১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য

দুর্নীতি দমনের কঠোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ বাংলাদেশ গত এক দশকে ৬.৩ শতাংশের বেশি হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেয়েছে

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:১১

যাযাদি রিপোটর্
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রথমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যান। এ সময় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও কমর্কতার্রা ফুল দিয়ে তাকে স্বাগত জানান Ñবাসস

‘উন্নত সমৃদ্ধ’ দেশ হওয়ার পথে ১০ শতাংশ জিডিপি প্রবিৃদ্ধির লক্ষ্য অজের্ন দুনীির্তর মূলোৎপাটন করতে সরকারের বাতার্ প্রশাসনের তৃণমূল পযর্ন্ত পৌঁছে দিতে কমর্কতাের্দর নিদের্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দুনীির্তর ‘প্রয়োজন’ যাতে না হয় সেজন্য সরকার বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন পরিবতর্ন আনতে হবে মানসিকতায়; দুনীির্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর বৃহস্পতিবার প্রথমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এসে কমর্কতাের্দর সঙ্গে বৈঠক করে এই নিদের্শনা দেন সরকারপ্রধান। গত ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেন শেখ হাসিনা। এবার মন্ত্রিপ?রিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, প্র?তিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বা?হিনী বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালা?নি ও খ?নিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ম?হিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় নিজের হাতে রেখেছেন তিনি। জনপ্রশাসনের ঊধ্বর্তন কমর্কতাের্দর উপস্থিতিতে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৭-২০১৮ অথর্বছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৭ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা হলেও অজির্ত হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আগামী পঁাচ বছরে প্রবৃদ্ধির হার সরকার ১০ শতাংশে নিয়ে যেতে চায়। ‘আমি বলব, আমরা যে লক্ষ্য স্থির করেছি, সেটা আমরা করতে পারব। সেজন্য দরকার সুশাসন। দরকার দুনীির্তমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলা।’ শেখ হাসিনা বলেন, “যেহেতু আমি বেতন, ভাতা, সুযোগ-সুবিধা এত বেশি বৃদ্ধি করে দিয়েছি, সেক্ষেত্রে আমি মনে করি যে এখন আর ওই দুনীির্তর প্রয়োজন নেই, যা প্রয়োজন সেটা তো আমরা মেটাচ্ছি। তাহলে দুনীির্ত কেন হবে? ‘এখানে মানুষের মন-মানসিকতার পরিবতর্ন করতে হবে এবং সুনিদির্ষ্ট একটা নিদের্শনায় আপনাদের যেতে হবে একেবারে তৃণমূল পযার্য় পযর্ন্ত। কেউ যদি দুনীির্ত করে, সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’ দ্রæত বিকাশমান বাংলাদেশের অথর্নীতি আকারের দিক দিয়ে এখন বিশ্বের ৪১তম অবস্থানে উঠে এসেছে। জিডিপির আকার দঁাড়িয়েছে ২৭৫ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ বাংলাদেশ গত এক দশকে ৬.৩ শতাংশের বেশি হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেয়েছে। মাথাপিছু আয় বাড়ায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের বিবেচনায় নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসাচর্ ‘সিইবিআর’ বলছে, অথর্নীতির এই গতি ধরে রাখতে পারলে ২০৩৩ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহৎ অথর্নীতির দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার অথৈর্নতিক ব্যবস্থার আধুনিকায়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও ব্যাপক মাত্রায় দুনীির্ত এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বড় দুটি ঝুঁকির বিষয় হয়ে রয়েছে বলে সিইবিআরের গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় প্রতিদিনই দুনীির্তর বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা বলে আসছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিদশের্ন শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখে অথর্নীতির সুফল সবার কাছে পৌঁছে দিতে সুনিদির্ষ্ট কমর্সূচি নিচ্ছে তার সরকার। ‘সেগুলো যদি আমরা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, অবশ্যই আমরা (১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি) অজর্ন করতে পারব। সেক্ষেত্রে আমরা কতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি আমরা যেমন ঘোষণা দিয়েছি, তেমনি দুনীির্তর বিরুদ্ধেও জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা দিয়েছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুনীির্ত যাতে না হয় সেজন্যই সরকারি কমর্কতার্-কমর্চারীদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা ‘ব্যাপকভাবে’ বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি কমিয়ে জীবনযাত্রায় স্বস্তি আনা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকারের দায়িত্ব নেয়, তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ’প্রায়’ দুই অঙ্কের ঘরে। এখন তা ৪ দশমিক ৪ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে আছে। ‘উচ্চ প্রবৃদ্ধি আর নিম্ন মূল্যস্ফীতির সুফলটা কিন্তু একেবারে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়। মানুষ এর সুফলটা ভোগ করে। এটাই আমাদের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় সুফল। কারণ অনেক দেশ অনেক দ্রæত প্রবৃদ্ধি অজর্ন করে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তাদের মূল্যস্ফীতিও অনেক বেড়ে যায়। সেখানে আমরা এটা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি।’ দুনীির্ত প্রতিরোধের পাশাপাশি প্রশাসনে শুধু বয়সের ভিত্তিতে পদোন্নতি না দিয়ে দক্ষতার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার নিদের্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। ‘কে কত বেশি কাজ করবে, সততার সঙ্গে কাজ করবে সেগুলি সব বিবেচনা করে কিন্তু পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে।’ এ ছাড়া পদ ফঁাকা পেলেই পদায়ন না করে যার যে বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ রয়েছে তাকে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে পদায়ন করার নিদের্শ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সবের্ক্ষত্রে ডিজিটাল সুবিধার বিস্তৃতি ঘটানো গেলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব। ‘একটা সময় বাংলাদেশে দরপত্র বাক্স ছিনতাই হতো। আমরা ই-টেন্ডারে চলে গেলাম। এখন আর টেন্ডার বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা শোনা যায় না। এভাবেই আমি মনে করি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা অনেকটা নিশ্চিত করা যায়। আমরা সেটাও করব।’ দেশের অগ্রগতি ধরে রাখতে প্রশাসনের কমর্কতার্-কমর্চারীদের দায়িত্বের কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি। ‘আজকে সারাবিশ্বে একটা সম্মানজনক জায়গায় আসতে পেরেছি। এখন সেই পাকিস্তানও বলে আমাদেরকে বাংলাদেশ বানিয়ে দাও। আজকে কিন্তু আর ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলার সাহসও তাদের নেই। বলতেও তারা পারবে না। কারণ আমরা অনেক এগিয়ে আছি। এই এগিয়ে যাওয়াটা, এই যাত্রাটা আমাদের কিন্তু অব্যাহত রাখতে হবে।’ কমর্কতাের্দর উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সরকার পরিচালনার মূল জায়গাটা হলো আপনাদের, এই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেটা মাথায় রেখে আপনাদের ওপর অপির্ত দায়িত্ব আপনারা ভালোভাবে পালন করবেন।’ প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতার শুরুতেই সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কথা স্মরণ করেন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও সচিব ফয়েজ আহমেদ সভার শুরুতে বক্তব্য দেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কাযার্লয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান ও প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।