ডাকসু নিবার্চনেও জোটের ভাবনা

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় শিক্ষাথীর্ অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ একসঙ্গে নিবার্চন করার ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শরু করেছে

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
এসএম মামুন হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নিবার্চনকে ঘিরে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক সব ছাত্রসংগঠন এক প্ল্যাটফরমে দঁাড়িয়ে নিবার্চনের কথা ভাবছে। যদিও কোনো পক্ষ এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি, তবে সংগঠনগুলোর ভেতরের সূত্র বলছে, তারা এ ধরনের বিষয় নিয়ে এরই মধ্যে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। তাদের অভিযোগ, সরকারি পক্ষ ক্যাম্পাসে এতটাই বৈরি পরিবেশ তৈরি করেছে যে, তাদের সামনে এর বিকল্পও নেই। তবে সরকারি দল সমথির্ত ছাত্রসংগঠনের ভাষ্য, তারা ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হতে দেবে না। বিরোধী প্রধান ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল দীঘির্দন ধরেই ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছে। হলগুলোতে থাকা সংগঠনটির কমীর্রা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রাখতে বাধ্য হন। অতীতে ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনটির যে বিশাল কমীর্ বাহিনী ছিল, এতেও এখন অনেকটা ভাটার টান চলছে। ফলে বতর্মান বাস্তবতায় দেশের এক সময়ের প্রভাবশালী ছাত্রসংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এখন বেশ দুবর্ল অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে জনশক্তি কম হলেও শিক্ষাথীর্বান্ধব কমর্সূচির মাধ্যমে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সুসম্পকর্ রেখে এগিয়ে চলছে বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলো। অল্প লোক হলেও প্রতিনিয়তই মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষাথীের্দর নিজেদের অধিকারের কথাটি জানিয়ে দিতে ভোলেন না তারা। দেয়াল লিখন, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনের মাধ্যমে কখনো আলাদা আলাদা আবার কখনো বামপন্থি ছাত্রজোটের মাধ্যমে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সব সময়ই ক্যাম্পাসজুড়ে সরব এসব বামপন্থি ছাত্রনেতারা। এই দুইপক্ষের বাইরেও কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের সাধারণ শিক্ষাথীের্দর কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অজর্ন করেছে বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষাথীর্ অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। ওই পরিষদের শান্তিপূণর্ কমর্সূচিতে দফায় দফায় হামলা ও এর কেন্দ্রীয় নেতাদের মারধর করে সারাদেশে নিন্দিত হয়েছিল ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। এসব হামলার পর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং শান্তিপূণর্ কমর্সূচি করতে যাওয়া কোটা আন্দোলনের নেতাদের পুলিশি মামলা, রিমান্ডের শিকার হতে হয়। এসব কারণে যারা ছাত্রলীগের বাইরে খোদ সরকারের সঙ্গেও তীব্র বিবাদে জড়িয়ে পড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা। এখন তারাও ছাত্রদল এবং বামপন্থিদের মতো ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে একটি শক্তি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে দঁাড়িয়ে গেছে। এই সংগঠনের নেতারাও ডাকসু নিবার্চনে অংশ নেয়ার কথা ভাবছেন। ডাকসু নিবার্চনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার বিষয় নিয়ে এরই মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা কয়েক দফা আলোচনা করেছেন। তারা মূলত দুটি বিষয়কে মাথায় নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন বলে জানা গেছে। এর একটি হলো নিবার্চন সুষ্ঠু এবং সহিংসতামুক্ত হবে কিনা, এর নিশ্চয়তা। আর অন্যটি হলো বিরোধী সবপক্ষকে একত্রে নিয়ে একটি প্লাটফরমের মাধ্যমে অগ্রসর হওয়া যায় কিনা। এ বিষয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফরম সাধারণ শিক্ষাথীর্ অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের একজন যুগ্ম আহŸায়ক মো. নাজমুল হাসান সোহাগ যায়যায়দিনকে বলেন, ‘শান্তিপূণর্ পরিবেশে সুষ্ঠু নিবার্চন হলে আমরাও নিবার্চনে অংশ নিতে চাই। এ বিষয়ে আমাদের সবার অবস্থান ইতিবাচক। তবে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে কোন ধরনের পরিবেশ বিরাজ করছে, এর ওপর। বিরোধী সবপক্ষ একসঙ্গে মিলে একটি বিরোধী প্লাটফরম গঠনের বিষয়ও আমাদের এজেন্ডায় থাকতে পারে। তবে এ ধরনের কোনো চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে।’ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ-মাক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রগতিশীল বাম ছাত্রজোটের সমন্বয়ক সালমান সিদ্দিকী যায়যায়দিনকে বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু নিবার্চনের স্বাথের্ অনেকগুলো দাবি জানিয়েছি। এগুলো প্রশাসন মেনে নিয়ে একটি শান্তিপূণর্ নিবার্চনের আয়োজন করবেÑ এটাই আমাদের প্রত্যাশা। বতর্মান যে বাস্তবতার মুখে বাংলাদেশ দঁাড়িয়েছে, সেখানে সবাইকে এক সঙ্গে থাকার কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এখন চরম নিপিড়নের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। আমরা চাই, আইনগতভাবে তাদের যে অধিকার আছে, সেটা তাদের ফিরিয়ে দেয়া হোক। আমরা শুধু ছাত্রদল নয়, সবসময়ই সবার অধিকারের কথা বলে আসছি। কেউ অধিকার বঞ্চিত হোক, সেটা আমরা চাই না। সব বিরোধীদের সঙ্গে এক জোট হবে কিনা, সেটি নিয়ে আমরা আলোচনা করব। আশা করি, ভালো কোনো ফলই বের হয়ে আসবে।’ জোটবদ্ধভাবে নিবার্চনের বিষয়টিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও ইতিবাচকভাবে দেখছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার সিদ্দিকী এ বিষয়ে যায়যায়দিনকে বলেন, ‘আমরা যেহেতু সবাই একটি বিষয়ে একমত যে, দেশের গণতন্ত্র একটি খারাপ সময় পার করছে, তাই গণতন্ত্রের স্বাথের্ আমরা একমঞ্চে আসতে রাজি আছি। জাতীয় পযাের্য়ও আমরা সেটি দেখেছি। দেশের বৃহৎ স্বাথের্ সবাই এক হয়েছেন। ছাত্রদেরও সেটা হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। এ বিষয়ে কোনো পক্ষের সঙ্গে এখনো আমাদের আনুষ্ঠানিক কোনো কথা হয়নি। তবে এ বিষয়টিকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি।’ তবে জোটের বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, ‘ছাত্রদলের বতর্মান যে নেতৃত্ব, তারা কোন দিক দিয়ে ছাত্র, সেটা আগে প্রমাণ করতে হবে। তাদের পরিমাজর্ন-পরিবধের্নর প্রয়োজন রয়েছে। আর কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি নিদির্ষ্ট বিষয়কে সামনে নিয়ে গড়ে উঠেছিল। এখন সে বিষয়ের সমাধান হয়েছে। তাদের অন্য কোনো বিষয় নিয়ে আবার সরব হওয়া চেষ্টা প্রত্যাশিত নয়।’