বিচ্ছেদের চক্করে ব্রিটেন আস্থার পরীক্ষায় মে

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে
ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে ভোটাভুটিতে ব্রিটিশ পালাের্মন্টের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হারের পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মেকে এখন আস্থা ভোটের পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মে এই পরীক্ষায় ব্যথর্ হলে নিধাির্রত সময়ের তিন বছর আগেই যুক্তরাজ্যকে আরেকটি সাধারণ নিবার্চনে অংশ নিতে হতে পারে। কিন্তু এরপরও ব্রেক্সিট সংকটের সমাধান খুঁজতে হবে যুক্তরাজ্যকে। সে ক্ষেত্রে বিকল্প হতে পারে ব্রেক্সিট প্রশ্নে আরেকটি গণভোট। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্পকোের্চ্ছদের পথরেখার যে পরিকল্পনা টেরিজা মে পালাের্মন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে উপস্থাপন করেছিলেন, মঙ্গলবার ৬৫০ সদস্যের পালাের্মন্টে তা ৪৩২-২০২ ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটেনের পালাের্মন্টের ইতিহাসে এর আগে আর কোনো প্রশ্নে ক্ষমতাসীন দলকে এত বড় হার মেনে নিতে হয়নি। লেবার পাটির্ ও ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পাটির্সহ অন্যান্য বিরোধী দলের এমপিদের পাশাপাশি টেরিজা মের রক্ষণশীল দলের অনেকেই ওই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। ভোটের পরপরই ব্রিটিশ পালাের্মন্টের প্রধান বিরোধীদল লেবার পাটির্র নেতা জেরেমি করবিন সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব তোলেন। ২০১৬ সালের ২৩ জুন যুক্তরাজ্যে এক গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দেশটির চার দশকের সম্পকোের্চ্ছদের রায় হয়। ভোটে হারের পর রক্ষণশীল দলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করলে টেরিজা মে সেই দায়িত্ব নিয়ে বিচ্ছিন্নতার পথরেখা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেন। রাজনৈতিক ও অথৈর্নতিক এই জোট থেকে কোন প্রক্রিয়ায় যুক্তরাজ্য আলাদা হবে এবং এরপর ইইউভুক্ত বাকি ২৭টি রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পকর্ কেমন হবে, সেই পথ বের করার জন্য সময় নেয়া হয় ২১ মাস। আগামী ২৯ মাচর্ সেই সময়সীমা উত্তীণর্ হওয়ার আগে যুক্তরাজ্যকে তার পরিকল্পনা চ‚ড়ান্ত করতে হবে। সেই লক্ষ্যে ইইউর সঙ্গে আলোচনা করে তৈরি করা খসড়া চুক্তি মঙ্গলবার পালাের্মন্টের ভোটাভুটিতে তুলেছিলেন মে। হাউস অব কমন্সে এই ভোট হওয়ার কথা ছিল গত ডিসেম্বরেই। কিন্তু নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে প্রধানমন্ত্রী মে তা পিছিয়ে দেন। মের আশা ছিল, হয়ত এই সময় কিছু এমপির সমথর্ন তিনি আদায় করতে পারবেন। কিন্তু সেটা যে হচ্ছে না, তা এমপিদের কথায় আগেই বোঝা গিয়েছিল। একটি আন্তজাির্তক সংবাদমাধ্যম মঙ্গলবার ভোটের আগে লিখেছিল, ভোটাভুটির ফল কী হবে, সেটা নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই। টেরিজা মেকে কতটা বড় ব্যবধানে হারতে হচ্ছে, সেটাই দেখার বিষয়। বিবিসি লিখেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার কথা ২৯ মাচর্ মধ্যরাতে। সেই হিসাবে সময় আছে আর মাত্র ৭৩ দিন। কিন্তু সেই বিচ্ছেদ কীভাবে হবে, তা আবার অনিশ্চিত করে দিল পালাের্মন্টের ভোটাভুটিতে এমপিদের সিদ্ধান্ত। ‘সাধারণত এ ধরনের বড় পরাজয়ের পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীরা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তবে বলাই বাহুল্য, এটা সাধারণ কোনো পরিস্থিতি নয়,’ লিখেছে বিবিসি। এখন আস্থা ভোটে টিকে গেলে ব্রেক্সিট প্রশ্নে আরেকটি প্রস্তাব আগামী সোমবার সামনে আনার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে। তবে সেই প্রস্তাব কেমন হবে- সে বিষয়ে কোনো ধারণা কেউ দিতে পারেননি। এতেও যদি এমপিরা মন না বদলান, তাহলে কয়েকটি বিকল্প তার সামনে থাকবে। এর একটি হলো ‘নো ডিল ব্রেক্সিট’। অথার্ৎ, ২৯ মাচর্ যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাবে, তবে কোনো চুক্তি হবে না। সে ক্ষেত্রে বিচ্ছেদ হবে হুট করেই, বিচ্ছেদ-পরবতীর্ সম্পকর্ কেমন হবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কর কাঠামো কেমন হবে, ক‚টনৈতিক সম্পকের্র ধরনই বা কী হবে- সেসব বিষয় অনিধাির্রতই থেকে যাবে। টেরিজা মে আস্থা ভোটে হেরে গেলে দেখা হবে, তার দল বিকল্প একটি সরকার গঠন করার মতো অবস্থায় আছে কিনা। তা সম্ভব হলে নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী নতুন সরকার গঠন করে ব্রেক্সিটের পুরনো লড়াইয়ে ফিরবেন। আর কনজারভেটিভ পাটির্ নতুন কোনো সরকার গঠন করতে না পারলে দেখা হবে বিরোধীদল থেকে কেউ সরকার গঠন করতে পারে কিনা। সে ক্ষেত্রে নতুন সরকারকে ১৪ দিনের মধ্যে আস্থার প্রমাণ দিতে হবে। কনজারভেটিভ পাটির্র বদলে অন্য কোনো দল সরকার গঠন করলেও একই সমস্যা সামলাতে হবে তাদের, আর সেটা ব্রেক্সিট। অন্য কোনো দল সরকারে না এলে ২৫ কাযির্দবস পর নতুন একটি সাধারণ নিবার্চনের মুখোমুখি হতে হবে ব্রিটেনের মানুষকে, যদিও টেরিজা মের বতর্মান সরকারের মেয়াদ আছে ২০২২ সাল পযর্ন্ত। সরকারে যারাই আসুক, তারা নতুন প্রস্তাব নিয়ে ইইউর সঙ্গে দর কষাকষিতে যেতে পারে, কিন্তু সে জন্য দরকার সময়। ইইউর দেয়া চ‚ড়ান্ত সময়সীমা ২৯ মাচর্ থেকে আরও বাড়িয়ে নেয়ার কথাও তারা ভাবতে পারে। আরও একটি বিকল্প রয়েছে, আর সেটি হলো আরেকটি গণভোট। ব্রিটেনের নাগরিকদের কাছে আবারও জানতে চাওয়া হবে- তারা সত্যিই ব্রেক্সিট চান কিনা। সে জন্যও ইইউর কাছে বাড়তি সময় চেয়ে নিতে হবে।