মৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৬ হাজার

বিধ্বস্ত তুরস্কে আবারও ভূকম্পন

প্রাণহানি ২০ হাজার ছাড়াতে পারে শঙ্কা ডবিস্নউএইচওর ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কের ১০ শহরে জরুরি অবস্থা জারি বাশার সরকারকে ছাড়াই সিরিয়ার পাশে দাঁড়াতে চায় ওয়াশিংটন

প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সময় যত যাচ্ছে, ততই বড় হচ্ছে লাশের সারি। মঙ্গলবার রাত ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তুরস্ক-সিরিয়ায় সোমবারের ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ছয় হাজার। যেদিকে চোখ যাচ্ছে, শুধু ধ্বংসস্তূপ। সেইসব ধ্বংসস্তূপ সরাতেই বেরিয়ে আসছে একের পর লাশ। সৃষ্টি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়। এই অবস্থার মধ্যে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুরে তুরস্কের মধ্যাঞ্চলে আবারও ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬ মাত্রা। ইউরো-ভূমধ্যসাগরীয় সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি ভূপৃষ্ঠের দুই কিলোমিটার গভীরে ছিল। তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, তুরস্কের গোলবাসি শহরের কাছে ১০ কিলোমিটার গভীরে ৫ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। সোমবার সংগঠিত প্রথম ভূমিকম্পের পর বেশ কয়েকটি আফটারশক (পরাঘাত বা ভূমিকম্পের পরের কম্পন) হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। তুরস্ক ও সিরিয়ায় সোমবার দুটি বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ নিহত হন। আরও হাজার হাজার আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের সন্ধানে বিভিন্ন অঞ্চলে উদ্ধার অভিযান চলছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা, ডেইলি মেইল, গার্ডিয়ান, এএফপি আমেরিকার মিশিগান টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটির ব্যবহৃত ভূমিকম্পের স্কেল অনুসারে, মঙ্গলবার আঘাত হানা ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে ভবন ও অন্যান্য অবকাঠামোর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দুটি ভূমিকম্পের পর ২৪৩টি আফটারশক হয়েছে বলে জানিয়েছেন তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান ইউনুস সেজার। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ১৬ হাজার ৪০০ উদ্ধারকর্মী কাজ করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে, স্থানীয় সময় সোমবার সকালে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর থেকে ৪ বা তার বেশি মাত্রার অন্তত ১০০টি আফটারশক (ভূমিকম্প-পরবর্তী কম্পন)) হয়েছে। মূল ভূমিকম্পের সময় যত বাড়ে, আফটারশকের তীব্রতা তত কমতে থাকে। তবে ৫ থেকে ৬ মাত্রা বা তারচেয়ে বড় আফটারশক এখনো ঘটতে পারে। এগুলো মূল ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত কাঠামোর অতিরিক্ত ক্ষতির ঝুঁকি নিয়ে আসে। এটি উদ্ধারকারী দল ও জীবিতদের জন্য হুমকিস্বরূপ। আফটারশকগুলো দক্ষিণ তুরস্কের ফল্ট জোন বরাবর ৩০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে হচ্ছে। ভূমিকম্পে দক্ষিণ তুরস্কের ১০টি প্রদেশের এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এরই মধ্যে শুধু তুরস্কেই মারা গেছেন তিন হাজারের বেশি মানুষ। আর সিরিয়ায় দুই হাজারের বেশি। দুই দেশে আহত হয়েছেন ১৭ হাজারের বেশি মানুষ। এই অবস্থায় ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কের ১০ শহরে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট রিপেস তাইয়ে্যপ এরদোয়ান শহরগুলোতে আগামী তিন মাসের জন্য এ ঘোষণা দিয়েছেন। এরদোয়ান বলেন, ধ্বংসস্তূপ এলাকা বিবেচনায় ১০টি শহরে এই সময়ের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াতে পারে, শঙ্কা ডবিস্নউএইচও'র এদিকে, সোমবারের ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক-সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও)। দেশ দুটিতে আরও ভবন ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। ডবিস্নউএইচও'র ইউরোপ অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ জরুরি কর্মকর্তা ক্যাথরিন স্মলউড বলেন, 'আরও ভবন ধসের শঙ্কা রয়েছে। তাই আমরা নিহতের প্রাথমিক সংখ্যা আটগুণ বাড়ার আশঙ্কা করছি।' সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় দেশ দুটিতে প্রাণহানির সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৬০০ জন। সেই হিসাবে এর সংখ্যা শেষ পর্যন্ত ২০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ক্যাথরিন স্মলউড। তিনি বলেন, 'দুর্ভাগ্যবশত, ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে আমরা সবসময় একই জিনিস দেখতে পাই, তা হলো- প্রাথমিক খবরে পাওয়া হতাহতের সংখ্যা পরবর্তী সপ্তাহে উলেস্নখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।' ডবিস্নউএইচও কর্মকর্তার এ সতর্কবার্তা যে মিথ্যা নয়, তার প্রমাণও দেখা যাচ্ছে এরই মধ্যে। তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পের এক দিন যেতে না যেতেই প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ছয় হাজার। এখনো বহু এলাকায় উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতেই পারেননি। তার ওপর বিরূপ আবহাওয়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হওয়ারও সংবাদ পাওয়া গেছে। ফলে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা লোকদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা তীব্র হচ্ছে। এছাড়া ব্যাপক বিপর্যয়ে ত্রাণ প্রচেষ্টাও ব্যাহত হচ্ছে, উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া লোকজনকে রক্ষা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন; ভূমিকম্প কবলিত অঞ্চলগুলোর অধিকাংশ এলাকায় মঙ্গলবার এমন হতাশাজনক চিত্র দেখা গেছে। সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুর্কি শহর আন্তাকিয়ায় ১০ তলা একটি ভবন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই জরুরি কর্মীদের একটি উদ্ধার কাজ চালাতে হচ্ছে। শহরটিতে বিদু্যৎ নেই, জ্বালানিও নেই। এর মধ্যে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় তাপমাত্রা নেমে হিমাঙ্কের নিচে চলে গেছে। সোমবার স্থানীয় সময় ভোর রাতে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পটিতে তুরস্ক ও প্রতিবেশী সিরিয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে বহু অ্যাপার্টমেন্ট বস্নক ধসে পড়ে, হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হাজার হাজার মানুষ আহত ও গৃহহীন হয়ে পড়েন। অপরদিকে, সিরিয়ার সরকার ও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উদ্ধারকারী পরিষেবাগুলো দেশটিতে নিহতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে আগেই জানিয়েছে। ১১ বছরের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধে সিরিয়া আগে থেকেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল, এখন ভয়াবহ এই ভূমিকম্পের ধাক্কায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যাওয়ায় রাতে উদ্ধারকাজ অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। তার মধ্যেই তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হতাইয়ে একরাশ ধ্বংস্তূপের নিচে আটকা পড়া এক নারীর কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছিল, সাহায্য চেয়ে ডাকছিলেন তিনি। কাছেই প্রাণহীন এক শিশুর দেহ পড়ে আছে। এই নিরাশাজনক পরিস্থিতির মধ্যে নিজেকে দেনিজ বলে পরিচয় দেওয়া স্থানীয় এক বাসিন্দা বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন, হতাশায় হাত মোচড়াচ্ছিলেন তিনি। দেনিজ বলেন, 'তারা আওয়াজ করছেন, কিন্তু কেউ আসছেন না। আমরা ধ্বংস হয়ে গেছি, আমরা ধ্বংস হয়ে গেছি।' ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় সোমবার রাস্তায় লাইন দিয়ে দাঁড় করানো গাড়িগুলোতে বহু পরিবার ঘুমিয়ে ছিল। সময়ের সঙ্গে পালস্না দিচ্ছেন উদ্ধারকারীরা তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকাগুলোয় নিয়োজিত উদ্ধারকর্মীরা এখন সময়ের সঙ্গে পালস্না দিচ্ছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকেপড়া লোকদের বের করে আনতে যত দেরি হবে, তাদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা তত কমে আসবে। আমেরিকার ডিউক ইউনিভার্সিটির জরুরি সেবা বিশেষজ্ঞ ড. রিচার্ড এডওয়ার্ড মুনের মতে, পানি ও অক্সিজেনের স্বল্পতাই ভুক্তভোগীদের বেঁচে থাকার পথে প্রধান বাধা। তিনি বলেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীর থেকে দৈনিক এক দশমিক দুই লিটার পর্যন্ত পানি বেরিয়ে যেতে পারে। এটি ঘটতে পারে প্রস্রাব, নিঃশ্বাস, জলীয় বাষ্প এবং ঘামের মাধ্যমে। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকেপড়া লোকদের শরীর থেকে এরই মধ্যে আট লিটারের বেশি পানি বেরিয়ে গেছে। এই অবস্থায় একজন মানুষ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার ওপর, সিরিয়া-তুরস্কে এখন চলছে শীতকাল। একজন গড়পড়তা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীর উষ্ণ থাকার ক্ষমতা না হারিয়ে সর্বনিম্ন ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। কিন্তু যখন শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়, তখন গল্প ভিন্ন। সিরিয়ায় খালি হাতেই চলছে উদ্ধারকাজ এদিকে, সিরিয়ায় ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে ধুলায় মিশে যাওয়া অবকাঠামো, যন্ত্রপাতির অভাব এবং প্রবল ঝড়-বৃষ্টির কারণে উদ্ধারকাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। এরপরও খালি হাতেই দুর্গতদের সাহায্যে কাজ করে যাচ্ছেন স্থানীয়রা। ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব প্রদেশ। সরকারবিরোধী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই এলাকায় ধ্বংসস্তূপ থেকে দুর্গতদের উদ্ধারের মতো পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানান স্থানীয় সাংবাদিক ওমর আলবাম। ইদলিবের প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তরে তুরস্কের সীমান্তবর্তী শহর সারমাদার এই সাংবাদিক জানান, শহরটি বলতে গেলে ধুলায় মিশে গেছে। তিনি জানান, 'দুইবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে এখানে। দ্বিতীয়বারেরটি অনেক বেশি সময় ধরে হয়েছে। স্থানীয়রা আতঙ্কে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন।' অনেকে পুরো পরিবারসহ ভবনগুলোর নিচে চাপা পড়েছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত ভবনগুলো থেকে মানুষকে উদ্ধারে সাহায্য করতে কয়েক বছর আগে কাজ শুরু করে 'হোয়াইট হেলমেট' নামের স্বেচ্ছাসেবী দল। ভূমিকম্পের পর তারাও কাজ করছেন। তেমন কোনো যন্ত্রপাতি না থাকলেও তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মানুষগুলোকে উদ্ধারের। তবে এ কাজে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। সিরিয়ায় বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের নিচে আটকা শত শত পরিবারকে জীবিত উদ্ধারের সময় দ্রম্নত ফুরিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার দেশটির বিরোধীদের পরিচালিত 'সিভিল ডিফেন্স সার্ভিস'র প্রধান রায়েদ আল-সালেহ বলেন, 'প্রত্যেক সেকেন্ডের মানে মানুষের জীবন বাঁচানো। আমরা সব দাতব্য সংস্থাকে বস্তুগত সহায়তা এবং এই বিপর্যয়কে জরুরিভাবে মোকাবিলার আহ্বান জানাই।' ভূমিকম্পের পর কয়েকটি এলাকায় মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে গেছে। সাংবাদিক ওমর আলবাম জানান, 'ভূমিকম্পের কারণে কত লোকের মৃতু্য হয়েছে, এর সঠিক কোনো তথ্য এখনই জানা সম্ভব নয়। পরিস্থিতি খুব জটিল।' বাশার সরকারকে ছাড়াই সিরিয়ার পাশে দাঁড়াতে চায় ওয়াশিংটন ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক ও সিরিয়া উভয় দেশের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে আমেরিকা। কিন্তু এখনো সিরিয়ার সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি দেশটি। সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে সিরিয়ায় সহায়তা পাঠাবে। এই সহায়তা কার্যক্রমে তারা সিরিয়ার সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় যাবে না। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দেয় না আমেরিকা। নির্বাচনে বিপুল ভোটে বাশার জয় পেলেও ওই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি বলে দাবি করে আসছে ওয়াশিংটন। এমন অবস্থায় সিরিয়ায় সাহায্য পাঠানোর ক্ষেত্রেও বাশার আল-আসাদ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে না বলে জানান নেড প্রাইস। তিনি বলেন, 'সিরিয়ার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা তাদের নীতির বিরুদ্ধে না হলেও বিষয়টি অনেকটাই বিদ্রূপাত্মক হবে। আমরা এমন কোনো সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাই না, যারা এক যুগ ধরে জনগণকে নিপীড়ন করছে। আমেরিকা এনজিওর মাধ্যমে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবে।' তুরস্ক-সিরিয়ায় ঐতিহাসিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্কে সোমবার আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে দেশটির ঐতিহাসিক গাজিয়ানতেপ দুর্গ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই ভূমিকম্পে তুরস্কের প্রতিবেশী দেশ সিরিয়ায় বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সোমবার তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। তুরস্কের স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ভূমিকম্পটি হয়। ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে। এই গাজিয়ানতেপে ঐতিহাসিক দুর্গটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তুরস্কের গাজিয়ানতেপের শাহিনবে জেলায় দুর্গটি অবস্থিত। ভূমিকম্পে দুর্গটির কিছু অংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গের ধ্বংসাবশেষ রাস্তার ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কালো পাথর দিয়ে তৈরি দুর্গের কিছু দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গের চারপাশের প্রাচীরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোমান আমলে দুর্গটি পর্যবেক্ষণ কাজে ব্যবহৃত হতো। ঐতিহাসিক দুর্গটি অনেকবার সংস্কার-পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে, ভূমিকম্পে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর আলেপ্পোর একটি বিখ্যাত দুর্গসহ দেশটির বেশ কয়েকটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। সিরিয়ার প্রত্নতত্ত্ব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আলেপ্পোর বিখ্যাত ঐতিহাসিক দুর্গটির ভেতরের কিছু অংশ ধসে পড়েছে। এছাড়া দুর্গের উত্তর-পূর্ব দিকের প্রতিরক্ষা দেয়ালের কিছু অংশে ফাটল ধরেছে, কিছু অংশ পড়ে গেছে। সিরিয়ার প্রত্নতত্ত্ব কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, দুর্গের অভ্যন্তরে থাকা আইয়ুবিদ মসজিদের মিনারের গম্বুজের কিছু অংশ ধসে পড়েছে। দুর্গের প্রবেশদ্বারটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আলেপ্পো শহরটি তার প্রাচীন দুর্গ, ইউনেসকোর তালিকাভুক্ত ঐতিহাসিক স্থান, শতাব্দী-পুরনো ছাদ আচ্ছাদিত বাজারের জন্য বিখ্যাত। উলেস্নখ্য, বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলোর একটি হলো তুরস্ক। ১৯৯৯ সালে তুরস্কের দুজক অঞ্চলে সাত দশমিক চার মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। সেই দুর্যোগে দেশটিতে মোট নিহতের সংখ্যা ছিল ১৭ হাজারের বেশি। একক শহর হিসেবে ইস্তাম্বুলে নিহতের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি, প্রায় এক হাজার। তারপর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তুরস্কের পূর্বাঞ্চলীয় শহর এলাজিগে ছয় দশমিক আট মাত্রার ভূমিকম্পে ৪০ জন নিহত হন। একই বছর অক্টোবরে এজিয়ান সাগর উপকূলে সাত মাত্রার আরও একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। সেই দুর্যোগে নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছিল ১১৪ জনে। তবে সোমবারের ভূমিকম্পটি তুরস্ক ও সিরিয়ার গত ৮০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী। সিরিয়ার জাতীয় ভূমিকম্প কেন্দ্রের প্রধান রায়েদ আহমেদ রাষ্ট্রীয় এক রেডিও স্টেশনকে বলেছেন, এই ভূমিকম্প তাদের ভূকম্পন কেন্দ্রের ইতিহাসে রেকর্ড করা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। \হ