গ্যাস-বিদু্যতে কেন ভর্তুকি দেব

প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন

প্রকাশ | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এর 'রাজস্ব সম্মেলন-২০২৩' উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন -ফোকাস বাংলা
গ্যাস-বিদু্যতে ভর্তুকিতে আপত্তি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমরা যে বিদু্যৎ সরবরাহ করি তা উৎপাদন করতে প্রতি ইউনিটে খরচ হয় ১২ টাকা। আর সেখানে আমরা নিচ্ছি ৬ টাকা। তাতে অনেক কথা শুনতে হচ্ছে। যুক্তরাজ্যে বিদু্যতের দাম ১৫০ শতাংশ বেড়েছে, এটা সবার মনে রাখতে হবে। আমরা সেই পর্যায়ে যাইনি। গ্যাস, বিদু্যৎ সাপস্নাই দেওয়া যাবে যদি খরচ যা হয় সেটা সবাই দেয়। কত ভর্তুকি দেওয়া যায়? আর এই ক্ষেত্রে কেন ভর্তুকি দেব? ভর্তুকি দিচ্ছি আমরা কৃষিতে, খাদ্য উৎপাদনে।' রোববার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নবনির্মিত ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন। সরকার কর্তৃক ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা বিদেশি বিনিয়োগ চাই, তার সঙ্গে সঙ্গে চাই যে, আমাদের দেশের যুব সমাজ নিজেরাই বিনিয়োগকারী হবে। আমাদের যুব সমাজের জন্য স্টার্টআপ প্রোগ্রাম করে দিয়েছি। সেজন্য আলাদা বাজেটও আছে। কোম্পানি আইন পরিবর্তন করে এক ব্যক্তি কোম্পানি করতে পারে সেই ব্যবস্থাটাও আমরা নিয়েছি। যাতে করে আমাদের নিজেদের ছেলেমেয়েরা উঠে আসতে পারে।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, '২০০১ সালে ৪৩০০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ রেখে গিয়েছিলাম। ২০০৯ সালে এসে দেখলাম সেটা কমে ৩০০০ মেগাওয়াটের দিকে নেমে গেছে। আমি জানি না কোনো দেশ পেছনের দিকে যায় কি না। আজকে দেশে শতভাগ বিদু্যৎ দিতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের প্রত্যক ঘরে ঘরে বিদু্যৎ পৌঁছে দেব, আমরা পৌঁছে দিয়েছি।' ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'জেনারেটরের ওপর যে ট্যাক্স ছিল, সেটা আমরা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলাম। প্রতিটি ছোট কোম্পানি যাতে বিদু্যৎ উৎপাদন করতে পারে সে ব্যবস্থাও করেছিলাম, যাতে নিজেরা উৎপাদন করে নিজেরা ব্যবহার করে, আবার অন্যদের দিতে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে ভালোভাবে চলে, বিনিয়োগ আসে সেই চেষ্টা আমরা করি।' শেখ হাসিনা বলেন, 'বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মৎস্য ভবনের একটি ফ্লোরে একটি অফিস ছিল। আমরা বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে চাই। বিদেশিরা আসবে, দেখবে, বিনিয়োগ করবে। সেজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, আলাদা একটি ভবন করে দেব। সেখানে যারা কাজ করবেন তারা যেন মনের শান্তিতে কাজ করতে পারেন।' বাংলাদেশ এখন ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশ পারে, বাঙালি পারে। একটা চ্যালেঞ্জ ছিল পদ্মা সেতু নিয়ে। এ সেতু তৈরিতে মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। আমি বলেছিলাম নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু করব, করেছি। এক্ষেত্রে জনগণ আমাকে সমর্থন করেছিল।' অন্যের কাছে আমরা হাত পাতব না এদিকে, রোববার দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রাজস্ব সম্মেলন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জোর-জুলুম না করে উদ্বুদ্ধকরণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে কর আদায় করতে হবে। মানুষকে কোনো ভয়-ভীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলা যাবে না। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদের জানাতে হবে আপনার কর, আপনাদের কাজেই লাগে। সরকারের উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে জনগণ। যারা সুফল ভোগ করছে তাদের তো কিছু দিতে হবে। রাষ্ট্র এমনি এমনি দিতে পারে না। আর অন্যের কাছে আমরা হাত পাতব না। ঘরে বসে করদাতাদের কর দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ায় রাজস্ব বোর্ডকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এটার আরও ব্যাপক প্রচার দরকার। তাহলে রাজস্ব আহরণে খুব বেশি অসুবিধা হবে না। অনেককেই যেতে হবে, দিতে হবে- এই ঝামেলাটা নিতে চান না।' তিনি বলেন, 'এখন যেহেতু মূল্যস্ফীতি বেশি, প্রত্যেক মানুষের ওপর অতিরিক্ত চাপ। এক্ষেত্রে করহার বৃদ্ধি না করে করহার যৌক্তিক করতে হবে। করজাল বাড়াতে হবে, ই-টিআইএন গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।' তিনি বলেন, 'আমাদের দেশে আয়কর প্রদানকারীর সংখ্যা খুবই কম। অনেক ঝামেলার মধ্যে করতে হয় বা সচেতনতার অভাব রয়েছে। আমি মনে করি, এখানে কোনো জোর খাটবে না। কর ফাঁকি দেওয়ার যাদের প্রবণতা আছে, সবক্ষেত্রে ডিজিটাল সিস্টেম হয়ে গেলে কেউ আর ফাঁকি দিতে পারবে না। আয়করের পরিমাণ এমন রাখা, প্রত্যেকেই যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে দিতে পারে।' অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। এর আগে প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নতুন রাজস্ব ভবন উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি নবনির্মিত রাজস্ব ভবন পরিদর্শন করেন।