চট্টগ্রামে দোকানে বিনামূল্যের বই, পেছনে ‘শিক্ষক-কমর্চারী’

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বিনামূল্যে বিতরণের বই চট্টগ্রামের বিভিন্ন বইয়ের দোকানে বিক্রি হচ্ছে। নগরীর একটি দোকান থেকে বেশকিছু বই উদ্ধারের পর পুলিশ বলছে, একশ্রেণির অসাধু শিক্ষক-কমর্চারীর মাধ্যমে এসব বই চলে আসছে খোলা বাজারে। বই দোকানিরাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। গোয়েন্দা পুলিশের পরিদশর্ক ইলিয়াছ খান জানান, রোববার রাতে আন্দরকিল্লা এলাকায় ‘প্রকাশ বিচিত্রা’ নামের একটি বইয়ের দোকানে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন শ্রেণির ২৮৩টি বই উদ্ধার এবং দোকান মালিকের ভাই স্নেহাশীষ তালুকদার ওরফে জুয়েলকে (২৮) আটক করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, বই ব্যবসায়ীরা কিছু শিক্ষক-কমর্চারীর কাছ থেকে এসব বই সংগ্রহ করে বেশি দামে বিক্রির জন্য। আমাদের ধারণা, কিছু অসাধু শিক্ষক-কমর্চারী স্কুলের শিক্ষাথীর্র সংখ্যা বেশি দেখিয়ে বইগুলো সংগ্রহ করার পর খোলা বাজারে বিক্রি করে দেয়।’ বইগুলো কিভাবে কাদের কাছ থেকে আনা হয়, সে ব্যাপারে গ্রেপ্তার জুয়েলকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ কমর্কতার্ কামরুজ্জামান। বরাবরের মতো এবারও ইংরেজি বছরের প্রথম দিন সারাদেশে একযোগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষাথীের্দর হাতে তুলে দেয়া হয় বিনামূল্যের নতুন বই। গত ২৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাথীের্দর বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কাযর্ক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ১ জানুয়ারি ঢাকার আজিমপুর গালর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে বই বিতরণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছিলেন, এ বছর চার কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার ৮৬৫ শিক্ষাথীর্র হাতে ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২টি বই তুলে দেয়া হবে। শিক্ষাথীের্দর হাতে বই পেঁৗছতে না পেঁৗছতেই বিনামূল্যের বই চলে এসেছে খোলা বাজারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দরকিল্লা এলাকার কয়েকজন বই দোকানি বলেছেন, বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-কমর্চারীদের কাছ থেকে তারা বইগুলো সংগ্রহ করেন। কম দামে তারা বইগুলো সংগ্রহ করে বেশি দামে শিক্ষাথীের্দর কাছে বিক্রি করেন। তবে পরিচিত ব্যক্তি ছাড়া তারা কারও কাছে এসব বই বিক্রি করেন না বলেও জানিয়েছেন। বিনামূল্যের প্রতিটি বই ২০-৫০ টাকায় বিক্রি করা হয় বলে ব্যবসায়ীদের ভাষ্য। রোববার উদ্ধার করা বইগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রথম শ্রেণির ৩০টি বাংলা বই, ১৭টি গণিত, ১৮টি ইংরেজি, দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩টি বাংলা, পঁাচটি অংক, ১৩টি ইংরেজি, চতুথর্ শ্রেণির ১৮টি বাংলা, ১৪টি অংক, ১৫টি ইংরেজি, সাতটি বিজ্ঞান, চারটি বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি এবং পঞ্চম শ্রেণির ১২টি বাংলা বই। আরও রয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণির তিনটি বিজ্ঞান, চারটি বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি, নবম-দশম শ্রেণির ১৬টি বিজ্ঞান, ছয়টি করে উচ্চতর গণিত, ভ‚গোল ও পরিবেশ এবং তিনটি করে রসায়ন বই। এ ছাড়াও দোকানটি থেকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোডের্র ইবতেদায়ি প্রথম শ্রেণির ৯টি করে অংক ও বাংলা, দ্বিতীয় শ্রেণির ছয়টি করে বাংলা, ইংরেজি, অংক ও পঞ্চম শ্রেণির ১২টি করে ইংরেজি ও বিজ্ঞান বইসহ বই উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশ কমর্কতার্ ইলিয়াছ জানান, গ্রেপ্তার জুয়েলের বড় ভাই ও দোকান মালিক দেবাশীষ তালুকদার ওরফে আশিষ পালিয়ে গেছে। তাকে ধরা গেলে আরও তথ্য পাওয়া যেতে পারে। আমাদের কাছে তথ্য আছে চট্টগ্রাম ছাড়াও আশপাশের কিছু জেলা থেকে বই আসে খোলা বাজারে। আমরা এর কিছু প্রমাণও পেয়েছি। জুয়েলের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে বলে জানান ?পরিদশর্ক ইলিয়াছ। বাজারে বই পাওয়ার বিষয়ে বক্তব্য জানতে চট্টগ্রাম জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কমর্কতার্ জসীম উদ্দিন ও প্রাথমিক শিক্ষা কমর্কতার্ নাসরিন সুলতানার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।