নীরব প্রতিবাদে পতন হবে ক্ষমতাসীনদের

রাজধানীতে পদযাত্রায় মির্জা ফখরুল

প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ১০ দফা দাবিতে শনিবার রাজধানীর বাড্ডায় সুবাস্ত মার্কেটের সামনে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি -ফোকাস বাংলা
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে রাজধানীর বাড্ডা থেকে মালিবাগের আবুল হোটেল পর্যন্ত সোয়া চার কিলোমিটার 'নীরব পদযাত্রা' করেছে বিএনপি। শনিবার দুপুর আড়াইটায় বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনের সড়ক থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়ে বিকাল ৪টায় মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে এসে শেষ হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে চারদিনের কর্মসূচির প্রথম দিনের এই পদযাত্রা কর্মসূচির উদ্বোধন করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নীরব যাত্রার মধ্য দিয়ে নতুন এক আন্দোলন শুরু হলো। এই নীরব প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে ঢাকা শহরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে 'ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে' সরে যেতে বাধ্য করা হবে। এই পদযাত্রার মধ্য দিয়ে এই সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই- আর কালবিলম্ব না করে পদত্যাগ করুন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন এবং নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করার ক্ষমতা দিন। 'অন্যথায় আপনাদের অত্যন্ত ভারাক্রান্তভাবে চলে যেতে হবে, পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না'। দুপুর আড়াইটার দিকে তার বক্তব্যের পরে নেতাদের নিয়ে পদযাত্রা শুরু করেন বিএনপি মহাসচিব। পদযাত্রায় নেতাকর্মীদের হাতে ছিল সরকার পদত্যাগ, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির লেখা সংবলিত বিভিন্ন পস্ন্যাকার্ড এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা। মহানগর উত্তর বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী এ 'নীরব' পদযাত্রার অংশ নেয়। কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেতাকর্মী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে দুপুর বারোটার পর থেকেই বাড্ডা এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। এ সময় রাস্তার এক পাশে যান চলাচল সীমিত হয়ে যায়। সোয়া দুইটায় পবিত্র কোরান তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উলস্নাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় পদযাত্রার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, চাল, ডাল, ডিম, তেল, লবণের দাম বেড়ে গেছে। নিম্নবিত্ত, শ্রমিকরা স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারছে না। তারা চাল-ডাল-তেল লবণ কিনতে পারছে না। শুধু তাই নয়, আজকে কথা বলতে গেলে গ্রেপ্তার করা হয়, প্রতিবাদ করতে গেলে মামলা হয়, মিথ্যা মামলা-গায়েবি মামলা দিয়ে সমস্ত বিরোধী দলকে আটক করে রাখা হচ্ছে। সমগ্র দেশকে একটা কারাগারে পরিণত করেছে। তিনি আরও বলেন, দেশে কারও ভোটের অধিকার নাই। সেই অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে, কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা তা প্রত্যাহার করতে হবে, যারা কারাগারে আছেন তাদের মুক্ত করতে হবে, দেশে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে কোনো দিন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সেই কারণে আওয়ামী লীগ সরকারকে, শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, এই সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম এই সড়কের পদযাত্রা শুরুর আগ পর্যন্ত যানবাহন চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক থাকলেও নেতাকর্মীর 'নীরব' মিছিলে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। অনেক যাত্রী হেঁটে গন্তব্যে যায়। এই কর্মসূচি উপলক্ষে বাড্ডা-মালিবাগ সড়কে ব্যাপক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর আবদুল মঈন খান বলেন, দেশের জনগণ এখন এই সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে শুরু করেছে। বিএনপির দশ বিভাগীয় সমাবেশে তাদের উপস্থিতি সেটাই প্রমাণ করে। এবার সরকারকে বিদায় নিতে হবে, সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। এজন্য রাজপথে নেমেছি, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকব। পদযাত্রায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ছিলেন মীর সরাফত আলী সপু, নাজিম উদ্দিন আলম, তাবিথ আউয়াল, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, সাইফুল আলম নীরব, মীর নেওয়াজ আলী, বাবুল আহমেদ, আবদুল আলিম নকি, এজিএম শামসুল হক, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএস জিলানি, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ। মহানগর বিএনপি ঘোষিত দ্বিতীয় পদযাত্রা আগামীকাল সোমবার যাত্রাবাড়ী থেকে শ্যামপুর অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার গাবতলী টার্মিনাল থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এবং বুধবার মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত হবে। সব কর্মসূচি শুরু হবে বেলা ২টায়।