ঝিনাইদহে ১০ টাকার গোলাপ ৩০ টাকা!
প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
তারেক মাহমুদ, ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহে অন্য সময় থেকে দুই-তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে ফুল। বসন্তবরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে গত কয়েকদিনে স্থানীয় বাজারগুলো ফুলের দামে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। এসব বাজারে একটি গোলাপ ২৮ থেকে ৩২ টাকা পাইকারি বিক্রি হয়েছে। আর খুচরা বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৫০ টাকা। এক থেকে দুই সপ্তাহ আগে এই একই গোলাপ বিক্রি হয়েছিল ৮ থেকে ১২ টাকা। এ ছাড়া জারবেরা বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। যা দু-এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছিল ৩ থেকে ৪ টাকা। রজনীগন্ধার স্টিক বিক্রি হয়েছে ৮ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ২ থেকে ৩ টাকায়। একই সময় দাম কমেছে গাদা ফুলের। রোববার ও সোমবার গাদা ফুলের থোকা বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা ধোপা। সে একই ফুল দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা ধোপা।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে ফুটে আছে লাল, হলুদ ও কমলা রঙের জারবেরা। ফুটে আছে লাল, হলুদ আর সাদা রঙের গোলাপ, রজনীগন্ধা, গস্নাডিয়াস ও গাদা ফুল। ফুটে থাকা ফুলের রঙে স্বপ্ন রাঙ্গাতে ব্যস্ত
সময় পার করছে জেলার ফুলচাষিরা। প্রতিবছর ফেব্রম্নয়ারি মার্চ মাস এলেই এ জেলার ফুলচাষি ও ফুলকর্মীদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বিভিন্ন জাতীয় উৎসবে এ এলাকায় উৎপাদিত ফুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। চলতি মাসেই তরুণ-তরুণীদের প্রাণের উৎসব বসন্তবরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এ ছাড়া রয়েছে ২১ ফেব্রম্নয়ারি মাতৃভাষা দিবস। এসব দিবসের বাড়তি চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার ফুলচাষিরা।
চলতি মৌসুমে ঝিনাইদহ জেলায় ২৬৮ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে গোলাপ ২০ হেক্টর, গাদা ১৪৩ হেক্টর, রজনীগন্ধা ৬২ হেক্টর, জারবেরা ২১ হেক্টর, চন্দ্রমলিস্নকা ১০ হেক্টর ও ৮ হেক্টর জমিতে গস্নাডিয়াস ফুলের চাষ হয়েছে। সব থেকে বেশি ফুলের চাষ হয় জেলা সদরের গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে। যে কারণে এ এলাকাটি অনেকের কাছে 'ফুলনগরী' বলে পরিচিত। ১৯৯১ সালে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সৌখিন কৃষক ছব্দুল শেখ সর্বপ্রথম ফুল চাষ করেন। তিনি ওই বছর মাত্র ১৭ শতক জমিতে ফুল চাষ করে ৩৪ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেন। এরপর থেকে এলাকায় বিভিন্ন জাতের ফুল চাষের বিস্তার শুরু করে। বর্তমানে জেলার হাজার হাজার কৃষক ফুলচাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের ত্রিলোচনপুর গ্রামের ফুলচাষি টিপু সুলতান জানান, ২০১৭ সালে ৫৫ লাখ টাকা খরচ করে ৫ বিঘা জমিতে জারবেরা ফুলের চাষ করেছিলাম। বর্তমানে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে আমার ফুল চাষ রয়েছে। এর মধ্যে গোলাপ রয়েছে ৫ বিঘার মতো। ভালোবাসা ও বসন্ত উৎসবকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিনে গোলাপ পাইকারি ২০ থেকে ৩০ দরে বিক্রি করেছি। প্রতিদিন এক হাজার থেকে দেড় হাজার গোলাপ ঢাকার বাজারে পাঠাচ্ছি।
কালীগঞ্জের মেইন বাসস্ট্যান্ড, বালিয়াডাঙ্গা বাজার এবং ঝিনাইদহ সদর উপজেরা গান্নার ফুল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর থেকে শত শত কৃষক তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত ফুল ভ্যান, স্কুটার ও ইঞ্জিনচালিত বিভিন্ন পরিবহণযোগে নিয়ে আসছেন। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড ভরে যায় লাল, সাদা আর হলুদ ফুলে ফুলে।
কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা বাজার ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান জানান, বর্তমানে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সারা বছরই তারা ফুল কেনাবেচা করেন। তবে প্রতিবছর বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষের দিন, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ভালোবাসা দিবস ও বসন্তবরণের দিন ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এ সময় দামও ভালো পাওয়া যায়।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজগর আলী জানান, ঝিনাইদহ মাটি ও আবহাওয়া ফুলচাষের জন্য উপযোগী। এ বছর জেলায় ২৬৮ হেক্টর জমিতে গস্নাডিয়াস, রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ, গাঁদাসহ নানা জাতের ফুল চাষ হয়েছে। ফুলচাষ এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়য়ে বিরাট ভূমিকা রাখছে।
ফুল পরিবহণ ও সংরক্ষণ প্রশ্নে তিনি জানান, পদ্মা সেতু হওয়া খুব সহজে ফুল ও কৃষি পণ্যবাহী গাড়ি ঢাকা চট্টগ্রাম পৌঁছে যাচ্ছে। অন্যদিকে ফেরিঘাটে ফুলবাহী গাড়ি আগে পারাপারের বিষয়ে জেলার প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ ছাড়া ফুল সংরক্ষণের জন্য বালিয়াডাঙ্গা বাজারে ফুল অ্যাসেম্বলি সেডের সঙ্গে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক রুম করা হয়েছে। যেখানে ফুল ও ফলের বীজ সংরক্ষণ করা যাবে।