শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষা রক্ষার আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা

যাযাদি ডেস্ক
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রম্নয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাবেশ থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তৎকালীন সাপ্তাহিক ইত্তেফাকের ১০ ফেব্রম্নয়ারি তারিখের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রগণ এই প্রদেশের বর্ণভাষার আত্মনিয়ন্ত্রণের ওপর খাজা নাজিমুদ্দিনের স্বেচ্ছাচারী আক্রমণের প্রতিবাদে শুধু একটা ছাত্র-হরতালের মহড়ার আহ্বান করিয়াছিল। সেই মহড়াই প্রদেশের সর্বত্র শোভাযাত্রা ও সংগঠনে রূপান্তরিত হইয়াছে।'

ফেব্রম্নয়ারির ৪ থেকে ২০ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত চলছিল সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পূর্ব ঘোষিত ২১ ফেব্রম্নয়ারির প্রতিবাদ-দিবস পালনের প্রস্তুতি।

ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন ও আহমদ রফিক তাদের ভাষা আন্দোলন-ইতিহাস ও তাৎপর্য বইয়ে লিখেছেন, 'প্রথম লড়াইটা প্রধানত ছিল সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনেই সীমাবদ্ধ'। বইটির বর্ণনা অনুযায়ী দেশভাগের আগেই চলিস্নশের দশকের শুরুতেই সাহিত্যিকরা বিষয়টি নিয়ে কথা

বলেছেন। সে সময় বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিক, শিক্ষক, রাজনীতিবিদদের মধ্যে বাংলা, উর্দু, আরবি ও ইংরেজি এই চারটি ভাষার পক্ষ-বিপক্ষে নানান মত ছিল।

আবদুল মতিন ও আহমদ রফিক লিখেছেন, 'ভাষা আন্দোলন বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এর সূচনা মূল আন্দোলন শুরু হওয়ার কয়েক দশক আগেই এবং বাঙালি মুসলমানের সেকুলার জাতীয়তাবোধ এর পেছনে কাজ করেছে।'

পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন নিশ্চিত হওয়ার পর উর্দু-বাংলা বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সে সময় 'মিলস্নাত' পত্রিকার এক সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল, 'মাতৃভাষার পরিবর্তে অন্য কোনো ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা রূপে বরণ করার চাইতে বড় দাসত্ব আর কিছু থাকিতে পারে না।'

১৯৪৭ সালে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর জিয়াউদ্দিন আহমেদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেছিলেন। তখন ভাষা নিয়ে বিতর্ক জেগে উঠেছিল। ততদিনে মুসলিম বাঙালিদের আত্ম-অন্বেষণও শুরু হয়ে গিয়েছিল।

দেশ বিভাগের কয়েক মাসের মধ্যেই পাকিস্তানের প্রথম মুদ্রা, ডাকটিকিট, ট্রেনের টিকিট, পোস্টকার্ড ইত্যাদি থেকে বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দু ও ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়। পাকিস্তানের এ ঘটনায় ঢাকায় ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীদের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তবে আন্দোলন বেগবান হয় মূলত খাজা নাজিমুদ্দিনের পল্টনের জনসভায় বক্তব্য এবং সংবাদ সম্মেলন করে আবারও পূর্ব পাকিস্তানের জনদাবি নাকচ করে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার দাবিতে অনড় থাকার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে। পূর্ব-বঙ্গের অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও খাজা নাজিমুদ্দিন জিন্নাহ'র কথারই পুনরাবৃত্তি করেন।

তৎকালীন পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাংলা ভাষীরা উর্দু ভাষীদের চেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। তারপরও ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান সফরে এসে রেসকোর্স ময়দানে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ এক সমাবেশে স্পষ্ট ঘোষণা করেছিলেন যে, 'উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা'।

অবশ্য সমাবেশেই উপস্থিত অনেকেই সঙ্গে সঙ্গে এর প্রতিবাদ করেন। এই ঘোষণাকে বিশ্লেষকরা নতুন রাষ্ট্র সম্পর্কে বাঙালির স্বপ্ন ভঙ্গের সূচনা মনে করেন।

উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পেছনে বাঙালিদের ওপর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রভুত্ব কায়েম ও শোষণের অভিসন্ধি বলে মনে করা হয়েছিল। বাঙালিদের মনে পাকিস্তানের প্রতি অবিশ্বাসের ভীত তৈরি হয়েছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে