লন্ডনের নিদের্শনার অপেক্ষায় বিএনপি

দল পুনগর্ঠনসহ নেতাকমীের্দর চাহিদার আলোকে পরবতীর্ করণীয় ঠিক করতে লন্ডনে দলের শীষর্ নেতা তারেক রহমানের কাছে বাতার্ দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে সুনিদির্ষ্ট নিদের্শনা বা পরামশর্ আসার আগ পযর্ন্ত নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত রয়েছেন দলের নীতিনিধার্রকরা।

প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
একাদশ সংসদ নিবার্চনের পর বিপযর্স্ত তৃণমূল নেতাকমীের্দর চাঙ্গা করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে তৃণমূলের চাহিদা অনুযায়ী দলকে ঢেলে সাজাতে নানা পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তৃণমূল নেতাদের সরাসরি ভোটে নেতা নিবার্চনের বিষয়টিকেও রাখা হয়েছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে পুরোদলকে ঢেলে সাজানোর দাবি উঠলেও তা নিয়ে বিভক্তিও আছে। দল পুনগর্ঠনসহ নেতাকমীের্দর চাহিদার আলোকে পরবতীর্ করণীয় ঠিক করতে লন্ডনে দলের শীষর্ নেতা তারেক রহমানের কাছে বাতার্ দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে সুনিদির্ষ্ট নিদের্শনা বা পরামশর্ আসার আগ পযর্ন্ত নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত রয়েছেন দলের নীতিনিধার্রকরা। অন্তত আগামী ছয় মাস তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক নিদের্শনা পযের্বক্ষণ করার কথা ভাবছেন তারা। বিএনপির নীতি নিধার্রণী ফোরামের এক নেতা জানান, সবের্শষ নিবার্চনের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে এ দেশে নিবার্চনের মাধ্যমে সরকার পরিবতর্ন হবে না। সরকার পরিবতের্নর জন্য প্রয়োজন গণআন্দোলন। সেই আন্দোলনে নেতৃত্বের জন্য দলকে শক্তিশালী করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন পুনগর্ঠন। শুধু নামে পুনগর্ঠন করলেই হবে না। তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে কাযর্করভাবেই পুনগর্ঠন করতে হবে। এ জন্য তৃণমূলের চাহিদা অনুযায়ী দলকে এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৯ মাচর্ তিন বছর মেয়াদি জাতীয় কাউন্সিল করেছিল বিএনপি। কিন্তু মেয়াদের প্রায় শেষ পযাের্য়ও কেন্দ্রীয় কমিটি পূণার্ঙ্গ করতে পারেনি দলটি। বিষয়ভিত্তিক কমিটি গঠনের কোনো কাজই হয়নি। এক নেতার এক পদ করার বিধি সবের্ক্ষত্রে কাযর্কর হয়নি। ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির ২টি পদ ঘোষণার সময়ই ফঁাকা ছিল। বাকি ১৭ সদস্যের মধ্যে ৩ সদস্য মারা গেছেন। বতর্মানে ৫টি পদ ফঁাকা। এছাড়া অসুস্থতা, বিদেশে থাকা ও কারাগারে থাকার কারনে কমপক্ষে ৪ নেতা বলতে গেলে অনুপস্থিত। উপদেষ্টা পরিষদেরও কয়েকজন সদস্য মারা গেছেন। বয়সের কারনে অনেকে নিস্ত্রিয়। বয়স, সাজা, দলত্যাগসহ বিভিন্ন কারণে অনেক ভাইস চেয়ারম্যানও নিস্ক্রিয়। যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে বেশির ভাগ নেতার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা এবং অনেকেই কারাগারে থাকার কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারছেন না। মৃত্যু, বয়স-মামলাসহ নানা কারণে সম্পাদক মÐলী ও নিবার্হী কমিটির অনেক সদস্যও সংগঠনের তেমন কোনো কাজে আসছে না। এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির মতোই বেহাল দশা ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর। ১ মাসের সময় দিয়ে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহিলা দলের আংশিক কমিটি দেয়া হলেও বছর পর বছরে তা পূণার্ঙ্গ হয়নি। সব পযাের্য় বেহাল দশার কারণে দলকে ঢেলে সাজানোর কোনো বিকল্প নেই বিএনপির। তাই দুই মাসের মাধ্যে জাতীয় কাউন্সিল করার দাবি উঠেছে। তবে এবার পকেট কমিটি নয় তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে ভোটাভুটির মাধ্যেমে সব কমিটি পুনগর্ঠনের চিন্তা রয়েছে বিএনপির শীষর্ নেতাদের। দলের দুই সিনিয়র নীতিনিধার্রক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ দল পুনগর্ঠনের বিষয়ে প্রকাশ্যেই গুরুত্বারোপ করেছেন। এছাড়া দলের বিভিন্ন পযার্য় থেকে দ্রæত সময়ের মধ্যে জাতীয় কাউন্সিল করার দাবি উঠেছে। তবে এখনই কাউন্সিল করার বিষয়ে দলের বিভিক্তি দেয়া দিয়েছে। সূত্রমতে, কাউন্সিল করার বিষয়ে স্থায়ী কমিটিতে স্থায়ী কমিটিতেই দুটি অংশ পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আর সম্পাদক মÐলীর একটি প্রভাবশালী অংশও এখনই কাউন্সিল করার পক্ষে নেই। তবে বতর্মান কমিটিতে সংযোজন বিয়োজন করে কিছু পদে পরিবতর্ন এনে দলকে সংস্কার করার পক্ষে অধিকাংশ নেতাকমীর্। সেঅনুযায়ীই দল পুনগর্ঠনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। জানা গেছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী তৃণমূলের নেতাকমীের্দর চাহিদা কি তা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। তৃণমূলের চাহিদা অনুসন্ধানে প্রথম বিষয়টি বের হয়ে এসেছে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি। সবার আগে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার বিষয়ে কোন নেতাকমীর্র দ্বিমত নেই। এ জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন বেগবান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ৮ ফেব্রæয়ারি খালেদা জিয়ার কারাবন্দির এক বছর পূতির্ হতে যাচ্ছে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আইনি লড়াইসহ মুক্তি আন্দোলন বেগবান করা হবে। এর বাইরে তৃণমূলের নেতাকমীের্দর অন্যান্য চাওয়ার মধ্যে রয়েছে জাতীয় সংসদের পুননির্বার্চনের দাবিতে কমর্সূচি প্রণয়ন, ভবিষ্যতে ভোটাভুটির মাধ্যমে সব অঙ্গ ও সহযোগী সাংগঠনের কমিটি গঠন, স্থানীয় সরকারসহ প্রতিটি নিবার্চনে বিএনপির অংশ না নেয়া না নেয়ার বিষয়ে আগে থেকেই সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়া। বিএনপি সূত্রমতে, তৃণমূলের চাহিদা অনুযায়ী দল পুনগর্ঠনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ জন্য আগামী দুই মাসের মধ্যে একটি জাতীয় কাউন্সিল করার কথা ভাবা হলেও তা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। এব্যাপারে তারেক রহমানের সিদ্ধান্তেই চূড়ান্ত হবে। এছাড়া অঙ্গসংগঠনের সব পযাের্য়র মেয়াদোত্তীণর্ কমিটি ভেঙ্গে নতুন করে গঠনেরও সিদ্ধান্ত আছে। এবার আর বিগত সময়ের মতো পকেট কমিটি নয় তৃণমূলের চাহিদা অনুযায়ী ভোটাভুটির মাধ্যমে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীষর্ নেতৃত্ব নিবার্চন করার পরিকল্পনা রয়েছে। চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নতুন কমিটি ভোটাভুটির মাধ্যমে করার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরবতীের্ত সব কমিটি একই প্রক্রিয়ায় করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া তৃণমূলের নেতাদের নেতৃত্বে আনতে বিষয়ভিত্তিক কমিটি গঠনেরও পরিকল্পনা করা হয়েছে। এদিকে আসন্ন স্থানীয় সরকার নিবার্চনে অংশ নেয়া না নেয়ার বিষয়েও তৃণমূলের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হবে। উপজেলা নিবার্চনের অংশ না নেয়ার কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে তৃণমূলের কেউ যদি নিবার্চন করতে চায় সে ক্ষেত্রে তাকে বাধা দেয়া হবে না। তবে তাকে দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র হিসেবে নিবার্চন করতে হবে। পরে ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে দলে ফিরিয়েও নেয়া হবে। বিভিন্ন পযাের্য়র তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, অবেশেষে তৃণমূলের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে দল পুনগর্ঠনের ভাবনাকে তারা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। সবার আগে তারা চায় খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন বেগবান করতে। তাদের মতে, বিপযর্য় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হলে দ্রæত দল পুনগর্ঠন করতে হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির ফাঁকা পদ পূরণের পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনগুলোর মেয়াদোত্তীণর্ কমিটি পুনগর্ঠনের উদ্যোগ নিতে হবে। সুবিধাবাদীদের বাদ দিয়ে যোগ্য ও ত্যাগীদের নেতৃত্বে আনার দাবি করেছেন তারা। সূত্রমতে, তৃণমূলের মতামত অনুযায়ী নিবার্চনের পর স্থায়ী কমিটির দুই বৈঠকে দল পুনগর্ঠনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সবের্শষ গত মঙ্গলবারের দুই ঘণ্টার বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সে তারেক রহমানও উপস্থিত ছিলেন। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কাউন্সিল নিয়ে কথা উঠলেও কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেন, এখন কাউন্সিলের সময় নয়। গ্রেফতার নেতাকমীের্দর কারাগার থেকে বের করা ও কমীের্দর পাশে গিয়ে নেতাদের দাঁড়ানোই এখন আসল কাজ। মানুষ নিবার্চনের বিষয়ে অবগত, সে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে মানুষকে সব সময় সচেতন রাখতে হবে। তৃণমূলসহ সবর্স্তরের নেতাকমীের্দর চাহিদার বিষয়গুলো তারেক রহমানকে জানানো হযেছে। পরবতীর্ করণীয় নিধার্রনে তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন নীতিনিধার্রকরা। সেখানথেকে সুনিদির্ষ্ট নিদের্শনা বা পরামশর্ আসার আগ পযর্ন্ত সতুন সিদ্ধান্তে যেতে চায়না তারা। অন্তত আগামী ছয় মাস তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক নিদের্শনা পযের্বক্ষণ করার কথা ভাবছেন তারা। আগামী কয়েক মাস খুব নিবিড়ভাবে তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত ও আচরণে খেয়াল রাখবেন তারা। এরপরই নিজেদের ভাবনা ও মত তুলে ধরবেন তার কাছে। এর আগে তারেক রহমান কী চাইছেন, তাই মুখ্য তাদের কাছে। দল পুনগর্ঠনের বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যেসব কমিটি মেয়াদোত্তীণর্ আছে সেগুলো পুনগর্ঠনে দ্রæতই উদ্যোগ নেয়া হবে। আর যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতা নিবার্চনের প্রক্রিয়া এরই মধ্যে ড্যাব দিয়ে শুরু হয়েছে। পরবতীের্তও বিভিন্ন পযাের্য় এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে।