ইউএনওডিসির প্রতিবেদন

জলবায়ু সংক্রান্ত দুর্যোগের ফলে মানব পাচারের ঝুঁকি বাড়ছে

২০২১ সালে বাস্তুচু্যত হয়েছেন বিশ্বের ২ কোটি ৩৭ লাখ মানুষ

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জলবায়ু সংক্রান্ত নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে বাংলাদেশ এবং ফিলিপাইনে মানব পাচারের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক সংস্থার (ইউএনওডিসি) মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে উদ্বেগজনক এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। সংস্থাটি বলেছে, মানব পাচারের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে জলবায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ। আর এই বিষয়ে প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে, কারণ সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্র ক্রমবর্ধমান বাস্তুচু্যত মানুষকে শোষণ করছে। প্রতিবেদন মতে, বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আর টাইফুনের আঘাতে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচু্যত হওয়ার পর মানবপাচার বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানব পাচারের ঘটনা বৃদ্ধির জন্য আরেকটি বড় কারণ ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ। আফ্রিকার দেশ ঘানায় খরা এবং বন্যা, ক্যারিবীয় অঞ্চলে হ্যারিকেনের আঘাত ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিও অনেক মানুষকে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করেছে। ইউএনওডিসি বলেছে, 'জলবায়ু পরিবর্তন মানব পাচারের ঝুঁকি ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি করছে।' গেস্নাবাল ট্রাফিকিং অন পারসন রিপোর্ট-২০২২ শীর্ষক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের মাদক বিষয়ক এই সংস্থা বলেছে, মানব পাচারের ঘটনায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের পদ্ধতিগত বৈশ্বিক বিশ্লেষণের ঘাটতি থাকলেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের স্থানীয় পর্যায়ের গবেষণায় মানব পাচারের মূল কারণ হিসেবে আবহাওয়াজনিত বিপর্যয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইউএনওডিসি ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ১৪১টি দেশের সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে মানবপাচার বিষয়ক প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এ ছাড়া প্রতিবেদন তৈরিতে বিভিন্ন দেশের আদালতের মানবপাচার সংক্রান্ত ৮০০টি মামলার বিশ্লেষণকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরিদ্র খামারি, মৎস্যচাষি ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের সদস্য যারা প্রধানত প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ভয়াবহ হয়েছে। প্রতিবেদনের প্রধান লেখক ফ্যাবরিজিও স্যারিকা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, একবার নিজেদের জীবিকা নির্বাহের বন্দোবস্ত থেকে উৎখাত হলে লোকজন তাদের সম্প্রদায় থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। আর এসব লোকজনই মানবপাচারকারীদের সহজ শিকারে পরিণত হন। কেবল ২০২১ সালেই জলবায়ু-সংশ্লিষ্ট বিপর্যয়ের কারণে বিশ্বজুড়ে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচু্যত হয়েছেন ২ কোটি ৩৭ লাখ মানুষ। একই সময়ে আরও অসংখ্য মানুষ তাদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সব অঞ্চল ক্রমবর্ধমান হারে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে আছে। এর ফলে লাখ লাখ মানুষ অভিবাসনের পথে শোষণের উচ্চ ঝুঁকির মুখোমুখি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সংঘাতের কারণে পাচারের শিকার বেশিরভাগ মানুষই আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের নাগরিক। একইসঙ্গে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের কারণে লাখ লাখ মানুষ দেশটি ছেড়ে পালিয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সম্ভাব্য আরেকটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। সংস্থাটির মানবপাচার ও অভিবাসী চোরাচালান বিভাগের প্রধান ইলিয়াস চ্যাটজিস ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, 'যুদ্ধ এবং অস্থিতিশীলতার কারণে মানবপাচার মোকাবিলা করাই এখন চ্যালেঞ্জ।' তিনি বলেন, ইউক্রেনের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোর সহায়তা এবং ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ।