কোটা আন্দোলন

দূতাবাসগুলোর বিবৃতির অথর্ কী?

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আন্দোলনকারীদের মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দূতাবাস যে বিবৃতি দিয়েছে, সেটি নিয়ে নানা আলোচনা ও বিতকর্ তৈরি হয়েছে। কোটাবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে ঢাকায় মাকির্ন দূতাবাস বিবৃতি দেয়ার একদিন পরই সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং নরওয়ে দূতাবাসও বিবৃতি দিয়েছে। এসব বিবৃতি তাদের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত হয়েছে। নরওয়ে দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মতপ্রকাশের অধিকারের ওপর ধারাবাহিক হামলার বিষয়টি নিয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ‘সব বাংলাদেশির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রতিবাদ করার এবং গণতান্ত্রিক অধিকারচচার্ করার অধিকার রয়েছে,’ এমন কথা উল্লেখ করেছে নরওয়ের দূতাবাস। অন্যদিকে সুইজারল্যান্ড দূতাবাস তাদের তাদের বিবৃতিতে ঢাকা এবং অন্য শহরে শান্তিপূণর্ সমাবেশের ওপর সাম্প্রতিক হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, যেসব নীতির ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সমাবেশের ওপর এ ধরনের হামলা সেসব নীতির পরিপন্থি। নেদারল্যান্ডস দূতাবাস উল্লেখ করেছে, মতপ্রকাশ এবং সমাবেশ করার অধিকার সাবর্জনীন মানবাধিকার। এর আগে গত ৯ জুলাই ঢাকাস্থ মাকির্ন দূতাবাস তাদের ফেসবুক পাতায় প্রকাশ করা এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাÑ যারা বাংলাদেশের গবির্ত গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নেতা, তাদের শান্তিপূণর্ বিক্ষোভের ওপর আক্রমণ সেসব মূলনীতির বিরোধী, যার ওপর আমাদের মতো দেশগুলো প্রতিষ্ঠিত।’ এতে আরও বলা হয়, ‘বাক্স্বাধীনতা, জমায়েতের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূণর্ প্রতিবাদের অধিকারের মতো যে মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো যারা প্রয়োগ করছে, মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছে।’ দূতাবাসগুলোর বিবৃতি কীভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে? বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে বিদেশি দূতাবাসগুলোর নানা মন্তব্য নতুন কোনো বিষয় নয়। বিভিন্ন সময় নানা রাজনৈতিক ইস্যুতে তাদের বক্তব্য এবং বিবৃতি নিয়ে ক্ষমতাসীন দল নাখোশ হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা ব্যাখ্যা রয়েছে। ক্ষমতাসীনদের অনেকেই মনে করছে, এই আন্দোলনে সরকারবিরোধীদের মদদ রয়েছে এবং কোটা সংস্কারের ইস্যুটিকে কাজে লাগিয়ে সরকারবিরোধীরা রাস্তায় সক্রিয় হয়ে উঠতে চায়। এমন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দূতাবাসের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি দেয়া হয়েছে, সেটি নিয়ে বিশ্লেষকদের মাঝেও নানা মতপাথর্ক্য রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তজাির্তক সম্পকের্র অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন মনে করেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বক্তব্য দেয়ার বিষয়টি ক‚টনীতিকদের রেওয়াজের মধ্যে পড়ে না। অধ্যাপক হোসেন বলেন, ‘একটা দেশের ভেতর বিভিন্ন ধরনের সামাজিক আন্দোলন বা বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতির তৈরি হয়। যারা ক্ষমতায় থাকে, তারা এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে নানা রকমের ডাইনামিকস কাজ করে। সেখানে অন্য একটা পক্ষ, যাদের কাজ এটা না, ... ফলে এটি ক‚টনীতিক মহল থেকে বলার মানে হচ্ছে যে, তাদের নাক গলানোর চেষ্টা করা।’ দূতাবাসগুলোর বিবৃতি পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করেন। কারণ তাদের ধারণা, আন্দোলনকারীরা এতে ‘অনুপ্রাণিত’ হতে পারে। অধ্যাপক হোসেন বলেন, ‘দূতাবাসসমূহ যারা এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য তো সেটাই। ... কোনো একটা ঘটনার প্রেক্ষিতে যাদের বক্তব্য রাখার কথা না, যাদের যুক্ত হওয়ার কথা না, তাদের যুক্ত হওয়াটাই এখানে সমস্যা তৈরি করে।’ তবে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির মনে করেন, ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, মানবাধিকার রক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এসব বিবৃতিকে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। হুমায়ূন কবির দূতাবাসগুলোর বিবৃতিকে কোটা সংস্কার দাবির সঙ্গে যুক্ত করতে চাইছেন না। তার ধারণা, মতপ্রকাশের সীমাবদ্ধতা এবং ছাত্রদের ওপর সহিংসতার বিষয়টিকে দূতাবাসগুলো বড় করে দেখেছে। তিনি বলেন, ‘তাদের বক্তব্যটা ঠিক কোটাকে কেন্দ্র করে নয়। ছাত্ররা যারা মতামত প্রকাশ করতে চেয়েছে, তাদের ওপর বেশ কয়েকবার হামলা হয়েছে। তাদের ওপর হামলা করাটা আমার ধারণা, দূতাবাসগুলোর নজরে লেগেছে। হয়ত সে জন্যই তারা উদ্বেগটা প্রকাশ করেছে।’ বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভিন্ন সময় বিদেশি দূতাবাসগুলোর ভ‚মিকা পযাের্লাচনা করে অধ্যাপক দেলোয়ার হেসেন মনে করেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তারা যে বিবৃতি দিয়েছে, সেটিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যাখ্যা করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বিবিসি