দেশের প্রথম পাতাল রেলের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

আন্দোলন-সংগ্রাম করে কেউ কিছু করতে পারবে না

'বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরেকটি মাইলফলক'

প্রকাশ | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচল নতুন শহর এলাকার রূপগঞ্জে দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল এমআরটি লাইন ১-এর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন -স্টার মেইল
দেশবাসীকে আবারও কৃচ্ছ্র সাধনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্য সংকটসহ বিশ্বে চলমান অস্থিরতার কথা বিবেচনা করে সবাইকে হিসাব করে চলতে হবে। সবকিছুর দাম বেড়েছে। সবাইকে অনুরোধ করব কৃচ্ছ্র সাধন করতে, সাশ্রয়ী হতে। পানি, বিদু্যৎ, জ্বালানি তেল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। সেই সঙ্গে 'আমরা আছি, সমস্যা হলে দেখব' উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন। বৃহস্পতিবার ম্যাসর্ যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি-১) প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রথম পাতাল রেলের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, 'অনেক দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে যাতে এই অবস্থা না হয়।... আমাদের এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে। এখন পর্যন্ত সব কিছু ম্যানেজ করে যাচ্ছি, করে যাব। তবে আপনাদেরই সাশ্রয়ী হতে হবে।' বেলা ১১টার দিকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। এটি মূলত দ্বিতীয় মেট্রোরেল ও প্রথম পাতাল রেল। সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নির্বাচনী ইশতেহার আমরা বাস্তবায়ন করেছি। ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। এমনকি আগামী ১০০ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনাও আমরা করে রেখেছি। আওয়ামী লীগ কথা দিলে সেটা রাখে, আমরা সেই কথা রেখেছি। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, দেশের মানুষের উন্নতি হয়। সারা দেশে যোগাযোগের নেটওয়ার্ট গড়ে তুলেছে। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস জয় করেই আমরা ভোট পাচ্ছি।' শেখ হাসিনা বলেন, 'জনগণের সাহায্য সহযোগিতায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। এখানে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। আমরা মানুষকে কতটুকু দিতে পারি সেটাই আমাদের বিবেচ্য বিষয়। নিজেদের টাকায় সেতু করে আমরা বিশ্বকে দেখিয়েছি। জনগণের কল্যাণে কাজ করেছি। যতক্ষণ জনগণ সঙ্গে থাকবে আন্দোলন-সংগ্রাম করে কেউ কিছু করতে পারবে না।' তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রিত্ব না, সব থেকে বড় পরিচয় আমি জাতির জনকের কন্যা। এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই আমার কাজ।' হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত জাপানের সাত নাগরিকের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই সাতজন যারা আমাদের এই মেট্রোরেলের পরামর্শক, তারা জঙ্গি হামলায় মারা গেলেন। তাদের স্মরণে আমরা স্মৃতিস্তম্ভ করেছি। এই ঘটনার পরেও জাপানের নেতারা হাত গুটিয়ে নেননি। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাব।' প্রধানমন্ত্রী জানান, 'পাতাল রেলের কাজ করার সময় মাটির নিচ থেকে বোরিং মেশিন দিয়ে গর্ত করে টানেল করা হবে। এখানে জনগণের চলাচলের কোনো সমস্যা হবে না। ভূপৃষ্ঠের ১০ মিটার নিচে কাজ হবে, ফলে ওপর থেকে বোঝা যাবে না যে মাটির নিচে কাজ চলছে। এই পাতার রেলের পূর্বাচল অংশ হবে উড়ালপথ। এছাড়া বিমানবন্দর রুটে ১২টি পাতাল রেল স্টেশন নির্মাণ করা হবে। খনন কাজের সময় মানুষের যাতে কোনো সমস্যা না হয় তার দিকে খেয়াল রাখা হবে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব কাজ হবে।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'কিছুক্ষণ আগে আমরা পাতাল রেলের কাজের উদ্বোধন করলাম। এর আগে আপনাদের উড়াল মেট্রোরেল উপহার দিয়েছি এটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে, এবার মাটির নিচ দিয়ে পাতাল রেল। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হলো।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক দিনে ১০০টা সেতু, ১০০টা সড়ক উদ্বোধন আগে কেউ করতে পারেনি উলেস্নখ করে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে, ২০০৮ সালে ভোট দিয়েছে। সেই নির্বাচনে বিএনপি কয়টা সিট পেয়েছিল? ৩০০ সিটের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট অধিকাংশ সিট পায়। বিএনপি পেয়েছিল ২৯টা সিট, পরে একটা উপ-নির্বাচনে এসেছিল। আমরা যে এত বছর কাজ করলাম। যার ফলে মানুষ আমাদের ভোট দিচ্ছে। আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে জনগণের আস্থা বিশ্বাস আমরা পাচ্ছি। জনগণের মন জয় করেই আমরা ভোট পাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, দেশ আরও এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি আর কেউ রুখতে পারবে না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এটা সম্ভব হয়েছে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে বলেই। এই গণতন্ত্র আছে বলেই বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ইনশালস্নাহ ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ 'স্মার্ট বাংলাদেশ'। সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উলস্নাহ নুরী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি, জাইকার বাংলাদেশ অফিসের প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহাইড।