টাগের্ট সংসদ প্রাণবন্ত করা

জোটের শরিকদের বিরোধী দলে রাখতে চায় আ’লীগ

আওয়ামী লীগের বাইরে মহাজোট ও ১৪ দলের শরিক দলগুলোর সংসদ সদস্য আছেন ৩১ জন। তাদের মধ্যে ওয়াকার্সর্ পাটির্র তিন, জাসদ-ইনুর দুই, তরিকত ফেডারেশনের এক ও জেপি-মঞ্জুর একজন। এছাড়া জাপার ২২ ও বিকল্প ধারার সাংসদ আছেন দুইজন

প্রকাশ | ১১ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

ফয়সাল খান
মহাজোট ও ১৪ দলের শরিকদের জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের আসনে রাখতে চায় শাসকদল আওয়ামী লীগ। মূলত শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত সংসদ উপহার দিতেই এ কৌশল প্রণয়ন করেছে পরপর তিনবার সরকার গঠন করা এ দলটি। আর এ কারণেই নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় শরিক দলের কোনো নেতাকে রাখা হয়নি। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, উন্নত বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরোধী দলগুলো গঠনমূলক সমালোচনা করে সংসদে যে ভ‚মিকা পালন করে থাকে, তেমন আওয়ামী লীগ তাদের শরিক দলগুলোকেও শক্তিশালী বিরোধীদলের ভ‚মিকায় দেখতে চায়। তাই সংসদে বিরোধী দল হিসেবে ভ‚মিকা পালন করতে শিগিরিই শরিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের প্রস্তাব দেবে আওয়ামী লীগ। সূত্র জানায়, আগামী ৩০ জানুয়ারি শুরু হতে যাচ্ছে একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন। এর আগেই জোটসঙ্গী ১৪ দল ও মহাজোটের অন্যন্য শরিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংসদে বিরোধী দল হিসেবে থাকার প্রস্তাব দিতে পারে ক্ষমতাসীনরা। তাছাড়া এর আগেই সংরক্ষিত মহিলা আসন, সংসদীয় দলের উপনেতা নিবার্চনসহ আনুসঙ্গিক সব কাজ শেষ করতে চায় আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পাটির্ (জাপা) একাদশ সংসদে বিরোধী দলের ভ‚মিকায় থাকছে বলে লিখিতভাবে স্পিকারকে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা ও সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় উপনেতা করে প্রজ্ঞাপন জারিও করা হয়েছে। উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের স্বাথের্ অন্যদলগুলোরও সংসদে প্রকৃত বিরোধীদলের ভ‚মিকা রাখা, না রাখার বিষয়ে আগ্রহ জানতে ১৪ দলসহ বাকিদের সঙ্গে শিগগিরই আলোচনায় বসবে আওয়ামী লীগের শীষর্ নেতারা। সূত্র মতে, মহাজোট গঠিত হওয়ার পর থেকে এ পযর্ন্ত তিনটি সংসদের মধ্যে প্রথম দুইবারের মন্ত্রিসভায় শরিক দলের নেতাদের রাখা হয়। একাদশ সংসদ নিবার্চনে জোটগতভাবে অংশ নিলেও তাদের কেউ মন্ত্রিসভায় নেই। তবে রাজনৈতিক মিত্র ও সমমনা হওয়ায় মহাজোটের শরিক দলগুলো জাতীয় সংসদে দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভ‚মিকা পালন করতে পারবে বলে আশা করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। আওয়ামী লীগের বাইরে মহাজোট ও ১৪ দলের শরিক দলগুলোর সংসদ সদস্য আছেন ৩১ জন। এরই মধ্যে তারা সবাই শপথ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৪ দলের সংসদ সদস্য সাতজন (ওয়াকাসর্ পাটিরর্ তিনজন, জাসদ-ইনুর দুজন, তরিকত ফেডারেশনের একজন, জেপি-মঞ্জুর একজন)। এ ছাড়া মহাজোটের শরিক জাপার ২২ ও বিকল্পধারার দুই জন সাংসদ আছেন। সূত্র জানায়, দশম সংসদে জাপা একসঙ্গে সরকারে থাকা ও বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করায় অনেক সময় সমালোচনার মুখে পড়তে হয় দলটিকে। এবারও দলটির অনেকে সরকারে থাকতে চাইলেও দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শুধু বিরোধী দলে থাকার ঘোষণা নিবার্চনের পরপরই দেন। তিনি নিজে বিরোধীদলীয় নেতা হবেন বলে সংসদের স্পিকারকে লিখিতভাবে জানান। জাপার এ অবস্থান ১৪ দলের কোনো কোনো নেতার পছন্দ হয়েছে বলেও জানায় সূত্রটি। তারাও বিরোধীদলে থাকতে আগ্রহী। বিরোধী দলে থাকলে ১৪ দলের শরিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো নিজ দলের সাংগঠনিক অবস্থার দিকে আরো বেশি নজর দিতে পারবে বলে তারা মনে করেন। অপর একটি সূত্র জানায়, বিগত সরকারগুলোয় প্রতিবারই সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করলেও এবার শুধু আওয়ামী লীগের নেতাদের সরকার পরিচালনায় রাখা হয়েছে। তবু নতুন মন্ত্রিপরিষদে ঠঁাই পাওয়ার বিষয়ে আশা ছাড়ছেন না শরিক দলের কেউ কেউ। তারা মনে করেন, বছরখানেকের মধ্যে আবারো মন্ত্রিপরিষদে পরিবতর্ন ও সংযোজন হতে পারে। তখন ১৪ দল থেকে মন্ত্রিসভায় অন্তভুর্ক্ত করা হতে পারে। তাছাড়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব সময়ই জাতীয় বা ঐকমত্যের সরকার গঠিত হয়। ১৯৯৬ সালের নিবার্চনে জয়ী হয়ে তার নেতৃত্বে গঠিত প্রথম সরকারের মন্ত্রিসভায়ও ছিলেন জাপার আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও জাসদের আ স ম আবদুর রব। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নিবার্চনের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারের মন্ত্রিসভায়ও শরিকদের রেখেছেন শেখ হাসিনা। সূত্রমতে, মহাজোটের অন্যন্য দলের মতো নতুন শরিক বিকল্পধারার সঙ্গেও সংসদে বিরোধী দলে থাকার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে আওয়ামী লীগের। তবে বিকল্পধারা সরকারে থাকার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। দলটির সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সরকারের সহায়তা নিয়ে নিবাির্চত হয়ে সংসদে বিরোধীদলে যাওয়া ঠিক নয়। এটা নৈতিকভাবে ভুল।’ এ সব বিষয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, ‘মন্ত্রিসভা গঠনের এখতিয়ার একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর। তিনি যা মনে করেছেন, তা করেছেন। আমরা তাদের অভিনন্দন জানাই। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে কী হয়, তা দেখার অপেক্ষায় থাকি। মন্ত্রিসভায় আমাদের দলের কেউ স্থান না পাওয়ায় জোটের যে মূল উদ্দেশ্য তা ব্যাহত হবে না।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা জোট করেছি। জোট করার অথর্ এই নয় যে, জোটের শরিকদের মন্ত্রী করতেই হবে। ১৪ দল আমাদের দুঃসময়ের শরিক। তারা অতীতে ছিলেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন আশা করি।’