মতিয়া চৌধুরী উপনেতা!

চমক থাকছে সংসদীয় কমিটিতেও

এবার সংসদ উপনেতা হিসেবে দেখা যেতে পারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীকে। শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত মতিয়া চৌধুরী এর আগে তিনবার কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন

প্রকাশ | ১২ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

ফয়সাল খান
একাদশ জাতীয় সংসদে নতুনদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করে চমক সৃষ্টি করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভার মতো জাতীয় সংসদের বিভিন্ন পদেও এবার গুরুত্বপূণর্ পরিবতর্ন আসবে। বিশেষ করে সংসদীয় দলের উপনেতা, ডেপুটি স্পিকার, হুইপ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পকির্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। দলের শীষর্ পযাের্য়র একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র মতে, আগামী ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হচ্ছে। সে সংসদে সরকারদলীয় উপনেতা, চিফ হুইপ, হুইপ হচ্ছেন কারা তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে কারা থাকছেন তা নিয়েও গুঞ্জন চলছে ক্ষমতাসীন জোটে। মন্ত্রিসভার মতো সংসদীয় কমিটিগুলোতেও শরিক দলের নেতাদের না রাখার পক্ষে আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ শীষর্ নেতা। তবে সংসদে শরিকদের ভূমিকা কী হবে তার ওপর সবকিছু নিভর্র করবে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে একমতো ধেঁায়াশায় আছে মহাজোটের শরিকরা। খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনের শুরুতেই স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নিবার্চন করা হবে। এর পর পযার্য়ক্রমে চিফ হুইপ ও হুইপবৃন্দ এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো গঠন করা হবে। স্থায়ী কমিটির সভাপতিদের বলা হয় ‘ছায়ামন্ত্রী’। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় মন্ত্রণালয়গুলো সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে। তাই এসব কমিটিকেও বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে আওয়ামী লীগ। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে কাযর্কর সংসদীয় কমিটি গঠন করতে এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে দলটি। সূত্র জানায়, দশম সংসদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের মধ্যে বেশ কয়েকজন এবারের মন্ত্রিসভায় যুক্ত হয়েছেন। দশম সংসদের অথর্ মন্ত্রণালয়-বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আবদুুর রাজ্জাককে নতুন মন্ত্রিসভার কৃষিমন্ত্রী করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপু মনিকে শিক্ষামন্ত্রী, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়-বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাছান মাহমুদকে তথ্যমন্ত্রী, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সম্পকির্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পকির্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুনশিকে বাণিজ্য মন্ত্রী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদকে প্রবাসী ও বৈদেশিক কমর্সংস্থান প্রতিমন্ত্রী এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়সম্পকির্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেলকে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এই ছয়টি সভাপতির পদে নতুন মুখ আসছে। এর পাশাপাশি অন্যান্য কমিটিতেও বেশ কিছু নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। বিশেষ করে গুরুত্বপূণর্ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদে বড় ধরনের চমক থাকতে পারে। গণভবনের একটি সূত্র জানিয়েছে, সংসদ উপনেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দীঘির্দন ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিÐলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের হাল ধরা এই নেত্রী এবারও দলীয় মনোনয়নে বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু শারীরিক অবস্থার কারণে সম্প্রতি তার চলাফেরায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে সংসদ উপনেতা হিসেবে দেখা যেতে পারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর আরেক সদস্য মতিয়া চৌধুরীকে। শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত মতিয়া চৌধুরী এর আগে তিনবার কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিচ্ছন্ন ভাবমূতির্র এই নেতাকে এবার মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি। এর বাইরে তোফায়েল আহমেদসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার নামও শোনা যাচ্ছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে এবারও দেখা যাবে শিরীন শারমিন চৌধুরীকে। প্রধানমন্ত্রীও একাধিকবার এ বিষয়ে তার মনোভাব জানিয়েছেন। তবে ডেপুটি স্পিকার পদে কে আসছেন তা এখনো পরিষ্কার নয়। তার বতর্মান চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের বাদ পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। এক্ষেত্রে হুইপ পদে নতুন মুখ হিসেবে আসতে পারেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও নুরে আলম চৌধুরী লিটন। দশম সংসদের হুইপদের মধ্যে ইকবালুর রহিম, মাহবুব আরা বেগম গিনিকে এবারও এ পদে দেখা যেতে পারে। দশম সংসদের ৬ হুইপের মধ্যে সাহাবউদ্দিনকে একাদশ সংসদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়েছে। এদিকে আগামী ৩০ জানুয়ারি বিকাল ৩টায় একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে। বুধবার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে এ অধিবেশন আহŸান করেন। শুরুতেই স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নিবার্চন করা হবে। তাছাড়া নতুন সংসদ ও বছরের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ভাষণ দেবেন। সংসদ সচিবালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, স্পিকার-ডেপুটি স্পিকার নিবার্চনের পর অধিবেশন কিছু সময় মুলতবি রাখা হবে। এ সময় সংসদে অবস্থানরত রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে নতুন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার শপথ নেবেন। পরে নবনিবাির্চত স্পিকারের সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হবে। এরপর নতুন স্পিকার সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ অন্যদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব তোলা হবে। ওই দিনই সংরক্ষিত আসনে মনোনীত নারী সংসদ সদস্যদের নামের তালিকা সরকারি দল ও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে পাঠিয়ে দেয়া হবে স্পিকারের কাছে। ৫০টি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে ৪৩ জন, জাতীয় পাটির্র চারজন, অন্যান্য দলগুলোর দুইজন এবং স্বতন্ত্র প্রাথীর্রা মিলে একজনকে মনোনয়ন দিতে পারবে। এরই মধ্যে বিরোধী দল জাতীয় পাটির্র চারজনকে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন দিয়ে স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। আওয়ামী লীগসহ অন্যদের নামের তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দশম সংসদের মতো এবার সংসদে বিরোধী দল থাকছে জাতীয় পাটির্। তবে গত সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের জায়গায় বসছেন জাতীয় পাটির্র চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্বে থাকছেন তার ভাই জিএম কাদের। বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপের দায়িত্ব পালন করবেন মশিউর রহমান রাঙ্গা। প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। নিবাির্চতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন ৩ জানুয়ারি। ক্ষমতাসীন দলের সংসদ নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ৭ জানুয়ারি শপথ নিয়েছেন নতুন সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা। দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৮ জানুয়ারি।