মগবাজার বিস্ফোরণ : পরিকল্পিত নাশকতার গন্ধ পাচ্ছে গোয়েন্দারা

পুলিশের মামলা দায়ের দগ্ধদের অবস্থা উন্নতির দিকে

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ঢাকার মগবাজারে বিস্ফোরণে পাঁচজনের আহত হওয়ার ঘটনায় নাশকতার গন্ধ পাচ্ছে গোয়েন্দারা। বিস্ফোরণের ঘটনাটি পরিকল্পিত হতে পারে বলে মনে করছে তারা। ড্রামে বিস্ফোরক পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল না, পরিকল্পিতভাবে রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পেতে রাখা বিস্ফোরক দিয়ে যেভাবে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, মগবাজারে সেই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকতে পারে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা। এ ঘটনায় রমনা মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা করেছে। তবে মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনাস্থলের পাশেই সেন্ট ম্যারি'স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও রমনা কিডস কিন্ডারগার্টেন স্কুল এবং তার পাশেই মেট্রো ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও ফার্স্ট ফার্মা নামে ওষুধের দোকানটি ছিল। বিস্ফোরণের শব্দে স্কুলের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। বিস্ফোরণের সময় দুই স্কুলেই ক্লাস চলছিল। পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুই স্কুলে শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। সিটিটিসি প্রধান জানান, এমন একটি স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিস্ফোরণের ঘটনাটি সত্যিই রহস্যজনক। আর বিস্ফোরণটিও বড় ধরনের ছিল। যা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও বিস্ফোরণের আঘাতের চিহ্ন দেখে সহজেই ধারণা করা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সার্বিক তদন্তে পর্যালোচনা করে মনে হচ্ছে পস্নাস্টিকের ড্রামটিতে আগে থেকে বিস্ফোরক দ্রব্য রাখা ছিল। তবে এটাতে দেশীয় ককটেল নাকি অন্য কোনো মারাত্মক ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য ছিল সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। ঘটনার পরপরই বম্ব ডিসপোজাল টিম পুরো এলাকায় তলস্নাশি করেছে। তলস্নাশিতে আলামত হিসেবে বিস্ফোরক দ্রব্য পাওয়া গেছে। ডিআইজি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ড্রামে আগ থেকেই বিস্ফোরক রেখে দেওয়া বা পেতে রাখা হয়েছিল। সেটিই বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরক কে বা করা রেখেছিল তাদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। বিস্ফোরক রাখার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পারলে প্রকৃত মোটিভ বা উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা যাবে। দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পেতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে ব্যাপক হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি লক্ষ করা যায়। নাশকতাকারীরা বোমা পুঁতে রেখে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে, নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়ে থাকে। সাধারণত বিভিন্ন জঙ্গি বা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে এ ধরনের হামলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের কোনো গোষ্ঠী একাধিক কোনো নাশকতাকারী দল সম্মিলিতভাবে সেই কৌশল অবলম্বন করে মগবাজারে এ ধরনের নাশকতামূলক ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বড় মগবাজার ওয়্যারলেস মোড়ে ১০-এ/১ নম্বর সেন্ট মেরি'স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, মেট্রো ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও ফার্স্ট ফার্মা লিমিটেড নামে ওষুধের দোকানের সামনে বিকট শব্দে একটি পস্নাস্টিকের ড্রামে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে আহতদের মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আছেন, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম (৩৬), ডিপিডিসির কর্মচারী তারেক (২০), আবুল কালাম (২৫) ও শাহীন (৩০) এবং পথচারী আতিকুল ইসলাম (১৫)।