পদ্মা সেতুর নকশা জটিলতার সমাধান

সেতুর ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর পঁাচটি স্প্যান বসানোর পর জাজিরা প্রান্তে পৌনে এক কিলোমিটার কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে।

প্রকাশ | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
পদ্মা সেতু
অবশেষে পদ্মা সেতুর ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের নকশার চ‚ড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। এর ফলে সেতুর পিলার-সংক্রান্ত সব জটিলতা কেটে গেছে। দীঘির্দন ধরেই এ দুটি পিলারের নকশা চ‚ড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল। ঢাকার সেতু ভবনে অনুমোদনের পর মঙ্গলবার সকালে নকশা চ‚ড়ান্ত হয়ে আসে বলে এক প্রকৌশলী নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি সেতুর ৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭ নম্বর পিলারের নকশা চ‚ড়ান্ত অনুমোদন হয় ও অক্টোবর মাসের শেষের দিকে চ‚ড়ান্ত হয় ২৯, ৩০, ৩১ ও ৩২ নম্বর পিলারের নকশা। পদ্মা সেতুর ১১টি পিলারের নকশা জটিলতা কেটে যাওয়ায় দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ। জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তে একই গতিতে কাজ চলবে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের কাজ শুরুর পর ৩টি করে পাইল বসানোর পর কাজ থেমে যায়। এরপর মাওয়া প্রান্তে পিলারের কাজের গতি কিছুটা থেমে গিয়ে জাজিরা প্রান্তে কাজ শুরু হয়। এখন শুরুর দিকে বসানো ৩টি পাইল না সরিয়ে নতুন ৪টি ট্যাম্প পাইল স্থাপন করা হবে। স্ক্রিন গ্রাউটিং পদ্ধতি অবলম্বন করে এ দু’টি পিলারের কাজ সম্পন্ন করা হবে। এ ট্যাম্প পাইলের দৈঘর্্য হবে ১০৪ মিটার। সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পদ্মাসেতু প্রকল্পকে আরও দৃশ্যমান করতে সরকারের বাষির্ক উন্নয়ন কমর্সূচিতে (এডিপি) ৪ হাজার ৩৯৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। তবে খরচ করতে না পারায় সংশোধিত বাষির্ক উন্নয়ন কমর্সূচির (আরএডিপি) বরাদ্দ কমে দঁাড়াচ্ছে ২ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। ফলে এডিপি থেকে আরএডিপিতে পদ্মাসেতুর বরাদ্দ কমছে ১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, মাটির গঠনগত বৈচিত্র্য ও গভীরতার তারতম্যের কারণে পদ্মাসেতুর মাঝনদী ও মাওয়া প্রান্তের এসব পিলার নিয়ে বেশ জটিলতায় পড়ে এ প্রকল্প। নকশা চূড়ান্ত হওয়া পিলারে স্ক্রিন গ্রাউটিং করে সমাধান মিলেছে। পিডিএ (পাইল ড্রাইভিং অ্যানালাইসিস) টেস্টে যেসব পাইল উত্তীণর্ হতে পারে না সেগুলোর জন্য রয়েছে স্ক্রিন গ্রাউটিংয়ের ব্যবস্থা। হাতেগোনা বিশ্বের কয়েকটি সেতুতে এটি ব্যবহার করা হয়েছে। পদ্মানদীর মাটির অবস্থা ভালো না। প্রথমে এখানে বেজ গ্রাউটিং করেও ভালো ফল আসেনি। তাই নতুন করে স্ক্রিন গ্রাউটিং করা হচ্ছে। এসব পিলারের ৭টি করে পাইল ড্রাইভ করা হবে। এর আগে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো দেখা হয়। ভালো ফলাফল আসায় একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের ক্ষেত্রে। সূত্রটি জানায়, স্ক্রিন গ্রাউটিংয়ের জন্য ট্যাম্প পাইল প্রস্তুত ১৬টি। ৮, ৩১, ৩২ নম্বর পিলারের ৮টি পাইল ড্রাইভ সম্পন্ন হয়েছে, বাকিগুলোর কাজও চলছে। নদীতে যে ২৬২টি পাইল বসবে তার মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ১৯০টি পাইল ড্রাইভ। পদ্মাসেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ১৫টি পিলার। চলতি মাসের শেষে সেতুর ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিলারের ওপর ষষ্ঠ স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) ৬এফ বসানোর কথা রয়েছে। তবে নদীতে পানি কম থাকা, নাব্যতা নিরসনে বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজার কাজ করছে। এ স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান হবে সেতুর ৯০০ মিটার। উল্লেখ্য, সেতুর ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর পঁাচটি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে জাজিরা প্রান্তে পৌনে এক কিলোমিটার কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সেতুর কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বসানো হয় প্রথম স্প্যান। এর প্রায় চার মাস পর চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যানটি বসে। এর মাত্র দেড় মাস পর ১১ মাচর্ শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ধূসর রঙের তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়। এর ২ মাস পর ১৩ মে বসে চতুথর্ স্প্যান। আর পঞ্চম স্প্যানটি বসে এক মাস ১৬ দিনের মাথায়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীঘর্ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নিমির্ত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।