দেশের অর্থনৈতিক সংকট যতটা না বৈশ্বিক, তার চেয়ে বেশি অভ্যন্তরীণ

সানেম সম্মেলনে বক্তারা

প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
'গত কয়েক মাস ধরে অর্থনীতির যে চাপ, এর নেপথ্যে বৈশ্বিক পরিস্থিতির চেয়ে অভ্যন্তরীণ দায়ই বেশি। অর্থনৈতিক সংকট যতটা না বৈশ্বিক সৃষ্টি, এর চেয়ে বেশি অভ্যন্তরীণ।' শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সানেম বার্ষিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন শেষ হবে আজ। এই সম্মেলনে অর্থনীতি ও বাণিজ্য নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন দেশ-বিদেশের অর্থনীতিবিদরা। এদিকে, বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো গত একটি বছর ভীষণ কঠিন যাচ্ছে বাংলাদেশের জন্যও। বিশ্ববাজারে পণ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার মান পড়ে যাওয়ার কারণে মূল্যতে আরও বেশি প্রভাব, ডলার সংকট, রিজার্ভের ক্রমাগত পতন, প্রবাসী আয়ে ভাটা ইত্যাদির কারণে গত এক যুগের মধ্যে অর্থনীতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উৎকণ্ঠার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজনীতি ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে বলে যে সমালোচনা করা হয়, সেটি নিয়ে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। তিনি বলেন, 'দেশের রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতেই আছে, তবে সংসদে অনেক সদস্যই ব্যবসায়ী।' অর্থনৈতিক এই সংকট থেকে বের হয়ে আসতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ থেকে সরকার যে ঋণ নিচ্ছে, সেটি দেশের জন্য ইতিবাচক হবে বলেও মনে করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আইএমএফ আমাদের আর্থিক খাতে যেসব সংস্কার প্রস্তাব করেছে সেগুলো যৌক্তিক। তাদের (আইএমএফ) পরামর্শে আর্থিক খাতে ধারাবাহিক সংস্কার করা হচ্ছে। এসব প্রস্তাব আমরা ইতিবাচকভাবে নেওয়ায় এখন অন্যান্য দাতা সংস্থাও ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছে।' এদিকে, গত ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। দুই দিন পরই প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার জমা পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে। এই ঋণ নিতে সংস্থাটির ৩০টি শর্ত মানতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এর অন্যতম হলো বিদু্যৎ ও জ্বালানিতে ভর্তুকি কমানো। প্রথম সেশনে সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, 'আইএমএফের ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না, বরং টার্নিং পয়েন্ট। এই ঋণ পাওয়ার ফলে এখন অন্যান্য দাতা সংস্থা বাংলাদেশের ব্যাপারে আস্থা পাবে। তাদের কাছে স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়া সহজ হবে। দেশের অর্থনীতি ঠিক করতে চারটি বিষয়ের ওপর জোর দিতে বলেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, 'সামষ্টিক অর্থনীতিতে যেসব আঘাত এসেছে, সেগুলোর কোনটিতে প্রাধান্য দেওয়া উচিত, তা খুঁজে বের করতে হবে। এ বিষয়ে সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে কাজ করবে এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক পরিমন্ডলে এসব আঘাতের প্রভাব কেমন, এর ওপর জোর দিতে হবে।' অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, 'রিজার্ভের পরিমাণ কত, সেটি বড় কথা নয়, এর প্রবণতাটা খেয়াল করা গুরুত্বপূর্ণ। এক-দুই বছরে এটি কত কমে যাচ্ছে, তা দেখতে হবে। কমে গেলে, তা চলতে দেওয়া যাবে না, একবার কমে যাওয়া শুরু করলে নিয়মনীতির মধ্যে থেকে তা সামাল দেওয়া আমাদের মতো আমদানি-নির্ভর দেশের জন্য কঠিন।' দুই দিনের এই সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের দেড়শ অর্থনীতিবিদ অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনে ২৩টি অধিবেশনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অর্থনীতি-গবেষকরা ৮০টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন।