মন্ত্রিসভায় আইনের খসড়া অনুমোদন

ভেজাল ওষুধ তৈরি করলে যাবজ্জীবন

স্বত্বাধিকারী না হয়ে কিছু প্রকাশ করলে ৫ লাখ টাকা জরিমানা

প্রকাশ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভেজাল এবং নকল ওষুধ তৈরি করলে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রেখে 'ঔষধ আইন ২০২২' এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নতুন আইনে 'ঔষধ'-এর সঙ্গে 'কসমেটিকস' শব্দটিও যোগ করা হয়েছে। আইনটি এখন থেকে 'ঔষধ এবং কসমেটিকস আইন-২০২২' নামে হয়েছে। প্রস্তাবিত এই আইনে কিছু ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করে দেবে। এদিকে, কোনো ব্যক্তি কোনো কর্মের কপিরাইটের স্বত্বাধিকারী না হয়ে প্রকাশ, পরিবেশন বা সম্পাদন করা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে বিধান রেখে 'কপিরাইট আইন-২০২৩' এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ দু'টি আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভা কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, নতুন এই আইনে কোনো ওষুধ ক্ষতিকারক হলে তাৎক্ষণিকভাবে তা বাজার থেকে বাতিল করার বিধান রাখা হয়েছে নতুন আইনে। আর এই আইন অনুযায়ী ওষুধের উৎপাদন থেকে সব ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিস্নউএইচও) গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে। এছাড়া এখন থেকে নতুন করে প্রসাধনী উৎপাদন করতে হলে সরকারের লাইসেন্স বা অনুমোদন নিতে হবে। সেই সঙ্গে নতুন ওষুধ আইনে ৩০টি অপরাধ যুক্ত করা হয়েছে, যা আগের আইনে ছিল না। নতুন আইনে ভেজাল এবং নকল ওষুধ তৈরি এবং ওষুধের কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর নিবন্ধন ছাড়া কারখানা থেকে ওষুধ উৎপাদন করলে ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং ১০ বছরের কারাদন্ড হবে। আইনটিতে আরও বলা হয়েছে 'রেজিস্ট্রার চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা যাবে না। কোনো দোকান থেকে ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা হলে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।' স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত আইনে মেডিকেল ডিভাইস ব্যবহার করার বিষয়েও নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। প্রসাধনী উৎপাদন এবং বিতরণও এই আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হবে। ওষুধ প্রসাধন অধিদপ্তরে এর তদারকি করবে। এছাড়াও বৈঠকে 'কপিরাইট আইন, ২০২২' এর খসড়াও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন এ বিষয়ে বলেন, আমাদের ২০০০ সালে প্রণীত একটা কপিরাইট আইন ছিল। এরপর ২০০৫ সালে সেটি সংশোধন করা হয়েছিল। এখন ডিজিটাল যুগ এসেছে, সেখানে ডিজিটাল যুগের কিছু বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। সেই বাস্তবতার আলোকে এই কপিরাইট আইনকে সংশোধন করে নতুন একটি খসড়া করা হয়েছিল। সেটি ২০২১ সালের অক্টোবরে কিছু অবজারভেশনসহ নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো তারা মিট করে নিয়ে এসেছিলেন এবং সেটা আনার পরে মন্ত্রিসভায় এটা আলোচনা হয়েছে। বিস্তারিত আলোচনার পর মন্ত্রিসভা এটি চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এটি এখন নির্ধারিত পদ্ধতিতে সংসদে উপস্থাপিত হবে। এ আইনে বৈশিষ্ট্য হিসেবে যেটি বর্ণনা করা হচ্ছে, সময়ের প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু সংজ্ঞা সংযোজন এবং বিয়োজন করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা বা ছদ্মনামে কর্মের স্বত্বাধিকারী, ডেটাবেজ, পাবলিক ডোমেইন, মনোগ্রাম, প্রডিউসার, ব্যক্তি, লোকগান, লোকসংস্কৃতি, সম্পাদক, সম্পত্তি অধিকার- এসব কিছুর নতুন সংজ্ঞা সংযোজিত হয়েছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য যদি কোনো মেধাস্বত্বের বিষয় থাকে, তা নিশ্চিত করার কথা আইনে রাখা হয়েছে। পাইরেসি প্রতিরোধে দন্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ডিজিটাল অর্থাৎ কম্পিউটারভিত্তিক কার্যক্রমকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে, যা আগে ছিল না। ডিজিটাল পস্ন্যাটফর্মে কপিরাইট লঙ্ঘনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। লোকগান ও লোকসঙ্গীতে অধিকার সুরক্ষার জন্য একটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই জরিমানা এবং শাস্তি দু'টিই আছে জানিয়ে খসড়া আইনে সর্বোচ্চ শাস্তির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো কর্মের কপিরাইটের স্বত্বাধিকারী না হয়ে প্রকাশ, পরিবেশন বা সম্পাদন করেন তাহলে তিনি অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। একই বৈঠকে প্রতিবছর ১৬ জানুয়ারিকে 'জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস' হিসেবে ঘোষণা এবং দিবসটি উদযাপনের লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত এ বিষয়ে পরিপত্রের 'খ' ক্রমিক তা অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব অনুমোদন করা দেওয়া হয়েছে। তিন ফসলি জমিতে সরকারি প্রকল্পও নয় : প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন ফসলি জমিতে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো ধরনের প্রকল্পই করা যাবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সব মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।