বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি আবারও নাকচ খাজা নাজিমুদ্দিনের

প্রকাশ | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
১৯৫২ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসের দিনগুলো ছিল ভাষা আন্দোলনে উত্তাল। রাজপথে থেমে থেমেই চলছিল বাংলার ছাত্র-জনতার দীপ্ত মিছিল। হাজার কণ্ঠে সেস্নাগান ছিল 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই'। ফেব্রম্নয়ারির ৩ তারিখে খাজা নাজিমুদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিকে আবারও নাকচ করে দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। এর প্রতিবাদে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আবারও ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদের আবহ। বাংলা ভাষাপ্রেমী ছাত্র ও তারুণ্য সংগঠিত হতে থাকে। বিশেষ করে ছাত্রসমাজে সে সময় প্রতিবাদের অনুরণন ছিল চোখে পড়ার মতো। ফেব্রম্নয়ারির ২ তারিখে রাজপথ কাঁপিয়ে ছাত্র-জনতার সেস্নাগানের পর কমিউনিস্ট পার্টি 'বাংলাভাষার অধিকার ও সব ভাষার সমান মর্যাদা কায়েম করুন' শীর্ষক ইশতেহার প্রকাশ করে। এ ঘটনায় দেশাত্মবোধের আবেগ-উদ্দীপনায় জেগে ওঠে বাংলার সর্বস্তরের মানুষ। সবার বুকেই সেদিন রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল-হোস্টেলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে ছিল নাজিমুদ্দিনের সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবি নাকচের বিষয়টি। ঢাকায় সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সরকার-বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদেরও আগ্রহ ছিল যথেষ্ট। রাষ্ট্রভাষার মতো একটি বিষয় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উভয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে রাজনৈতিক নেতাদেরও লক্ষ্য ছিল ভাষা আন্দোলনের মঞ্চটিতে আধিপত্য বজায় রাখা। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা সূত্রে জানা যায়, ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি তৎকালীন আওয়ামী লীগের ডাকা একটি গোপন বৈঠকে কমু্যনিস্ট জোট ছাড়াও কয়েকটি সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সবাই একমত হন যে, সার্থকভাবে ভাষা আন্দোলন চালিয়ে যেতে হলে একা ছাত্ররাই যথেষ্ট নয়। সর্বস্তরের রাজনৈতিক এবং ছাত্র সমর্থন পেতে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এই আন্দোলন চালাবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন কারাগারে। পরদিন মওলানা ভাসানী সভাপতিত্বে একটি সর্বদলীয় বৈঠকে কাজী গোলাম মাহ্‌?বুবকে আহ্বায়ক এবং মওলানা ভাসানীকে চেয়ারম্যান করে একটি সম্প্রসারিত 'অল পার্টি কমিটি অব অ্যাকশন' গঠন করা হয়। কমিটিতে আওয়ামী লীগ, স্টুডেন্ট লীগ, ইয়ুথ লীগ, খিলাফতে রাব্বানি পার্টি এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ কমিটি অব অ্যাকশন থেকে দু'জন করে প্রতিনিধি নেওয়া হয়। ফেব্রম্নয়ারির ৩ তারিখে পূর্ব বঙ্গজুড়ে 'ভাষা ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যের' প্রতিবাদে কমিটি অব অ্যাকশন ঢাকায় একটি প্রতিবাদ সভা ডাকে। আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রাদেশিক প্রধান মওলানা ভাসানী ওই সভায় ভাষণ দেন। আবুল হাশিমের পরামর্শক্রমে ঠিক হয়, ২১ ফেব্রম্নয়ারি, অর্থাৎ ইস্ট বেঙ্গল অ্যাসেমবিস্নর বাজেট অধিবেশন শুরুর দিন একটি সাধারণ ধর্মঘট ডাকা হবে। ভাষাসৈনিক গাজীউল হক তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন- '১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জনাব শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালের ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন জেলে আটক ছিলেন। ফলে স্বাভাবিক কারণেই '৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা জনাব শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবে জেলে থেকেই তিনি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতেন।' (গাজীউল হক, আমার দেখা আমার লেখা, পৃষ্ঠা-৪০)।