সংসদ নিবার্চনের আদলে ডাকসুর আচরণবিধি

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
জাতীয় সংসদ নিবার্চনে ‘রাজনৈতিক দল ও প্রাথীর্র আচরণ বিধিমালা ২০০৮’-এর আদলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নিবার্চনের আচরণবিধি হচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রণয়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ। ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোকে আচরণবিধির ওই খসড়া দিয়ে এ ব্যাপারে শনিবারের মধ্যে তাদের মতামত জানতে চেয়েছে প্রশাসন। চলতি মাসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট খসড়াটি চূড়ান্ত করবে। ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীষর্ নেতাদের ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ডাকসু ও হল সংসদ নিবার্চন উপলক্ষে আচরণবিধির খসড়াপত্রের সঙ্গে প্রেরণ করা হলো। খসড়াটি সম্পকের্ কোনো মতামত বা সুপারিশ থাকলে তা আগামী ২৬ জানুয়ারি শনিবারের মধ্যে প্রক্টর কাযার্লয়ে জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’ খসড়া আচরণবিধিটি পযাের্লাচনা করে দেখা গেছে, জাতীয় সংসদ নিবার্চনে রাজনৈতিক দল ও প্রাথীের্দর মেনে চলার জন্য ২০০৮ সালে নিবার্চন কমিশনের যে আচরণবিধি রয়েছে, ডাকসু নিবার্চনে প্রাথীর্ ও সমথর্কদের জন্য তৈরি, এ খসড়ার সব ধারা প্রায় হুবহু মিলে যায়। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ধারাগুলোতে দু’এক জায়গায় ভাষাগত পাথর্ক্য ও সংশোধনী রয়েছে। গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের বৈঠক শেষে উপাচাযর্ ও ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেছিলেন, ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনী ও নিবার্চনী আচরণবিধির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। আগামী রোববার বা সোমবার সিন্ডিকেটের সভা বসার কথা রয়েছে।? ডাকসু ও হল সংসদ নিবার্চনের আচরণবিধি প্রণয়নে গত শনিবার ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচাযর্ ও ডাকসুর সভাপতি মো. আখতারুজ্জামান। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচাযর্ (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদকে আহŸায়ক করে এই কমিটি গঠিত হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেনÑ বিশ্ববিদ্যালয়ের আথর্ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের ডিন ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, অথর্নীতি বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল মোকাদ্দেম (এম এম আকাশ), টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভঁূইয়া। ? খসড়া আচরণবিধিতে কী আছে? খসড়া আচরণবিধিটি ১৪টি ধারায় বিভক্ত। নিবার্চনী প্রচারের ধরন, নিবার্চনী প্রচার চালানোর জন্য প্রাথীর্-সমথর্কদের দৈনিক সময়সীমা, ভোটের দিন কী করা যাবে, কী করা যাবে না, ভোটকেন্দ্রে গণমাধ্যমকমীের্দর তৎপরতার সীমা, প্রতিপক্ষকে হেয় করা বা তাদের প্রচারে বাধাÑ এ সব বিষয়ে আচরণবিধির খসড়ায় সুস্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে।?কোনো প্রাথীর্ বা তার সমথর্কদের কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে, সে বিষয়টিও খসড়ায় রয়েছে।? আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের সময় কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। প্রাথীর্ পঁাচজনের বেশি সমথর্ক নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন না। কোনো প্রতিদ্ব›দ্বী প্রাথীর্ বা তার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা, প্রত্যাহার বা নিবার্চনী প্রচারণায় কোনো ধরনের যানবাহন, মোটরসাইকেল ও মোটরযান সহকারে শোভাযাত্রা, শোডাউন বা মিছিল করা যাবে না। প্রাথীর্-তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার দিন থেকে নিবার্চন দিনের ২৪ ঘণ্টা আগে পযর্ন্ত প্রচার চালানো যাবে। প্রচারের সময়সীমা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পযর্ন্ত। ডাকসু ও হল সংসদ নিবার্চনের ভোটার বা প্রাথীর্ ছাড়া অন্য কোনো খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কমর্কতার্-কমর্চারীরা কোনোভাবেই কোনো প্রাথীর্র পক্ষে বা বিপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচার চালাতে পারবেন না।? কোনো প্রাথীর্ বা তার পক্ষে কোনো সভা-সমাবেশ-শোভাযাত্রা করতে চাইলে দিন, সময় ও স্থান উল্লেখপূবর্ক সংশ্লিষ্ট রিটানির্ং কমর্কতার্র কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। এ ধরনের অনুমতি লিখিত আবেদন প্রাপ্তির সময়ের ক্রমানুসারে দেয়া হবে। সভা-সমাবেশ-শোভাযাত্রা করার অনুমতি অন্তত ৪৮ ঘণ্টা আগে নিতে হবে। এক প্রাথীর্ বা একটি প্যানেলের পক্ষে প্রতিটি হলে ১টি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩টি প্রজেকশন মিটিং করা যাবে। কোনো প্রাথীর্ বা তার পক্ষে কোনো ছাত্র সংগঠন হলের ভেতরে বা ক্যাম্পাসে প্রধান রিটানির্ং কমর্কতার্ বা রিটানির্ং কমর্কতার্র অনুমোদিত স্থান ছাড়া অন্য কোথাও কোনো সভা-সমাবেশ-শোভাযাত্রা করতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি করতে পারে এমন সড়কে জনসভা-পথসভা বা সমাবেশ এমনকি কোনো মঞ্চ তৈরি করা যাবে না। পাঠদান বা পরীক্ষা-কাযর্ক্রম ব্যাহত হতে পারে এমন কোনো স্থানে সভা-সমাবেশ বা নিবার্চনী প্রচারণা করা যাবে না। শ্রেণিকক্ষের ভেতর ও বারান্দায় মিছিল করা যাবে না। কোনো ধমীর্য় উপাসনালয়ে কোনো প্রকার নিবার্চনী প্রচার চালানো যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পযর্ন্ত এবং আবাসিক হলে কেবল মিলনায়তনে বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পযর্ন্ত মাইক ব্যবহার করা যাবে। প্রতিপক্ষের সভা-সমাবেশ-শোভাযাত্রা এবং অন্যান্য প্রচারাভিযান ব্যাহত বা পÐ হতে পারে বা গোলযোগ সৃষ্টি হতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না। নিবার্চনী প্রচারে কোনো প্রাথীর্ নিজের ছবি ছাড়া অন্য কারও ছবি বা প্রতীক, লিফলেট বা হ্যান্ডবিলে ব্যবহার করতে পারবেন না।