সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা বিচারের অপেক্ষায় দেড় যুগ

২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি দল হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্যরা। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন এবং পরে একজন হাসপাতালে মারা যান

প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
পল্টনে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার চিত্র Ñফাইল ছবি
ঢাকার পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পাটির্র (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলা চালিয়ে পঁাচজনকে হত্যার বিচার দেড় যুগেও শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলটির নেতারা। সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ বা বিএনপি- কোনো দলই চায় না যে, বামপন্থিদের ওপর ওই হামলার সুবিচার হোক।’ ওই বোমা হামলার ১৮ বছর পূতির্র দিন রোববার এ কথা বলেন সেলিম। ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি দল হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্যরা। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন এবং পরে একজন হাসপাতালে মারা যান। নিহতরা হলেন খুলনার বটিয়াঘাটার হিমাংশু মÐল, রূপসা উপজেলার আবদুল মজিদ, ঢাকার ডেমরার আবুল হাসেম, মাদারীপুরের মুক্তার হোসেন এবং খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিপ্রদাস। সে সময় সিপিবির সভাপতি ছিলেন মনজুরুল আহসান খান। তিনিই মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন। দুই বছর পর ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে আদালতে চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন দেন মামলার তদন্ত কমর্কতার্ সৈয়দ মোমিন হোসেন। তিনি আদালতকে বলেন, তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে নিভর্রযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার সঙ্গে যোগসূত্র পেয়ে ২০০৫ সালে আবার মামলাটির তদন্ত শুরু হয়। সাত তদন্ত কমর্কতার্র হাত ঘুরে ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদশর্ক মৃণাল কান্তি সাহা ১৩ আসামির বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন। ২০১৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচারের পযাের্য় আসা মামলা দুটি বতর্মানে ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পযাের্য় রয়েছে। দুই মামলার ১০৭ জন সাক্ষীর মধ্যে হত্যা মামলায় ২৮ জন এবং বিস্ফোরক মামলায় ৩২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের মধ্যে সিপিবি নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মনজুরুল আহসান খান, রুহিন হোসেন প্রিন্স ও আসলাম উদ্দিনও রয়েছেন। অভিযোগ গঠনের পর ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার না এগোনোর কারণ জানতে চাইলে মহানগর দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কেঁৗসলি আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে আসছে না। দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে আসামিদেরও আনা হয় না।’ তিনি বলেন, ‘এর দায় তো পুলিশের। আমরা তো গিয়ে সাক্ষীদের হাতে ধরে আদালতে নিয়ে আসি না। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি দেখব। তদন্ত কমর্কতাের্দর আদালতে আনা হবে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য।’ তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর ওই বক্তব্যে সন্তুষ্ট নন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেন, ‘আমরা সাক্ষ্য দিতে আদালতে যাচ্ছি না; এটা ভুয়া কথা। এই মামলায় আমাদের নেতা মনজুরুল আহসান খান, আমিসহ পাটির্র সবাই সাক্ষ্য দিয়েছি। আসলে রাষ্ট্রপক্ষের ওই দলগুলো নিজেদের স্বাথের্ই এই মামলার বিচার চায় না।’ এই বাম নেতা বলেন, ক্ষমতাসীনরা কেবল সেসব মামলার বিচার চায়, যেগুলো ‘ক্ষমতার প্রয়োজনে’ দরকার হয়। বিএনপির সময় এই মামলার আসামিদের অব্যাহতি দিয়ে মামলার কাযর্ক্রম যে স্থগিত করা হয়েছিল, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সিপিবি সভাপতি বলেন, ‘পরে আন্দোলনের মুখে মামলার তদন্ত শুরু করতে বাধ্য হয়েছিল।’ মামলার নথি থেকে জানা যায়, সবের্শষ গত ৭ জানুয়ারি এই মামলার শুনানির নিধাির্রত তারিখে কোনো সাক্ষী আদালতে যাননি। কারাগারে থাকা আসামিদের কাউকে পুলিশ আদালতে হাজির করেনি। এ কারণে মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েস এই মামলার শুনানির জন্য ১৪ ফেব্রæয়ারি নতুন তারিখ ঠিক করে দেন। সেই সঙ্গে আসামিদের আদালতে হাজির করতে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট এবং সাক্ষীদের জন্য সমন ও জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সবের্শষ ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স এই মামলায় সাক্ষ্য দেন। প্রায় দুই বছর পর ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষ তিনজনের হাজিরা আদালতে দাখিল করলেও সেদিন আসামিদের আদালতে না আনায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে এই মামলার শুনানিতে কিছুটা গতি থাকলেও গত আড়াই বছরে বিচার আর এগোয়নি। দুই মামলায় অভিযুক্ত ১৩ আসামির মধ্যে হরকাতুল জিহাদের শীষর্ নেতা আবদুল হান্নান ওরফে মুফতি হান্নানকে ২০১৭ সালে অন্য একটি মামলায় ফঁাসিতে ঝোলানো হয়। বাকি আসামিদের মধ্যে মাইনুদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, মওলানা সাব্বির, শওকত ওসমান ও মশিউর রহমান কারাগারে রয়েছেন। তাদের মধ্যে মাইনুদ্দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া আবদুল হাই, শফিকুর রহমান, নূর ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, মুহিবুল্লাহ মুত্তাকীন, আনিসুল ইসলাম মোরসালীন ও রফিকুল ইসলাম মিরাজ পলাতক রয়েছেন।