সৈয়দ আশরাফের আসন শূন্য ঘোষণায় আইনি জটিলতা

প্রকাশ | ১১ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদ্য প্রয়াত সদস্য ও সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আসন নিয়ে আইনি জটিলতায় পড়েছে নিবার্চন কমিশন (ইসি)। আর এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তার সংসদ সদস্য পদটি শূন্য ঘোষণা করা নিয়ে। কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে দশম জাতীয় সংসদে নিবাির্চত হয়ে মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছিলেন সৈয়দ আশরাফ। মৃত্যুর সময়ও তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রী ছিলেন। তার দশম জাতীয় সংসদের সদস্যপদটি চলতি মাসের ২৮ তারিখে পঁাচ বছর মেয়াদ পূণর্ করবে। এদিকে সাংবিধানিক পদে থেকে সংসদ নিবার্চনে অংশ নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে অংশ নিয়েও তিনি জয়লাভ করেন ৩০ ডিসেম্বর। আর ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি তার জয়ী হওয়ার গেজেট প্রকাশ করে নিবার্চন কমিশন (ইসি)। অথার্ৎ ৩ জানুয়ারি (এদিন একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে জয়ী প্রাথীের্দর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়) মৃত্যুর সময় তিনি দশম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন আর একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্যপদে নিবাির্চত ছিলেন। যেহেতু তিনি শপথগ্রহণ করেননি, তাই একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে কাযর্ভার গ্রহণ করেছেন বলে গণ্য হননি। নিবার্চন কমিশনের জ্যেষ্ঠ কমর্কতার্রা জানিয়েছেন, এ অবস্থায় তার কোন আসনটি শূন্য হবে, তা নিয়েই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আগে কখনো এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, সংসদ সচিবালয় এই জটিলতার কারণেই পদটি শূন্য ঘোষণা করতে পারছে না। আর এ কারণে আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণের বাধ্যবাধকতা পালন নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। সংবিধানের ১২৩ (৪) দফা অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো কারণে কোনো সদস্যপদ শূন্য হলে পদ শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনো সংসদ সদস্যের মৃত্যু হলে এই বিধানটি দ্বারাই তার আসনটি শূন্য এবং নিবার্চন করা হয়। মৃত্যুকালীন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দশম জাতীয় সংসদের শপথ নিয়ে সংসদ সদস্য ছিলেন। আর একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্যপদে নিবাির্চত ছিলেন। দশম সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আর মাত্র ১৯দিন (২৮ জানুয়ারি) পর। কাজেই তার এই পদটি শূন্য ঘোষণা করা যাবে না। কেননা, এই পদটি শূন্য ঘোষণা করা হলে ১৯ দিনের মধ্যেই আবার নিবার্চন করতে হবে। আবার যেহেতু ১৯ দিন পর দশম সংসদ ভেঙে যাবে, তাই দশম সংসদের কোনো শূন্যপদে নিবার্চনের অথর্ হয় না। এ ছাড়া এত কম সময় নিবার্চন করাও সম্ভব নয়। আবার একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি শপথ নিতে না পারায় তার আসনটিও শূন্য করতে পারছে সংসদ সচিবালয়ে। কেননা, সংবিধান অনুযায়ী- শপথ না নিলে কাযর্ভার গ্রহণ করেছে বলে গণ্য হয় না অথবা সংশ্লিষ্ট নিবাির্চত ব্যক্তি সংসদ সদস্য হওয়ার ‘যোগ্য’ হন না বা ‘অযোগ্য’ বলে বিবেচিত হন। শপথ না নিলে আসন শূন্য হওয়ার বিষয়ে সংবিধানে ৬৭ (ক) দফায় বলা হয়েছে- সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে তৃতীয় তফসিলে নিধাির্রত শপথগ্রহণ বা ঘোষণা করতে ও শপথপত্রে বা ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে অসামথর্ হলে সংশ্লিষ্ট আসন শূন্য হবে। আর নিবার্চন করতে হবে আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে। ইতোমধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম বৈঠক আহŸান করা হয়েছে আগামী ৩০ জানুয়ারি। তাই সংবিধানের ৬৭ (ক) বিধান অনুযায়ী, একাদশ জাতীয় সংসদের কিশোরগঞ্জ-১ আসনটি শূন্য ঘোষণা করতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আরও তিন মাস। এ ক্ষেত্রে আসনটিতে ভোট হবে আগামী জুন মাস নাগাদ। এ অবস্থায় ইসির অভিজ্ঞ কমর্কতার্রা বলছেন, এসব আইনি জটিলতা থেকে মুক্তির অন্য একটি পথ সংবিধানে খেঁাজা যেতে পারে। সেটি হচ্ছে ৭১ ধারা। এখানে একই ব্যক্তি একই সময় দুই বা ততোধিক নিবার্চনী এলাকার সংসদ সদস্য থাকতে পারবেন না, বলা আছে। কাজেই এই বিধানের স্পিরিট আমলে নিয়ে নিবার্চন কমিশন সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের একাদশ জাতীয় সংসদের আসনটি শূন্য করতে পারে। এ বিষয়ে নিবার্চন কমিশনের নিবার্চন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বলেন, একটা জটিলতা আছে। কিন্তু আইনের স্পিরিট বিবেচনায় নিবার্চন কমিশন আসনটি শূন্য ঘোষণা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে তার আসনটি সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যের মৃত্যুর দিনকেই শূন্য হয়েছে বলে গণ্য করা হবে। আর নিবার্চন হবে আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে।