কিশোর-কিশোরীদের সংখ্যা, তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, বিবাহিত কিশোরীদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের ধরন জানার জন্য ইউএনএফপিএ এই গবেষণাটি করেছে। শিগগিরই গবেষণা প্রতিবেদন চূড়ান্ত হবে বলে ইউএনএফপিএর সংশ্লিষ্ট কমর্কতার্রা জানিয়েছেন। বাংলাদেশের বতর্মান জন্যসংখ্যা ১৭ কোটি ধরে গবেষণার সব হিসাব করা হয়েছে। ইউএনএফপিএ বলছে, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী ২১ দশমিক ৪ শতাংশ। এই বয়সী জনসংখ্যার হার বাড়ছে। বতর্মানে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে এই জনগোষ্ঠীর হার বেশি। অদূর ভবিষ্যতে দেশের কিশোর-কিশোরীদের ৪২ শতাংশ বাস করবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে। ইউএনএফপিএর এই হিসাবে দেশে কিশোরীর সংখ্যা দঁাড়ায় ১ কোটি ৮১ লাখ ৯০ হাজার। এদের মধ্যে ১৫-১৯ বছর বয়সীদের সংখ্যা ৯০ লাখ ৯৫ হাজার। তাদের মধ্যে ৪০ লাখ ২০ হাজার কিশোরী এখন বিবাহিত। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, কিশোরীদের বিয়ের অন্যতম কারণ উচ্চমাধ্যমিকে ঝরে পড়া। অল্প বয়সে বিয়ের কারণে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে বিবাহিত কিশোরীরা। কিন্তু কিশোরীদের স্বাস্থ্য, বিশেষ করে প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে সরকারের বড় কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। বিবাহিত কিশোরীদের ৫৯ শতাংশ জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহার করে, বয়স্ক মহিলাদের মধ্যে এই হার ৬২ শতাংশ। বিবাহিত কিশোরীদের মধ্যে পদ্ধতি গ্রহণের অপূণর্ চাহিদার হার ১৭ শতাংশ। অথার্ৎ এরা প্রয়োজনের সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী পায় না। বাংলাদেশে সাধারণভাবে এই হার ১২ শতাংশ। সরকারি উদ্যোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারোয়ার বলেন, ২০১৬-২০৩০ সাল মেয়াদি জাতীয় কৈশোর স্বাস্থ্য কৌশলপত্র তৈরি করা হয়েছে। ১৪টি জেলার মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে ও ১৮৯টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্য কনার্র করা হয়েছে। এসব কনাের্র কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার পাশাপাশি নানা বিষয়ে পরামশর্ দেয়া হয়। তিনি জানান, অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি পযর্ন্ত স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি শিক্ষা চালু হয়েছে। এ ছাড়া বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে অধিদপ্তরের নিয়মিত প্রচার কাযর্ক্রম চালু আছে। ইউএনএফপিএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিশোরীদের তথ্য দিয়ে উদ্বুদ্ধ করতে হবে যেন তাদের স্কুলজীবন দীঘর্ হয়, তারা ঝরে না পড়ে। তাদের উৎপাদনশীল কাজে লাগাতে হবে, যাতে বিয়েতে বিলম্ব হয়। আর বিয়ে করলেও যেন উপযুক্ত বয়সের আগে গভর্ধারণ না করে, সেদিকেও নজর দিতে হবে। এ বিষয়ে তথ্য ঘাটতি পূরণের উদ্যোগও নিতে বলেছে ইউএনএফপিএ। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বতর্মানে দেশের জনসংখ্যা সাড়ে ১৬ কোটির বেশি। জনসংখ্যা সহনীয় পযাের্য় রাখতে না পারলে কোনো উন্নয়নই কাজে লাগবে না। জন্মনিয়ন্ত্রণ-পদ্ধতি গ্রহণের হার বাড়লে এবং ভালো সেবা দিতে পারলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর দেশের জনসংখ্যার সঙ্গে ২২ লাখ নতুন জনসংখ্যা যোগ হচ্ছে। এ জনসংখ্যা একটি জেলার জনসংখ্যার প্রায় সমান। এসব মানুষের জন্য স্কুল, কলেজ, হাসপাতালসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা কঠিন কাজ। বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন উপলক্ষে মঙ্গলবার পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আইইএম ইউনিটের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। আজ ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘পরিকল্পিত পরিবার সুরক্ষিত অধিকার’। সংবাদ সম্মেলনে দেয়া লিখিত নথিতে নারীপ্রতি গড় সন্তানসংখ্যা ২ দশমিক ৩ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারোয়ার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য উল্লেখ করে বলেন, বতর্মানে সংখ্যাটি দঁাড়িয়েছে ২ দশমিক ১। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর স্বল্পতার কথা উল্লেখ করা হলেও আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, ১৫ জুলাইয়ের পর থেকে কোনো স্বল্পতাই থাকবে না।’ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব জি এম সালেহ উদ্দিনও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের দেশীয় প্রতিনিধি আসা টরকেলসন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, মাতৃ-শিশুমৃত্যুর হার কমানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের অজর্ন, অঙ্গীকার ও যে প্রতিশ্রæতি আছে তার প্রশংসা করেন।