খালেদার আইনজীবীকে ফেরত পাঠাল ভারত

ঢাকায় বিস্মিত ও মমার্হত বিএনপি

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
লডর্ আলেকজান্ডার কালার্ইল
দুনীির্ত মামলায় দÐিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনি পরামশর্ক ব্রিটিশ আইনজীবী লডর্ আলেকজান্ডার কালার্ইলকে ভারতে ঢুকতে না দিয়ে দিল্লির বিমানবন্দর থেকেই লন্ডনে ফেরত পাঠিয়েছে কতৃর্পক্ষ। শুক্রবার নয়া দিল্লিতে ‘ফরেন করেসপন্ডেন্ট ক্লাবে’ খালেদার দÐ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আসার কথা ছিল কালার্ইলের। এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, বুধবার দিল্লি বিমানবন্দরে নামার পর ‘উপযুক্ত ভিসা নিয়ে না আসার’ কারণ দেখিয়ে কালার্ইলকে ফেরত পাঠানো হয়। পরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেন, যুক্তরাজ্যে লডর্ সভার সদস্য এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আইনজীবী আলেক্স কারলাইল ভারত ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ‘বিভেদ সৃষ্টির’ উদ্দেশ্য নিয়ে ভারতে আসতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, কালার্ইল দুই দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করতে চাইছেন এমন মনে করার যথেষ্ট সঙ্গত কারণ আছে। সফরের প্রকৃত উদ্দেশ্য গোপন রেখে তাই তিনি ভারতে আসতে চেয়েছিলেন। সেই কারণেই তার ভিসা বাতিল করা হয় এবং তাকে বুধবার রাতে ভারতে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বুধবার রাতে ভারতে নেমেও পরের বিমানে লন্ডন ফিরে গিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলন করে কালার্ইল পাল্টা জানান, ভারতের লজ্জিত হওয়া উচিত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক চাপের মুখে যেভাবে তারা নতি স্বীকার করল, ৭০ বছর বয়সী এক সাংসদের সঙ্গে যে আচরণ করল, তার কৈফিয়ত দেয়া উচিত। তিনি বলেন, ভারতের গণতন্ত্রের প্রতি তার যাবতীয় শ্রদ্ধা শেষ হয়ে গেছে। তাকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটল, তা নিয়েও তিনি শিগগিরই লন্ডনে সংবাদ সম্মেলন করবেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী আলেক্স কারলাইলকে নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই ভারত ও বাংলাদেশের রাজনীতি সরগরম ছিল। বাংলাদেশ তাকে সে দেশে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না বলে ভারতে এসে তিনি ওই দেশের বিচারব্যবস্থা ও রাজনীতির ‘অবস্থা ব্যাখ্যার’ উদ্যোগ নেন। লন্ডন থেকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানাচ্ছিলেন খালেদা জিয়াকে কীভাবে ‘সাজানো মামলায়’ ফঁাসানো হচ্ছে ও রাজনৈতিক কারণে হেনস্তা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ বলেই তিনি ভারতে এসে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার কথাও জানিয়েছিলেন। আলেক্স কারলাইল যাতে ভারতের মাটিতে দঁাড়িয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধাচরণ করতে না পারেন, সেজন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। বলা হয়, বাংলাদেশ যেমন ভারতবিরোধী প্রচারের জন্য তার জমি ব্যবহার হতে দেয় না, ভারতেরও তেমন করা উচিত। তা ছাড়া, সাকর্ সনদের দৃষ্টান্ত দেখিয়েও বাংলাদেশ চাপ সৃষ্টি করে। এরপর ভারতও নড়েচড়ে বসে। সরকারিভাবে বৃহস্পতিবার বলা হয়, কালার্ইলের ভিসা যে বাতিল করা হয়েছে তা তাকে আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা সত্তে¡ও বুধবার রাতে কালার্ইল ভারতে আসেন। তার আগে দিল্লির ‘ফরেন করেসপন্ডেটস ক্লাব’ (এফসিসি) তাকে সময় দিয়েছিল। বাংলাদেশের আপত্তি ও ভারতের চাপে (এফসিসি) তা বাতিল করে দেয়। কালার্ইল তখন ঠিক করেন, রাজধানীর এক পাঁচতারা হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করবেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার দিল্লি নামার সঙ্গে সঙ্গে তাকে জানানো হয় তার ভিসা বাতিল করা হয়েছে। লন্ডনে ফিরে ভিডিও কনফারেন্স মারফত তিনি বলেন, দিল্লি নামার পর দেখি মোবাইলে ভিসা বাতিলের বাতার্। অভিবাসন দপ্তর জানাল তাকে ভারতে ঢুকতে দেয়া হবে না। অভিবাসন কমীর্রা খুবই ভদ্র ও আন্তরিক। আচরণও চমৎকার। কিন্তু তাদের কাছেও ভিসা বাতিলের কোনো জবাব ছিল না। কালার্ইলের এই অভিযোগের জবাব প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দেন রবীশ কুমার। তিনি বলেন, এই ধরনের কাজের জন্য যে ধরনের ভিসা নেয়ার প্রয়োজন, কালার্ইল তা নেননি। তিনি ‘বিজনেস ভিসা’ নিয়ে এখানে এসে যা করতে চাইছিলেন তা আর যাই হোক ব্যবসাসংক্রান্ত নয়। কালার্ইলের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি প্রচার করা হয়, তা দেখিয়ে মুখপাত্র বলেন, এই কাজের জন্য তাকে ভিসা দেয়া হয়নি। ভিসা বাতিলের খবরও তাকে আগেভাগে জানানো হয়েছিল। রবীশ কুমার বলেন, তিনি নিজেও জানতেন যে তাকে এজন্য ঢুকতে দেয়া হবে না। তাই ফেরার টিকিট সঙ্গে করেই তিনি দিল্লি নেমেছিলেন। বস্তুত, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে কালার্ইল দিল্লি নামেন বুধবার রাত এগারোটা নাগাদ। লন্ডনগামী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিমানে ওঠেন রাত একটা পঞ্চাশে! সংবাদ সম্মেলনে কালার্ইল বলেন, সাহায্যের জন্য দিল্লি নেমে ব্রিটেনের ডেপুটি হাইকমিশনারকে তিনি ফোন করেছিলেন। কিন্তু ডেপুটি হাইকমিশনার নাকি তাকে বলেন, তিনি অসহায়। ভারতের সিদ্ধান্ত নড়চড় হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। রবীশ কুমার বলেন, কালার্ইলের উদ্দেশ্যই ছিল ভিন্ন। তিনি চাইছিলেন ভারত ও বাংলাদেশের সম্পকের্ চিড় ধরাতে। ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করাতে। বিশেষ করে বাংলাদেশের বিরোধী দলের সঙ্গে ভারতীয় নেতৃত্বের। রবীশ জানান, যখনই ভারতীয় নেতারা বাংলাদেশ সফর করেছেন, তা তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোন কিংবা প্রধানমন্ত্রী, সবসময় বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। আলোচনা করেছেন। কালার্ইল সেই সম্পকর্ নষ্টের চেষ্টায় ছিলেন। মুখপাত্র বলেন, পড়াশোনার ভিসা নিয়ে কেউ যেমন চাকরি করতে পারেন না, তেমনই বিজনেস ভিসা নিয়ে রাজনৈতিক প্রচার করা যায় না। দিল্লি এসে যা তিনি করতে চাইছিলেন, লন্ডনে বসেও তা করতে পারতেন। রবীশ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, দেশের আইন মানতে সবাই বাধ্য। বিএনপি বিস্মিত মমার্হত এদিকে খালেদা জিয়ার আইনি পরামশর্ক ব্রিটিশ আইনজীবী লডর্ আলেকজান্ডার কালার্ইলকে ভারতে ঢুকতে না দেয়ার ঘটনায় বিস্মিত ও মমার্হত হয়েছে বিএনপি। দুপুরে এক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্রিটিশ ‘হাউজ অব লডর্স’ এর সদস্য লডর্ কালার্ইলকে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়ার খবর জেনে আমরা বিস্মিত হয়েছি। তাকে ভারতে প্রবেশ করতে না দেয়ায় আমরা মমার্হত।’ ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে মুক্তচিন্তা অনুশীলনের সঙ্গে এই ঘটনা সামঞ্জস্যপূণর্ নয় বলে আমরা মনে করি।’ মিজার্ ফখরুল ইসলাম বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা মনে করি যে, বাংলাদেশের অনিবাির্চত সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতাথর্ করার জন্য অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে এদেশে গণতন্ত্র অনুশীলনে যে বাধা সৃষ্টি করেছে, তার প্রতিবাদ জানানোর জন্য বিশ্বখ্যাত আইনজীবী লডর্ কালার্ইল দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশ সরকার তাকে ভিসা না দেয়ার কারণেই তিনি ভারতে আসতে চেয়েছিলেন। তাকে ভারতে প্রবেশ করতে না দেয়ায় আমরা মমার্হত।’ এতে আরও বলা হয়, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশে চলমান স্বৈরতান্ত্রিক দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণের অব্যাহত আন্দোলনের প্রতি মুক্ত বিশ্বের সমথর্ন থাকবে।’