১১ হাসপাতালে দুদকের অভিযান

৪০% চিকিৎসক কমর্স্থলে অনুপস্থিত

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
রাজধানীসহ দেশের আটটি জেলার ১১টি সরকারি হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে দুনীির্ত দমন কমিশন (দুদক)
রাজধানীসহ দেশের আটটি জেলার ১১টি সরকারি হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে দুনীির্ত দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার সকাল থেকে সংস্থাটি একযোগে অভিযান চালায়। দুদক জানিয়েছে, এ সময় হাসপাতালগুলোতে ৪০ শতাংশ চিকিৎসকই কমর্স্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। উপজেলা পযাের্য় অনুপস্থিতির হার আরও বেশি, প্রায় ৬২ শতাংশ। বেলা দুইটা পযর্ন্ত অভিযান চালিয়ে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কাযার্লয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন দুদকের এনফোসের্মন্ট দলের সমন্বয়ক ও প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী। মুনীর চৌধুরী বলেন, ঢাকাসহ ৮ জেলার ১১টি সরকারি হাসপাতালে অভিযান পরিচালনার সময় চিকিৎসকদের কাজের সময়ের রোস্টার পযাের্লাচনা করে দেখা যায়, ২৩০ জন চিকিৎসকের মধ্যে ৯২ জনই অনুপস্থিত, যা মোট চিকিৎসকের ৪০ শতাংশ। ঢাকার বাইরের সাত জেলার যে হাসপাতালগুলোতে অভিযান চালানো হয়, সেখানকার অবস্থা আরও খারাপ। দেখা গেছে, ১৩১ জন চিকিৎসকের মধ্যে ৮১ জনই অনুপস্থিত ছিলেন, যা মোট চিকিৎসকের প্রায় ৬২ শতাংশ। দুদক জানিয়েছে, যেসব হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়েছে সেগুলো হলো ঢাকার ফুলবাড়িয়ার কমর্চারী কল্যাণ হাসপাতাল, নাজিরা বাজারের মা ও শিশু সদন, রংপুরের পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দিনাজপুর সদর হাসপাতাল, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাবনা সদর হাসপাতাল ও আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এ ছাড়া ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগেও অভিযান পরিচালনা করা হয়। দুদক সূত্র জানায়, সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকের অনুপস্থিতির কারণে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা হয়রানির শিকার ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, দুদকের অভিযোগ কেন্দ্রে (১০৬) আসা এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনার সময় সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে কথা বলা ছাড়াও দুদকের কমর্কতার্রা রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। তঁারা অভিযোগ করেন, উপজেলা বা জেলা পযাের্য় পযার্প্ত চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হলেও তারা অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা না দিয়ে বাইরে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে সময় দিচ্ছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীষর্ কমর্কতার্রা মাসের বেশির ভাগ সময়ই অনুপস্থিত থাকেন। এ সুযোগে কনসালটেন্ট ও মেডিকেল অফিসাররাও কমর্স্থলে ঠিকমতো হাজির থাকেন না। অনেকে সপ্তাহে দুই-এক দিন এসে হাজিরা খাতায় সই করে পুরো মাস অনুপস্থিত থাকেন এবং পুরো মাসের বেতন তোলেন। এসব অভিযোগের পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে সব অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার হুশিয়ারি দিয়ে দুদকের মহাপরিচালক বলেন, সোমবারের অভিযানে যাদের হাসপাতালে পাওয়া যায়নি, তাদের চিঠি দেবে দুদক। আপাতত কাউকে গ্রেপ্তার করা না হলেও পরে একই অবস্থা পাওয়া গেলে গ্রেপ্তার করা হবে। এ ক্ষেত্রে চাকরিও চলে যেতে পারে। দুদক বলছে, স্বাস্থ্য খাত তাদের নজরদারিতে থাকবে। দায়িত্বে অবহেলায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ময়মনসিংহের সিভিল সাজর্ন এ কে এম আবদুর রব দুদকের অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বেশির ভাগ চিকিৎসকই দায়িত্ব পালনে সচেতন। কিন্তু দুই-একজনের জন্য পুরো চিকিৎসক সমাজের ওপর অভিযোগ চলে আসে। যেসব চিকিৎসক অনুপস্থিত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাবনার দুটি হাসপাতালে অভিযান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাবনার সিভিল সাজর্ন মো. তাহাজ্জেল হোসেন বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। তবে দুদক যদি কোনো সুপারিশ করে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুদক জানিয়েছে, রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে অভিযান চলাকালে জরুরি বিভাগের এক কমর্চারী (স্ট্রেচার বিয়ারার) দায়িত্বরত অবস্থায় রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন। দুদকের সুপারিশক্রমে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করা হয়। মুগদা ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক আমিন আহমেদ খানের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ঘুষ নেয়ার মাধ্যমে সরকারি কমর্চারী শৃঙ্খলা আপিল বিধি ২০১৮ মোতাবেক তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।